সন্ধ্যাতারা

25

 

কনকনে প্রচন্ড শীতের মধ্যে মাথায় মাফলার জড়িয়ে বিড়ি ফুঁকছে। মলিন কাপড়ের ফাঁকে শীতের আসা যাওয়া। ঘুম কাতুরে সূর্যটা কেবল ঘুমিয়ে যাচ্ছে। কবে চোখ মেলে তাকাবে সেই প্রতীক্ষায়। রাস্তা দিয়ে হাঁটা পথ অতিক্রমে অনেক সময় লাগে। তাই বিকল্প পথ হিসেবে জমির আইল যথেষ্ট। সাথে আরো তিন জন সঙ্গী। পায়ের ছেঁড়া স্যান্ডেলের ফাঁক গলে কুয়াশার ঠান্ডা জলের স্পর্শে শির শির করে হীমের প্রভাব। হাড়মজ্জায় কাপুনি আসে। হাতে সারাদিনের কাজের ফাঁকে অবসরে ক্ষুধার্ত উদরে খাদ্যের বাটি। সেদ্ধ ভাত আর বেগুনের তরকারী সাথে একটু লবণ।
আমন ধান কাাঁর শেষের দিকে। এখনো কিছু জমিতে নিরলস ভাবে পাকা ধান জমির বুকে পূর্ণতা দিচ্ছে। ফাঁকা জমিতে ধানের গন্ধ ও চিহ্ন বিরাজমান। চোখে পড়ে এলোমেলো মাটির ঢিবি। মূষিকের দল মাটির ঢিবি নির্মাণ করে। গর্তের গভীরে কিছু খড়কুটো ও ধানের পরিত্যক্ত অবস্থা। হাত ঠান্ডায় স্পন্দনহীন হওয়ার আগে সস্তায় কেনা বিড়িতে আগুন দিয়ে শরীরটা একটু গরম করে নিচ্ছে।
গ্রামের মেম্বার নুরুল হক। মেম্বারের বাড়ীতে ধান নেয়ার কাজ করে চার জন নারী। সবাই শীতের মৌসুমে ধানের কাজ করে। বিনিময়ে কিছু ধান পায়। তা দিয়ে বছরের কয়েকটা মাস স্বচ্ছন্দে খাওয়া পরা চলে যায়। এভাবে মরিচ,আলু, মাসকলাই, বাদাম শর্ষে যাবতীয় ফসলের কাজ করে। একটু ভালো ভাবে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই। তেমনি একজন নারী সন্ধ্যাতারা। প্রথম পক্ষের সন্ধ্যাতারা আর দ্বিতীয় পক্ষের আরও একটি বোন আছে। দ্বিতীয় পক্ষের বাবা সন্ধ্যাতারার আপন ছোট কাকা। সন্ধ্যাতারার সাথে শারীরিক গড়নের দিক থেকে অনেকটা মিল আছে। বিষেশত কালো রঙের কারণে। বেটে খাটো ছোট শরীর চোখের পাপড়ি সাধারু মানুষের তুলনায় অনেক কম।
দ্বিতীয় বাবা আদর ¯েœহ করেন। কিন্তু কোথাও যেন একটু ফাঁক রয়ে যায়। মায়ের বিয়ে নিয়ে অনেক ফুসফুসানি কথা শুনেছে। কিছুই বুঝতেই পারেনি। এখন অবশ্যই বুঝবার মতো যথেষ্ট বড় হয়েছে। ছোট বোন সখী মায়ের সাথে কাকার পরকীয়া প্রেমের অভিরূপে জন্ম। কাকা লালমোহনের চরিত্র নিয়ে অনেক শুনেছে। সন্ধ্যাতারার বাবার নাম চুনিলাল। বাবার প্রথম পক্ষের বউ কাকার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে নদীতে ডুবে আত্মহত্যা করে।
