সবজি চাষে হালদা পাড়ের হাজারো কৃষকের মুখে আনন্দের হাসি

72

ফটিকছড়ি উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা নদীর বুকে পাঁচটি বড় বড় চর। নাজিরহাট, কুম্ভারপাড়া, ধুরুং, নাইচ্যারঘাট ও ব্রাহ্মণহাট। এসব চরে এখন কোটি টাকার সবজি চাষে ভরে গেছে। হালদাপারের হাজারো কৃষকের মুখে ফুটেছে আনন্দের হাসি। ১৯৯১ সালের আগে এসব চরগুলোতে জনবসতি ছিল। বিভিন্ন সময়ে বন্যায় হালদার ভাঙনে এসব বিলীন হয়। ভাঙাগড়ায় এসব এলাকায় ক্রমাগত চর জেগে উঠে। বসত-ভিটি হারিয়ে একসময় যারা নিঃস্ব হয়েছিলেন, দীর্ঘদিন পর জেগে ওঠা ওই চরগুলো তাদের এখন আশার সম্বল। গত দুই দশক ধরে এসব চরে সবজি আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অন্তত এক হাজার পরিবার। নাজিরহাট পৌরসভার দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ তাজুদ্দীন জানান, চরের প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ১০ টন সবজি উৎপাদিত হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য দুইলক্ষ টাকা। সে হিসেবে ১৫০ হেক্টর জমিতে দেড় হাজার টন সবজি উৎপাদিত হয়। যার বাজার মূল্য তিন কোটি টাকারও বেশি। তিনি আরো জানান, প্রতিবছর বন্যায় হালদার অনেক জমি ঢলে তলিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে এতে কিছু স্থানে প্রচুর পলি জমে। পলিযুক্ত দো-আঁশ মাটি সবজি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এতে কৃষক বেশ লাভবান হয়, ফলও ভাল জন্মে। ব্রাহ্মনহাট গ্রামের কৃষক বাদল চক্রবর্তী জানান, চরে সবজি চাষে খরচ খুবই কম। সারের তেমন প্রয়োজন হয় না। লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকেরা সবজি চাষে বেশি বিনিয়োগ করেন। সবজি হিসেবে ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, মুলা, বরবটি, বেগুন, শিম, টমেটো, পেঁয়াজ, মরিচ ও ধনেপাতার চাষ হয়। ধুরুং এলাকার কৃষক শহীদুল আলম জানান, প্রতি হেক্টরে ৩০ কেজি ইউরিয়া, ২০ কেজি ফসফেট এবং ৫ কেজি নাইট্রোজেন সার দিতে হয়। অনেকে জৈবসার মিশিয়ে জমিতে বীজ বপন করেন। নাইচ্যারঘাট চরের উপকারভোগী মুহাম্মদ কাজী নেজাম উদ্দিন জানান, ১ একর জমিতে ১৩০ মণ সবজি পেয়েছেন। যার বাজার মূল্য দেড় লক্ষ টাকা। জমিতে তেমন সার প্রয়োগ করতে হয়নি। আরো প্রচুর সবজি পাবেন বলে আশা তার। এখানকার সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন হাট-বাজারেও সরবরাহ করা হচ্ছে। নাজিরহাট বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. রমজান আলী জানান, প্রতি সপ্তাহে কুম্ভারপাড়া এলাকা থেকে তিনি প্রায় এক-দেড় লাখ টাকার সবজি কিনে বাজারে বিক্রি করেন। এতে আশার চেয়ে বেশ লাভও হয় তার। আশাবাদী ধুরুং গ্রামের মুহাম্মদ জাফর উদ্দিন জানান, হালদার চরে আমার এক একর জমি রয়েছে। এতে বেগুনের চাষ করেছি। প্রতি সপ্তাহে ৪-৫ মণ বেগুন পাই। এতে তার আয় হয় ৫-৬ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত লাখ টাকার বিক্রি করেছি। আরও আয় হবে। এলাকার মো. তারেকুল ইসলাম বলেন, এক সময় কাজ ছিল না। এখন কাজের অভাব নেই। বরং এলাকার অনেক বেকারেরা কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। পাশের গ্রামের অনেকে সবজিক্ষেতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লিটন দেব নাথ জানান, চরে ১৫০ হেক্টর সবজি চাষে বিপুল সবজি উৎপাদিত হয়েছে। কৃষকদের ভাগ্য বদলের জন্য কৃষি কার্যালয় থেকে প্রযুক্তিগত সকল প্রশিক্ষণ ও সহযোগীতা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া রোগ বালাই প্রতিরোধে এলাকার কৃষকরা অনেক সচেতন। লাভবানও হচ্ছেন তারা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুশফিকুর রহমান জানান, সরকার কৃষি বান্ধব। তাদের প্রয়োজনে কৃষিঋণের পাশাপাশি পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা প্রধানের ব্যবস্থা করা রয়েছে।