সন্দ্বীপের উপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের শক্তিশালী অংশ অতিক্রম করতে পারে- মোস্তফা কামাল পলাশ

17

সন্দ্বীপ প্রতিনিধি:
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর শক্তিশালী অংশ আজ বিকেল ৫টা থেকে মধ্যরাত ৩টার মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ দিয়ে অতিক্রম করার আশংকা রয়েছে বলে জানান, বিশিষ্ট আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ সন্দ্বীপের উপর দিয়ে অতিক্রম করার বেশি আশাংকা দেখা যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ মোকাবেলায় সন্দ্বীপ উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি রবিবার বিকেলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক জরুরী বৈঠকের আয়োজন করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খিসা’র সভাপতিত্বে বৈঠকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সিপিপি, কোস্ট গার্ড, পুলিশ এবং বিভিন্ন চেয়ারম্যানদের মানুষের জান-মাল রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সোমবারের মধ্যে বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান মেরামতের নির্দেশ দেওয়া হয়। সোমবার রাতের মধ্যে বেড়িবাঁধের আশেপাশে বসবাসরত মানুষদের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেয়ার ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিছিন্ন বেড়িবাঁধহীন দ্বীপ ইউনিয়ন উড়িরচর ও সারিকাইতের বাংলাবাজার এলাকাকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকার মানুষকে সন্ধ্যার মধ্যে সাইক্লোন শেল্টার ও কিল্লায় পাঠাতে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সন্দ্বীপের ১১২টি স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার ও ৪টি কিল্লায় মানুষকে আশ্রয় দিতে প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খিসা জানান, রোববার রাতে পাউবো’র প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদের সাথে নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। জরুরী খাদ্য সরবরাহের জন্যে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে বলে জানান। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ জরুরীভাবে ১৭টি মেডিকেল টিম গঠন করেছে। সন্দ্বীপের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সতর্ক সংকেত প্রচার করে নিরাপদ স্থানে লোকজনদের আশ্রয় নিতে মাইকিং করা হচ্ছে। সন্দ্বীপ আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ রাশেদ আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সন্দ্বীপে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সকাল ৬টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৭ মি:মি: রেকর্ড করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এদিকে সন্দ্বীপে রবিবার মাঝ রাত থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ সংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশংকা রয়েছে বলে জানান, সহকারী প্রকৌশলী ইব্রাহীম খলিল। তিনি বলেন, সন্দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে গাছের ডালপালা ভাঙ্গার ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ আপাতত বন্ধ রয়েছে। আশা করছি দ্রুত সংযোগ চালু হবে। তবে ঘূর্ণিঝড় শুরু হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হবে। সন্দ্বীপ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা পূর্বদেশকে বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছি। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তারা আমাকে জানিয়েছেন। এবং সন্দ্বীপের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগ ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল মধ্যরাতে এক প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সন্দ্বীপে সব লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিলো। সেই কালোরাত আজও সন্দ্বীপবাসির মনে গেঁথে আছে। এখনো কোন ঘূর্ণিঝড়ের আভাস পেলে সন্দ্বীপের জনগণের মাঝে আতংক বিরাজ করে। সিত্রাং এর আগমন আশংকায় আতংক বিরাজ করছে এখানকার জনসাধারণের মাঝে।