দ্বিতীয় পক্ষের বউ সন্ধ্যাতারার মা। কালো গায়ের রঙ সুচালো নাক। ঘন কালো চুল। সন্ধ্যাতারা যখন তিন মাসের পেটে তখন চুনিলাল ভাগ্যোর সন্ধানে রেঙ্গুনে পাড়ি দেয়। অনেক বছর কেটে গেল। চুনিলাল আর বাংলাদেশে ফিরে আসেনি। জীবিত না মৃত সেই খোঁজ কেই করেনি। কিছুদিন পর সন্ধ্যাতারার জন্ম হলো। শৈশবটা ছিল ধুলোমাখা অস্পষ্ট ছবির মতো। বেটে রোগা শরীর। তবু রেহাই পায়নি অদৃশ্য হাত থেকে। সুযোগ পেলেই নোংরা নখের আঁচড়ে রক্তাক্ত হয়। প্রতিরোধ করার মতো শক্তি ও সাহস কোনটাই ছিল না সন্ধ্যাতারার।
সময়ের বাঁকে যৌবন এসেছে বেটে শরীরে। বিয়ের আয়োজনে মতামত নেয়ার প্রশ্নই উঠেনা। কিছু মানুষের মুখে সোনার আংটি বাঁকা হলেও তবু সোনা ফলে। সঠিক সময়ে বিয়ের সানাইয়ের সুর বেজে উঠে আনন্দে। বিয়ে হচ্ছে এটাই বেশী অপছন্দের কিছুই নেই। চুপচাপ সন্ধ্যাতারা বউ হয়ে এলো সমীরের ঘরে। জাহাজে রান্নার কাজ সমীরের জীবিকা। সমীর আর সন্ধ্যতারার ভালো কাঁছে সংসার। কিন্তু সুখ রইল না কপালের ভাঁজে। স্বামীর ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়। পর পর দুটো ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। ভাগ্যের পরিহাসে ছেলেদের মৃত্যু হয়। সমস্ত দোষ সন্ধ্যাতারার উপর বর্ষিত হল। সুখের সংসার একটু একটু করে ভাঙনের মুখে। পাঁচ বছর অতিবাহিত হলো। অপয়ার অপবাদ নিয়ে বিতাড়িত হলো স্বামীর ঘর থেকে। পরবর্তী সময়ে খোঁজ খবর বন্ধ করে দেয় সমীর। অসহনীয় কষ্ট নিয়ে বাবার বাড়ীতে এসেও একই পরিস্থিতির সম্মুখীন। গ্রামের মানুষ অনেকেই বুদ্ধিহীন বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে।
বাধ্য হয়ে পোশাক শিল্পের কাজে যোগ দেয়। অন্তত নতুন পরিবেশে স্বস্তির নিঃশ^াস নেয়া যাবে। কিছু মানুষ মমতায় কাছে টেনে নিয়ে আপন হয়েছে। এদের অবস্থাও সন্ধ্যাতারার মতো। খেটে খাওয়া মানুষ। সারাদিন কাজ করে রাতে ক্লান্ত শরীর নিয়ে দুটো লবণ ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়া আর ভোরের অপেক্ষায় থাকা। সময়ের গতি যতই বাড়ছে, ততই সন্ধ্যাতারার প্রয়োজনের গতি কমে আসছে।
বিদেশী বাইয়ার আসলে সন্ধ্যাতারাকে বাথরুমে লুকিয়ে রাখে। বেটে ও কুৎসিত বলে। যে কয় ঘন্টা লুকিয়ে রাখে সেসব ঘন্টা সবার ছুটির পর আবার কাজ করে দিতে হয়। নতুবা সে সব ঘন্টা ওভার টাইম থেকে কাাঁ যাবে। কাজের চাপ মানসিক বিপর্যয় দিন দিন বাড়তে থাকে। সুখ বা দুঃখের স্বাদ ভুলে গেছে কবেই। লক্ষ্য কেবলই বেঁচে থাকা জরুরী হয়ে পড়ে। বৃদ্ধা মা সন্ধ্যাতারার উপার্জনের উপর নির্ভরশীল।
