সফলতা ও অর্জনের গল্প উচ্চারিত হোক

18

মুশফিক হোসাইন

সাম্প্রতিক সময়ের মহামারি, বন্যা, দ্রব্যমূল্যেও ঊর্ধ্বগতি এবং অর্থনৈতিক মন্দা ও বিশ^রাজনীতির টালমাতাল অবস্থার কারণে বাংলাদেশ ও সংকটের মধ্যে আছে। এসকল নানান অস্থিতিশীলতার কারণে কোন বিষয়ে লিখবো দ্বিধা-দ্ব›েদ্ব পড়ি।
প্রবীণ বয়সে এবং অবসর সময়ে এবাদত বন্দেগী ছাড়া সময় কাটানো দূরহ। ভাগ্যিস লেখালেখির একটা অভ্যাস বিশোর বয়স থেকে নেশার মতো আত্মস্থ করায় রক্ষে। সেহেতু প্রতিনিয়ত লেখালেখির একটি তাড়না মাথায় গিজগিজ করতে থাকে।
বিগত ২৫ জুন আমাদের জাতিসত্তার প্রতীক পদ্মাসেতু উদ্বোধন হল। পদ্মাসেতু উদ্বোধন আমাদের সক্ষমতার বিশ^াসের ভিতকে মজবুত করেছে। বিশ^দরবারে বাংলাদেশ আজ অন্যরকম উচ্চতায় আসীন। কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহল দুর্নীতির অভিযোগ তোলে বাংলাদেশকে দুর্নীতিবাজ রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে তৎপর ছিল। একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা ও একগুঁয়েমির কারণে তা প্রতিহত করা ছাড়া ও আমাদের সক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হল।
এটা আমাদের সার্বিক সফলতা ও অর্জন বলা যায়। দুভার্গ্যরে বিষয় স্বার্থান্বেষীরা এখন ও সক্রিয়। আর তা না হলে সেতুতে প্রকাশ্যে হিশি করা এবং নাটবল্টু খোলার মতো দুঃসাহস দেখাতে পারে। এরা নীতি নৈতিকতাহীন। আমি মনে করি এই নৈতিকতাহীন কর্মের দ্রæত আদালতে বিচার হওয়া উচিত। রায় ফলাও করে স্যোসাল গণমাধ্যমে প্রচার করা। যাতে করে আর কোন কুলাঙ্গার এই ধরনের জঘন্য কাজ করা থেকে বিরত থাকে।
গত কয়েক মাস বৃহত্তর সিলেট ও উত্তরবঙ্গে নজীরবিহীন ও ঘনঘন বন্যার কবলে পড়ছে। এতে করে বানভাসী মানুষের যেমন দুঃখকষ্ট বেড়েছে। তেমনি দেশের কৃষি ও পশুসম্পদের প্রভুত পরিমাণের ক্ষতি হয়েছে। সহায় সম্বলহীন মানুষের আশ্রয়কেন্দ্রে বাস করতে বাধ্য হয়। এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে সরকার এবং দেশ বিদেশের মানুষ বানভাসী মানুষের দুঃখকষ্ট লাঘবের জন্য দলমত নির্বিশেষে এগিয়ে এসেছেন। তারা প্রাণ উজার করে উদ্ধার তৎপরতা এবং পুনর্বাসনে ঝঁপিয়ে পড়েন। বাংলাদেশের সামাজিক সংস্কৃতিতে এ এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই মমত্ত¡ ও একাত্মবোধ বিশ^দরবারে উদাহরণ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। এ আমাদের ভাতৃত্বেও অর্জন ও সফলতা। এপ্রসঙ্গে বলা প্রয়োজন, বাংলাদেশ ভাটি অঞ্চলের দেশ। হাজার বছরের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, উজানে ভারী বৃষ্টিপাত হলে ভাটিতে পানি নেমে বন্যা হবে এটাই স্বতসিদ্ধ প্রবণতা। হাইড্রোগ্রাফিক মরফজিক্যাল অনুসারে আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের নদ-নদীর পুনরুদ্ধারের জন্য শত বছরের ‘ডেল্টা প্ল্যান’ বা (ব-দ্বীপ পরিকল্পনা) বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। এই ব-দ্বীপ অঞ্চলের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম ছিল নৌ-পথ। স্বার্থান্বেষী মহল জবর দখল এবং ভোগবিলাসী মানুষের নদ-নদী খালবিলসহ জলাশয় হত্যা করায় সেই নৌ-পথ ও জলাশয় আজ বিলুপ্ত। ফলে বন্যার প্রকোপ বাড়ছে। অতএব প্রধানমন্ত্রীর সময়োচিত ‘ডেল্টা প্ল্যান’ বাস্তবায়ন জরুরি।
