সবজির মূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি

4

খাদ্যদ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সংকটে পড়েছে দেশের মানুষ। নিয়মিত আমিষ কিনে খাবার সামর্থ্য দেশের অধিকাংশ মানুষের নেই। আমিষ তো দূরের কথা বর্তমানে নিরামিষ খেতেও স্বল্প আয়ের দরিদ্র সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। তরিতরকারি, সবজির বাজারে জ¦লছে অহেতুক আগুন। দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদন হতে জানা যায়-বাজারে নানা প্রকার শীতের সবজির অভাব নেই। কিন্তু বিক্রেতারা নানা অজুহাতে সবজি বিক্রি করছে খুবই চড়া মূল্যে। ‘অজুহাত’ এ দেশের সবধরনের ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের একটি প্রধান অস্ত্র। গুদামজাতকারী, আড়ৎদার, অসাধু ব্যবসায়ীচক্র সমগ্রদেশের সবপ্রকারের দ্রব্যের মূল্য নিয়ে নানা অজুহাতে ক্রেতা সাধারণকে জিম্মি করে রেখেছে। সরকার, স্থানীয় প্রশাসন এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে দেশের খাদ্যদ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে। মাছ, মাংস, ডিম, মুরগি, পেঁয়াজ-রসুন, ভোজ্যতেল, তরিতরকারী সব নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের মূল্য দেশের সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। কোন অবস্থাতেই তা জনগণের ক্রয় ক্ষমতায় আসছে না। যে কারণে দেশের অধিকাংশ মানুষ পুষ্টিকর খাদ্য তথা সুষমখাদ্য গ্রহণের কল্পনাও করতে পারছে না।
দেশের মানুষ শরীরের চাহিদা অনুসারে আহার করতে পারছে না। যে কারণে দেশের গণস্বাস্থ্য স্বাভাবিক রাখতে পারছে না জনগণ। ‘সুস্বাস্থ্য সকল সুখের মূল’- এ প্রবাদ বর্তমানে দেশের অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে খাটে না। কেননা স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য পুষ্টিকর খাদ্য অপরিহার্য। কিন্তু দেশে দ্রব্যমূল্যের যে দশা তাতে পুষ্টিকর খাদ্য দূরে থাক-খেয়ে বেঁচে থাকার মতো খাদ্য জোগাড় করা অনেকের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার ভেতর খাদ্যদ্রব্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া গণস্বাস্থ্য স্বাভাবিক থাকবে না। ওষুধ কিংবা কৃত্রিম ভিটামিন খেয়ে মানুষের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা সম্ভব নয়। তাই খাদ্যের মাধ্যমে শরীরের পুষ্টি বিষয়ক সকল উপকরণ মানব শরীরে প্রবেশ করানো আবশ্যক। তা করার জন্য মাছের বাজার, মাংসের বাজার, শাকসবজি, তরিতরকারীর বাজারের দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি বিক্রেতাদের অজুহাত রোগের বিরুদ্ধে প্রতিষেধকের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একজন কৃষক বিভিন্ন সবজি ফলাতে গিয়ে কি পরিমাণ খরচ করতে বাধ্য হয় তা নির্ধারণ করে কৃষক যেন স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারে তা বিবেচনা করে প্রত্যেক সবজির মূল্য নির্ধারিত হওয়া বাঞ্ঝনীয়। তবে কৃষকদের মাধ্যমে কৃষিজাত পণ্য সরাসরি বাজারে পৌঁছার ব্যবস্থাও প্রয়োজন। কৃষিজাত দ্রব্যের উপর মধ্যস্বত্বভোগীদের কালোথাবা চিরতরে বন্ধ করা জরুরি। কৃষক মধ্যস্বত্বভোগী এবং গুদামজাতকারীদের খপ্পরে পড়ে ন্যায্যমূল্য পায় না। অথচ উৎপাদন খরচ যাই হোক জনগণকে চড়ামূল্যে খাদ্যদ্রব্য ক্রয়ে বাধ্য করছে অসাধু ব্যবসায়ী সমাজ। যার কারণে দেশের অধিকাংশ জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। জনগণের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে তারা দেশের সার্বিক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখতে পারবে। যেকোন উৎপাদন ও সমৃদ্ধির পূর্বশর্ত হলো সুস্থদেহি মানুষের শ্রম। শ্রমিক সুস্থ না থাকলে যেকোন উৎপাদন ব্যাহত হতে বাধ্য। বাস্তবতা হলো যে শ্রমিক পোশাক শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখছে তারা হাঁড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে পুষ্টিকর আহার জোগাড় করতে পারছে না। যারা কৃষি উৎপাদন করছে তারা স্বাভাবিক খাবার খেতে না পেরে হাঁড্ডিসার হয়ে পড়ছে। যে সকল স্বল্প আয়ের মানুষ এবং দিনমজুর স্বল্প বেতনে কাজ করে তাহা দেশের বাজার ব্যবস্থার জাঁতাকলে পড়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে পারছে না। উল্লেখ্য তিন শ্রেণির সংখ্যা দেশে বেশি। বর্তমান বাজার ব্যবস্থা লাগামহীন হওয়ায় সাধারণ মানুষ তাদের আয়ের সবটুকু ব্যয় করেও স্বাস্থ্য ভালো রাখার মতো খাবার খেতে পারছে না। ফলে তাদের শরীরে নানা রোগ তৈরি হচ্ছে। রোগ সৃষ্টি হবার পর চিকিৎসা করার মতো সামর্থ্য তাদের থাকে না দৈনন্দিন ব্যয়ভার অসম্ভব রকম বেড়ে যাবার কারণে। তাই অনেককে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করতে হয়। দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার স্বার্থে দেশের সবজি বাজার হতে সকল খাদ্যদ্রব্যের বাজার স্থিতিশীল করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সর্বস্তরের দেশবাসীর জোর দাবি।