ছোট বোন সখীর ও বিয়ে হলো কাঠমিস্ত্রীর সাথে। সখী ছেলে মেয়ে নিয়ে ব্যস্ত সাংসারিক জীবন নিয়ে। বড়বোন বা মায়ের দিকে তাকাবার সময় নেই। হাতে একটু সময় নিয়ে আসে। আবার বেলা থাকতেই স্বামীর বাড়ী ফিরে যায়। দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে পরিপূর্ণ সংসার সখীর। ছোট ছেলের বয়স যখন এক বছর, তখন সখীর স্বামী ট্রাক এক্সিডেন্ট করে। ডান পা কেটে বাদ দিতে হয়েছে। মাথার পেছনের অংশে থেতলে গিয়ে জখমের আঘাত বেশী। মোট কথা হলো অনেক দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকতে হবে। চিকিৎসার খরচও হু হু করে বেড়েই চলছে। বাবার বাড়ী থেকে সখী সাহায্যে নিবে, তারও কোন উপায় নেই। বড় বোন সন্ধ্যাতারা কতটুকু বা সাহায্য করবে। তবু চেষ্টা করে সখীর সংসারে ছেলে মেয়ের খরচ দিতে। পূজোর জামা কাপড় কিনে দেয়। অবশেষে সখীর স্বামী আর সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরে আসেনি। মাথার অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের কারণে মৃত্যুর কাছে পরাজিত হয়।
বিধাতার নিয়তির চাকাতেই দুই বোনের সুখ পিষ্ট হয়ে ধূলোয় মিশে গেছে। সখীরও সন্ধ্যাতারার মতো একই অবস্থা। গ্রামের বাড়ী থেকে মাকে এনে রাখে। ছেলে মেয়ের দেখাশুনা করে। সন্ধ্যাতারা ও সখী পোশাক তৈরীর কারখানায় এক সাথে চাকরি করে। ছোট ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে সুখে দুঃখে দিন বেশ ভালোই কেটে যাচ্ছে। সময়ের পালে হাওয়া লেগে মনে হয় বছরগুলো তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে গেছে।
বয়সের সাথে সম্পর্ক গুলো ক্ষয়ে গিয়ে অচল হয়ে পড়েছে। বোনের ছেলে মেয়ে গুলো দেখতে দেখতে চোখের সামনেই দ্রুত বড় হয়ে গেল। এখন আর আগের মতো নিষ্পাপ হাতে জড়িয়ে ধরে না।স্নেহের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে। কেবল টাকার চাহিদা বেড়ে গেছে। কথায় কথায় অপমান করে। মানসিক ভাবে আবারো ভেঙে পড়ে সন্ধ্যাতারা!
চাকরির ক্ষেত্রে একই অবস্থা। কাজের ক্ষমতা আগের তুলনায় বুড়ো হয়ে গেছে। কথায় কথায় গালিগালাজ। তিক্ততার বিষদাঁত শরীরে ক্ষত তৈরী করে। দুদিন যাবত জ¦রে ভুগে। ক্লান্তিভাব নিয়ে কারখানায় উপস্থিত হতেই- লাইন সুপারভাইজার জানালো সন্ধ্যাতারার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে! অনুপস্থিত থাকার কারণে চাকরি থেকে বের করে দেয়! বেশ কয়েক দিন বাসায় মনমরা হয়ে থাকে। বাঁচার জন্য যেটুকু অক্সিজেন দরকার, সেটুকু মনে হচ্ছে আরো বিষাক্ত!