সর্বশেষ কোরবানির পশু নিয়ে বলা যাক। ভারতে ধর্মান্ধ বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের মুসলমানেরা যাতে গো-মাংস খেতে না পারে। সেজন্য ভারত গরু রপ্তানি হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়। সেসময় দৈনিক পূর্বদেশে ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’ কিরোনামে একটি কলাম লিখেছি। বর্ণিত লেখায় আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম, বাংলাদেশের উদ্যামী খামারীরা অতি দ্রæত পশুসম্পদে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন। আশ্চার্য্যরে বিষয় এ বছর ভারত ও বার্মা থেকে একটি পশুও আমদানী হয়নি। বাংলাদেশ পশু সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে চলতি বছর কোরবানির হাটে প্রায় এক কোটি ২২ লাল গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ বিক্রির জন্য বাজারে উঠেছিল। তার মধ্যে প্রায় এককোটি পশু বিক্রি হয় এবং ২২ লাখ পশু উদ্বৃত্ত থাকে। এটি আমাদের জাতীয় সফলতা। আমরা বাঙালি স্বতস্ফূর্তভাবে পশু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করি। এতে করে আমাদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়। এজন্য সরকার ও খামারীদের প্রশংসা ও সাধুবাদ জানাতে হয়। এটি আমাদের জাতীয় সফলতা এবং প্রতিবেশি বন্ধুর বৈরি আচরণের উচিত শিক্ষা ও জবাব।
আরো সু-সংবাদ আছে। এবার সর্বপ্রথম ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত সময়ের পূর্বে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের নজীর সৃষ্টি করেন। বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় যে, ১০ লক্ষ মেট্রিকটন বর্জ্য অপসারণ করা হয়। এতে এটাই প্রমাণিত যে, সদইচ্ছে ও সততা সকল অসম্ভবকে নজীর বিহীন সম্ভবে পরিণত করে এই সফলতার জন্য দুই মেয়রকে সাধুবাদ। এ প্রসঙ্গে একটি প্রাসঙ্গিক কথা বলতে চাই, তা হল এই বর্জ্য অপচয় না কওে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সংরক্ষণ কওে প্রক্রিয়াজাত করা যেত, তাহলে দেশে বায়োগ্যাস বিদ্যুৎ ও জৈব সার উৎপাদনের রেকর্ড স্থাপিত হয়। তাই আমাদের উচিত হবে নগরে নগরে সরকারিভাবে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় নিয়ে আসা। এতে করে অর্থনৈতিক লাভের পাশাপাশি পরিবেশ ও প্রকৃতি যেমন রক্ষা পাবে তেমনি বাস্তুতন্ত্র ও বিকশিত হবে। সরকার ও সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে ভাবার অনুরোধ রইল।
পরিশেষে হুজুকে জাতির সামনে হতাশা ও ব্যর্থতার কথা তুলে না ধরে আমাদের অর্জন ও সফলতাগুলো তুলে ধরুন। সামাজিক ও গণমাধ্যমে তা প্রকাশ করুন। এতে সরকার ও তরুণ উদ্যোক্তারা অনুপ্রাণিত হতে পারে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এ থেকে শিক্ষা নিয়ে জাতিকে বিশ^ দরবারে উচ্চতার আসনে প্রতিষ্ঠিত করুন এই কামনা।

লেখক : কবি, নিসর্গী ও ব্যাংক নির্বাহী (অব)