সন্দ্বীপে তৈরি হচ্ছে স্বল্পমূল্যে মানসন্মত স্যানিটারি ন্যাপকিন

81

সচেতনতার অভাব ও অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানেটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করতে পারে না উপকূলীয় অঞ্চল সন্দ্বীপের নিম্নবিত্ত নারী ও কিশোরীরা। তাই ঋতুকালীন সময়ে বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর ন্যাকড়া ব্যবহার করে এছাড়াও সে ন্যাকড়া স্যাঁতসে্যঁতে পরিবেশে শুকাতে দিয়ে পুনরায় ব্যবহার করার কারণে পাঙ্গাস জাতীয় বিভিন্ন জীবানু সংক্রমিত হয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মেয়েলী রোগ- জ্বরায়ুতে চুলকানী, জ্বরায়ু টিউমার এমন কি বন্ধ্যাত্বতা ও বরন করছে তারা। ফলে দাম্পত্য জীবনে কলহ সহ বিবাহ বিচ্ছেদের মতো ঘটনাও ঘটছে। তাই স্যানেটারী ন্যাপকিন সহজলভ্য ও ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনার জন্য রিকল ২০২১ প্রজেক্ট এসডিআই সন্দ্বীপের কয়েকজন নারী উদ্যোক্তা ফাতেমা, রুমা, সেতারা, নিলুফা, কুলছুমা ও রাহেনা বেগমকে সিরাজগজ্ঞের মানব মুক্তি সংস্থা হতে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির উপর ৭ দিনের প্রশিক্ষন প্রদান করে। আর দিয়েছে কারখানা তৈরির জন্য পুঁজি সহায়তাও। তারা প্রশিক্ষিত হয়ে এসে দুটি ন্যাপকিন তৈরির কারখানায় এখন নিয়মিত স্যানিটারি ন্যাপকিন উৎপাদন করে বাজারজাত করছে।
একটি মুছাপুর ৭নং ওয়ার্ডের ভেলাকাজির বাড়ির কর্নফুলী হাইজিন সেন্টার অন্যটি রহমতপুর ৫নং ওয়ার্ডস্থ লালখাঁর পাড়ার চামেলী হাইজিন সেন্টার। আর স্থানীয়ভাবে ন্যাপকিন তৈরি হওয়ায় এখন তাদের মাঝে বেড়েছে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারে সচেতনতা। এবং বাজারের অর্ধেক মুল্যে স্যানেটারি ন্যাপকিন পাওয়ায় গ্রাম্য নারী ও কিশোরীদের মাঝে দিন দিন এটি ব্যবহার প্রবনতা বাড়ছে। এছাড়াও দোকানে কিনতে গিয়ে তারা বিবর্ত পরিস্থিতে পড়তে হতো বলে তারা লজ্জায় তা ক্রয় করতে পারতোনা। এখন নারী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে তারা তা স্বাছন্দে কিনতে পারছে বলে তা হয়ে উঠছে বেশ জনপ্রিয়। উৎপাদনকারীদের আয়ের পথও তৈরি হয়েছে। জানা যায়, পরিশোধিত তুলা, নেট ও ব্যান্ডেজের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয় পণ্যটি। কিশোরী মেয়ে শিল্পী বেগম বলেন, আমাদের কিশোরী দলের মেয়েরা আগে অপরিচ্ছন্ন কাপড় ব্যবহার করতো এখন হাতের নাগালে ও ক্রয় সীমার ভিতরে হওয়ায় প্রায় সকলে এখন ন্যাপকিন ব্যবহার করছে। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটাই কমে এসেছে। মুছাপুর কর্ণফুলী হাইজিন সেন্টারে ৫ জন নারী ও রহমতপুর চামেলী সিবিওর কারখানাটিতে ৫ জন নারী এ কাজ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠার স্বপ্ন দেখছেন। কর্ণফুলী হাইজিন সেন্টারের প্রোপাইটর ফাতেমা বেগম জানান, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হওয়ায় আমরা বাজার মূল্যের অর্ধেক দামে অথাৎ ৭টি প্যাডের প্যাকেট বিক্রয় করছি মাত্র ৫০ টাকায়। অথচ একই মানের পন্য ফার্মেসীগুলোতে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চামেলী হাইজিন সেন্টারের প্রোপাইটর সেতারা বেগম জানান, তারা দৈনিক ২ ঘণ্টা করে এ কারখানায় কাজ করছে। এবং প্রতিদিন তারা ৫০ প্যাকেটের মতো ন্যাপকিন তৈরি করতে পারছে। তবে বিক্রি এখনো জমে উঠেনি। বিক্রি বাড়াতে তারা কয়েকটি উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ফার্মেসী ও কিশোরী দলে এগুলোর প্রচারণা চালাচ্ছে। শিক্ষকরাও তাদের সহযোগিতা করছেন। রিকল প্রজেক্টের এফ এফ বাদল রায় স্বাধীন জানান, এ কারখানা দারিদ্র্যের শিকার নারী উদ্যোক্তারা আশার আলো দেখছে। এমনকি পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ স্বাস্থ্য বিষয়েও তাদের সচেতন করে তুলছে। তবে এগুলো বাজারজাত করার জন্য বড় কোন পৃষ্ঠপোষক পেলে সপের বাইরেও তারা এই পণ্য পৌঁছে দিতে পারবে। কারণ এগুলো ১০০% স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি হচ্ছে। রিকল প্রজেক্টের প্রকল্প সমন্বয়কারী জানান, স্থানীয়ভাবে তৈরি বলে তারা কম দামে বিক্রি করতে পারছেন। আর স্থানীয় কিশোরীরা এগুলো বেশি করে কেনা ও ব্যবহারের জন্য আমরা ওয়াস নারী দলে আলোচনা করছি। খুব সহজে এগুলো প্রচারনাও পাচ্ছে। এবং তা ক্রয় ও ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলছে। তাই আমরা এটি নিয়ে আশাবাদী। তবে অভিবাবকরাও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। তাহলে নারী ও কিশোরিরা রোগমুক্ত সুস্থ্য জীবনযাপন করতে পারবে। স্বানীয় স্বাস্থ্যকর্মী রহিমা আক্তার জানান, কিশোরীরা পিরিয়ডের সময় অর্থাভাবে স্বাস্থ্যসম্মত ন্যাপকিন ব্যবহার করতে পারে না। তাই স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। এটি কমিয়ে আনতে স্যানেটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার বাড়াতে আমরাও সচেতনতা বাড়াচ্ছি।