সম্পর্কের মায়া কেটে রওনা হলো গ্রামের বাড়ীর উদ্দেশ্য। গাড়ীতে বসে দূর দিগন্তে তাকাতেই মনে হলো গাছপালা নদী পাহাড় সবই ঘুরছে মানুষের মতো। উড়ো মন ছুটে চলে গাছপালার ফাঁকে নদীর বাঁকে। ঘন জঙ্গলে নিশুতি রাতে নিবু নিবু আলোর জোনাকি হয়ে। বাড়ী ফিরল ক্লান্ত দেহে, অবসন্ন তিক্ততার মন নিয়ে। রাতের বেলা খাবারের ঝামেলা না করেই এক গøাস জল খেয়ে সটান শুয়ে পড়ল। মাটিতে পাটি বিছিয়ে। অনেক দিন বাদে চাকার মতো বিরামহীন শরীরটা মাটির ছোঁয়া পেয়ে ঘুমের রাজ্যে বিলীন হয়ে গেছে।
সকালটা বেশ পরিচ্ছন্ন। ঝকঝকে রোদ একেবারে বেড়ার ফাঁক গলে মাটিতে। যেন আলোর টিপ পরিয়ে দেয়। এলোমেলো রুক্ষ চুল। ছোটবেলা থেকেই চুলগুলো পুষ্টিহীন বাদামি রঙের। ঈশ্বর সবাইকে একটা না হয় একটা প্রতিভা দিয়ে থাকেন। কিন্তু সন্ধ্যাতারার বেলায় যেন সব ফুরিয়ে গেছে। বেশ কয়েক মাস সচ্ছল ভাবে কেটে গেছে। সাথে করে যে টাকা এনেছিল সবই শেষের দিকে। তাই দিশেহারা কোন একটা কাজের সন্ধান করতে হবে। অল্প কিছু টাকা আছে। ঘরে আবার বয়স্ক মা। চিকিৎসার জন্য আলাদা করে টাকাাঁ রেখে দিল।
দীর্ঘনিঃশ্বাসে মিশে আছে নিত্য দিনের হাহাকার। মেয়ে মানুষের কাজের খোঁজ করা দুষ্কর। কেউ কাজ দিতে চায় না। অগত্য মানুষের বাড়ীর ঝিয়ের কাজ নেয়। ঘর লেপা,ঝাড়ু দেয়া, রান্নাবান্না, বাটনা বাটা, ধান মাড়াই, মরিচ তোলা, সরিষা ঝাড়া, এইসব নিত্যদিনের কাজ। তবে এক বাড়ীর নয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বাড়ীর কাজ। কোনভাবে দিন শেষে রাত। আবার রাতের পরে কোন সুন্দর সকালের অপেক্ষায় থাকা। সর্বদা ভালোর দিকে অনুকরু। এবাবে মা এবং সন্ধ্যাতারার জীবনের শেষ সুখটা ভাগাভাগি করে নেয়। এক জনের পরিবর্তে, রাস্তায় মাটি ভরাটের কাজ নেয় কিছুদিন হলো। তাতে কিছু টাকা পেল। ভালো মন্দ দুটো খেতো পারবে। কিন্তু সন্ধ্যাতারার ক্ষয়ে যাওয়া সংসারে সুখ ভরাট করতে পারলো না।
আনমনে ভাবছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সুখের সময়টুকু। ঠোঁটের কোণে আলতো মৃদু হাসির ঢেউ এই মাত্র শেষ। অনির্দিষ্ট ভবিষ্যৎ নিয়ে সর্বদা চিন্তায় ডুবে থাকে। মাঝে মাঝে সস্তায় কেনা বিড়ি ফুঁকে। তাতে নাকি মানসিক চাপ কমে আসে। কথাটা সত্যি কিনা জানি না। অভ্যাস ক্রমেই বিড়ি টেনেই যাচ্ছে। কোনদিন যদি বিড়ি না ফুঁকে, অস্বস্তিতে দিন কাটে।
পা ফাটা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। শীতের সময় হাঁটতে কষ্ট হয়। ইদানিং কোমরের ব্যথাটাও বেড়েছে। আগের মতো জোর দিয়ে কাজ করতে পারে না। চোখের দৃষ্টি আগের চেয়ে ক্ষীণ হয়ে আসে। চোখের পশম ঝড়ে গেছে অনেকটা। চোখের পাতা আগের তুলনায় ফুলেছে। আয়নায় নিজেকে খুবই অস্বাভাবিক লাগে। কখনো ঘটা করে আয়না দেখা হয় না। মায়ের কথা কি আর বলব। সারা বছর একটা না একটা অসুখ লেগেই থাকে। আগের মতো সোজা হয়ে হাঁটতে পারে না। বাঁশের একটা বড় কঞ্চি লাঠি হিসেবে ব্যবহার করে।
