সবজির সরবরাহ প্রচুর দাম নাগালের বাইরে

8

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর বাজারগুলোতে শীতকালিন সবজির প্রচুর সরবরাহ থাকলেও মৌসুম অনুযায়ী দাম এখনো কমেনি। বিশেষ করে গত দুই সপ্তাহ ধরে একই অবস্থায় আছে বাজারের বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম। দাম না কমায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা।
অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম না কমায় এবং বাজারভেদে পণ্যের দামের পার্থক্য ব্যবসায়ীদের মনগড়া ইচ্ছায় বলে দাবি করেন ক্রেতারা। এতে প্রশাসনের বাজার তদারকি করা জরুরি বলে মনে করছেন তারা।
গতকাল শুক্রবার সকালে নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার ও কাজীর দেউড়ি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ পণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। কিছু সবজির দাম ওঠানামা করেছে।
নগরীর অন্যান্য বাজারের তুলনায় সবজি, মাছ ও মাংসের দাম কাজীর দেউড়ি বাজারে কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি করা হয়। এটা ক্রেতাদের নিয়মিত অভিযোগ। তবে বিক্রেতারা বলছেন, ভাল মানের পণ্য এ বাজারে রাখা হয় বলে ৫-১০ টাকা বাড়তি থাকে।
বাজার করতে আসা ক্রেতা রনি বলেন, আমি নিয়মিত কাজীর দেউড়ি বাজারে আসি। এই বাজারে অন্যান্য বাজারের চেয়ে সব জিনিসের দাম একটু বাড়তি। যে আলু অন্য বাজারে ২০ টাকা তা এখানে ৩০ টাকা। আরেক দোকানদার বেগুন বিক্রি করছে ৮০ টাকা কেজি ধরে। একেক দোকানদার তাদের ইচ্ছামতো বিক্রি করছে। এসব বিষয়ে প্রশাসনের তদারকি প্রয়োজন।
কাজীর দেউড়ি বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. দিদার বলেন, আমরা রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে কিনে বিক্রি করি। আমাদের সবজিতে কোনো ধরনের ফরমালিন ব্যবহার করা হয় না। তাছাড়া আমরা কেজিপ্রতি কয়েক টাকা লাভে বিক্রি করি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতিকেজি বেগুন ৪০ থেকে ৬০ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, শশা ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও ঝিঙ্গা ১০০, করলা ১০০ এবং পটল ৭০ টাকা, মূলা ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শীতকালীন সবজির মধ্যে প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শালগম ২৫ টাকা, পেঁপে ২৫ টাকা, আলু (নতুন) ২৫ থেকে ৩০ টাকা ও পুরাতন আলু ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বিদেশি সবজির মধ্যে ক্যাপসিকাম ১১০ টাকা, সবুজ কপি প্রতি পিস ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া কাঁচা মরিচ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।মাছ-মাংস ও ডিমের দামও বাড়তি
বাজারে সাগরের মাছের যোগান বাড়লেও দাম কমেনি। প্রতি কেজি রূপচাঁদা ৬৫০ থেকে এক হাজার টাকা, বড় সাইজের ইলিশ (এক কেজির উপরে) ১১শ’ থেকে ১৩শ’ টাকা, কোরাল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, সুরমা ৬৫০ টাকা, বড় পোয়া ৩৫০, ভোল পোয়া ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, রুই ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, টেংরা ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাবদা (প্রজেক্ট) ৪০০, কাপ্তাই লেকের পাবদা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, লইট্যা ১৫০ টাকা, চাষের কই মাছ ৪৫০, চাষের পাঙাস ১৮০ থেকে ২০০, শিং মাছ ৫০০ থেকে ৭০০, শোল ৬৫০ টাকা, চিংড়ি বড় আকারেরগুলো এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মাছের দামবৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাছ বিক্রেতা রুস্তম আলী বলেন, এই বাজারের মাছে রাসায়নিক কোনো পদার্থ ব্যবহার করা হয় না। পচা মাছও বিক্রি করা হয় না। যার কারণে দাম একটু বেশি।
এদিকে মাংসের বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০, লাল লেয়ার ২৫০ টাকা, দেশি মুরগি ৪৭০ টাকা, পাকিস্তানি সোনালি মুরগি ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেড় কেজি ওজনের দেশি হাঁস প্রতিটি ৮০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৮৫০ টাকা এবং হাড্ডিসহ মাংস ৬৫০ ও খাসির মাংস কেজি ৮০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে লাল ডিম ডজনপ্রতি ১১৫ টাকা ও হাঁসের ডিম ১৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাজীর দেউড়ির খাজা পোল্ট্রির দোকানদার আব্দুল হাকিম বলেন, এক মাসের ব্যবধানে মুরগির দাম কমেছে। গত মাসে সোনালি মুরগি ৩৭০ টাকার উপরে ছিল।

চালের দাম বেড়েছে
এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে। গতকাল খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মিনিকেট ৫৭ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকা, জিরাশাইল ৭৩ থেকে ৭৫ টাকা, নাজিরশাইল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, পাইজাম ৫০ টাকা, কাটারিভোগ ৮২ থেকে ৯০ টাকা, চিনিগুড়া ১১৮ থেকে ১২৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া শীতকালীন বিন্নি চালের চাহিদাও বৃদ্ধির কারণে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

অপরিবর্তিত অন্যান্য পণ্যের দাম
অন্যান্য পণ্যের দামে কোনো পরিবর্তন হয়নি। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি মসুর ডাল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা, ভারতীয় মসুর ডাল ১০০ থেকে ১০৫ টাকা, মটর ডাল ৬৫ টাকা, খেসারি ৭২ টাকা, মটর ৬৮ টাকা, ছোলা ৭৫ টাকা, পেঁয়াজ ৪২ থেকে ৪৫ টাকা, চায়না আদা ১৭০ টাকা ও বার্মার আদা ৮০ ও রসুন ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের জে.কে এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক মো. মামুন পূর্বদেশকে বলেন, মসলাসহ নিত্যপণ্যের বেশিরভাগই এখন অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে চালের সরবরাহ কিছুটা কম থাকায় কেজি প্রতি ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে সরবরাহ স্বাভাবিক হলে আবার কমে আসতে পারে।