সন্দ্বীপে মিটার সংযোগে অতিরিক্ত অর্থ আদায়

29

মনিরুল ইসলাম মুন্না ও সাইফ রাব্বি, সন্দ্বীপ

সন্দ্বীপে বিদ্যুতের মিটার সংযোগ দিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। আবেদনের পর থেকে মিটারের সংযোগ স্থাপন পর্যন্ত গ্রাহকদের পদে পদে হয়রানি করেন কর্মরত প্রকৌশলীবৃন্দ। এমনই অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। গত ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এর প্রধান কার্যালয়ে এ অভিযোগ দায়ের করেন।
তবে অভিযোগের বিষয়গুলো প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি প্রদান করেছেন পিডিবি দক্ষিণাঞ্চলের (চট্টগ্রাম) প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতিকে ছাড় দেয়া হবে না। অভিযোগের কপি আমি পেয়েছি এবং বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
গ্রাহকদের দেয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের জন্য ৯ হাজার টাকা এবং বিদ্যুতের পোল থেকে গ্রাহকের সংযোগ স্থাপনের জন্য আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা নিয়ে নিচ্ছেন প্রকৌশলীরা। অথচ প্রি-পেইড মিটারের জন্য সরকারি খরচ সাড়ে ৬ হাজার টাকার মত। কিন্তু তিন হাজার টাকা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন। অন্যদিকে সংযোগ পেতে ৮৮৩ টাকা প্রয়োজন হলেও সংশ্লিষ্টরা আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা আদায় করছেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল ফাত্তাহ মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে একমাস আগে পদায়ন করা হলেও শুধু ঐ মাসেই (নভেম্বর ২০২২) ৩৫০টি সংযোগ দিয়ে গ্রাহকদের জিম্মি করে অবৈধভাবে কমপক্ষে ৭ লাখ টাকা আয় করেছেন। এছাড়া সাবেক আবাসিক প্রকৌশলী ও বর্তমান সহকারী প্রকৌশলী ইব্রাহিম খলিল স›দ্বীপে ২২ হাজার গ্রাহককে মিটার ও সংযোগ দিতে অবৈধভাবে ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা আয় করেছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বিদ্যুতের মিটার সংযোগ পাওয়া যেন রীতিমত সোনার হরিণ স›দ্বীপের মানুষের কাছে।
২০১৮ সালে ১৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিড থেকে সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। দীর্ঘ ৪ বছর অতিবাহিত হলেও অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এখনও এই দ্বীপ উপজেলাকে পুরোপুরি বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা।
জানা যায়, চাহিদা মত অতিরিক্ত টাকা না দিলে মিটার মিলে না এ উপজেলার গ্রাহকদের। বিদ্যুৎ বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা এবং কর্মচারীর যোগসাজশে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে একটি সিন্ডিকেট। প্রতিটি মিটার সংযোগে আবেদন ফি ও অন্যান্য খরচসহ সরকারি কোষাগারে ৭৬৮ টাকা জমা হলেও গ্রাহকদের কাছ থেকে মিটার প্রতি অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। পোস্টপেইড মিটারে সর্বসাকুল্যে মিটারসহ ২ হাজার ৬৮ টাকা হলেও নেয়া হতো ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। প্রি-পেইড মিটারে সবমিলিয়ে ৬ হাজার ৫৫৮ টাকা হলেও নেয়া হচ্ছে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকার মত। এছাড়াও বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে সরকারের বিশেষ বরাদ্দে ৬০০ প্রি-পেইড মিটার আসলেও কোনো মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার পায়নি। এতে খরচ ৭৬৮ টাকা হলেও নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল ফাত্তাহ মো. মোস্তাফিজুর রহমান ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা করে বিক্রি করেছেন। এসব সরকারি মিটার থেকেই শুধুই আত্মসাৎ করেছেন প্রায় ২৪ লাখ টাকা। সিন্ডিকেটের চাহিদামত টাকা দিতে না পারলে মিটার পাচ্ছেন না স্থানীয় নিম্ন আয়ের বাসিন্দারা।
সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মবহির্ভূত আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি পিডিবি’র চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কোন সুরাহা পাননি গ্রাহক ও সংযোগ প্রত্যাশীরা।
অভিযোগকারী সাদ্দাম হোসেন বলেন, সন্দ্বীপে যে বিদ্যুৎ পাবো আমরা তা কল্পনাও করিনি। প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের সাংসদ না চাইলে আমরা কখনও বিদ্যুৎ সংযোগ পেতাম না। বিদ্যুৎ আসার পর এখানে মিটার, বিদ্যুতের খুঁটি ও সংযোগ নিয়ে একধরনের বাণিজ্য করতেন বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে দায়িত্বরত প্রকৌশলীরাও জড়িত ছিলেন। তাই আমি এবং আরও কয়েকজন মিলে পিডিবির প্রধানের কাছে অভিযোগ দায়ের করি। আমরা চাই দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।
অভিযোগ দায়েরের পর কোনো সুফল পাওয়া গেছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গতকাল (সোমবার) আমরা একটা সুফল পেয়েছি। সেটি হল- ‘আগে মিটারের লোডবৃদ্ধির জন্য এক হাজার টাকার মত নিয়ে নিতো অফিসের লোকজন। কিন্তু এখন তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- আমরা খুব চাপে আছি, আপনারা ব্যাংক ড্রাফট করে দেন, তারপর লোড বাড়িয়ে দিচ্ছি। কাজেই মাত্র ১১৫ টাকা জমা দিয়ে লোড বাড়িয়ে নিতে পারছি।’
এ বিষয়ে জানতে পিডিবি’র বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ স›দ্বীপের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল ফাত্তাহ মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে বেশ কয়েকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। এমনকি ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোন উত্তর দেননি তিনি।
তবে পিডিবি’র দক্ষিণাঞ্চলের (চট্টগ্রাম) প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম পূর্বদেশকে বলেন, সন্দ্বীপে অনেকগুলো প্রকল্প চলমান রয়েছে। সেখানে বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট অনেক মানুষ কাজ করে এবং তারাই অনৈতিক সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে বিদ্যুৎ বিভাগের সুনাম ক্ষুণ্ণ করছে। তারপরও যদি আমাদের কোনো অফিসার বা স্টাফ অনিয়মে জড়িত থাকে তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।