গরমের প্রভাব বেড়ে গেছে। গ্রামের গাছপালায় একটু বাতাস নেই। মনে হচ্ছে গাছের পাতারা এখন রাতের বেলা না ঘুমিয়ে দিনে ঘুমাচ্ছে। রোদের তেজ যেন গনগনে আগুনের কয়লা। পুড়ে একেবারে খাক করে দিচ্ছে।
বিকেলটা যখন ক্লান্ত তখনি মেঘেদের ঘনঘন উড়াউড়ি। সন্ধ্যের মুখোমুখিতে বৃষ্টির ধুম। উপচে পড়ছে বৃষ্টির ধারা। বজ্রপাত ছাড়াই একটানা বৃষ্টির নৃত্য সারারাত ধরে চলছে। সকাল বেলা ঘুম চোখে দেখে হালদা নদীতে ঢলের প্রবাহ। ঘোলা জলের স্রোতে ভাসছে খড়খুটো, কচুরী ফেনা, কাঁচা আম, চালতা, প্লাষ্টিকের বোতল, পাড় ভাঙা গাছের ঢ়ুমুর ফল, টমেটো, আধা কাাঁ লাউ আরো অনেক কিছু। নদীর পাড়ে বসবাসরত গরীব মানুষ গুলো ভেসে আসা গাছ, শুকানো কাঠ ধরার জন্য ওতপেতে থাকে। সন্ধ্যাতারাও তাদেরই মতো। সর্বদা অন্নেষণ কাজ। ভাত বস্ত্র, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় জিনিসের।
শুকনো কাঠ খুঁজতে গিয়ে বিষাক্ত কাাঁ সন্ধ্যাতারার পায়ে বিঁধে। তারপর থেকে সন্ধ্যাতারার সকাল বিকেল বদলে যেতে থাকে। পা ফুলে ফেপে ঢোল। প্রচন্ড ব্যথা। চিকিৎসা করাবে তারও উপায় নেই। জমানো টাকা সব ফুরিয়ে গেছে। কারো সহায়তা পাবে তারও নিশ্চয়তা নেই। দুই দিন বাদে পা পাকতে শুরু করে। যন্ত্রণায় ককিয়ে কাতরাতে থাকে। ঝাড় ফুঁক, পানি পড়া বাদ পড়েনি। চোখের কোঁরে জমে থাকা জল আস্তে আস্তে শুকিয়ে যাচ্ছে। কিছু দিন পর পায়ে পচন ধরে। কিছু জায়গায় মাংস ঝরে গিয়ে ঘা সৃষ্টি হয়। দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। কেউ আর কাছে আসে না। খাবার দেয় দূর থেকে। কখন ম্লান করেছে মনে নেই সন্ধ্যাতারার। প্রাতঃকৃত্য সারতে হাঁটতে পারে না। ঘরেই বিছানাতে সারতে হয়।
বৃদ্ধা মা ঈশ্বরের কাছে মেয়ের মৃত্যু কামনা করে! কষ্টের জীবন দেখে। সকাল থেকে ফিন ফিনে বৃষ্টি। গুড়গুড় মেঘেদের ডাকাডাকি। বৃদ্ধা মাকে বলল মাছের ঝোল দিয়ে দুপুরে গরম ভাত খাবে। শুনে মা বললো এই বেলা কোথায় থেকে পাব মাছ। শনিবারে বাজার থেকে মাছ এনে রান্না করব।
বিকেল থেকে বৃষ্টির সাথে বাতাস শুরু হয়েছে। দিনের আলো নিবু নিবু হয়ে সন্ধ্যার আকাশে হেলে পড়েছে। সন্ধ্যাতারার জীবন থেকে প্রাণটা উড়ে গিয়ে দূর আকাশে সন্ধ্যাতারা হয়ে মিটমিট করে জ¦লছে। সময় অনেকদিন গড়িয়ে গেল। মা এখনো সন্ধ্যা হলে আকাশে দিকে তাকিয়ে থাকে কোন তারাটা সন্ধ্যাতারা।