সন্দ্বীপকে চট্টগ্রামে যুক্ত করতে ব্রিজ নির্মাণ হবে

129

১৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবল লাইন স্থাপনের মাধ্যমে স›দ্বীপে সরবরাহ করা বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল বুধবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন। একই সাথে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পটিয়ার জুলধায় ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র (তৃতীয় ইউনিট), শিকলবাহা (২৩০/১৩২ কেভি) উপকেন্দ্র ও বারৈয়ারহাট (১৩২/৩৩ কেভি) উপকেন্দ্র উদ্বোধন করেন।
এছাড়া রাঙামাটি, মহেশখালীসহ বিভিন্ন জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৬টি পাওয়ার স্টেশন ও ৭টি গ্রিড উপকেন্দ্র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
৭টি গ্রিড উপকেন্দ্রের মধ্যে রাঙামাটির (১৩২/৩৩ কেভিএ) উপকেন্দ্র এবং মহেশখালীর মাতারবাড়ি (১৩২/৩৩ কেভিএ) উপকেন্দ্রও রয়েছে।
সন্দ্বিপ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, স›দ্বীপে সরবরাহ করা বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন স›দ্বীপকে চট্টগ্রামের সাথে যুক্ত করতে একটি ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ সরবরাহের ফলে স›দ্বীপে কৃষিখাতে উন্নতি, বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ পর্যটনে অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। অপেক্ষাকৃত কম দূরত্ব দেখে মাটিতে ব্রিজ ধারণের ক্ষমতা আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করে সঠিকতা পাওয়া গেলে স›দ্বীপবাসীর জন্য ব্রিজ করে দেওয়া হবে।’
প্রধানমন্ত্রী স›দ্বীপ নিয়ে তাঁর অতীত স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘স›দ্বীপ অনেকবার গিয়েছি। ১৯৮৫ সালে স›দ্বীপ থেকে ট্রলারে উরিরচর ও ১৯৯১ সালে জলোচ্ছ¡াসে দ্বীপের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। ১৯৯১ এর জলোচ্ছ¡াসে স›দ্বীপে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এ সময় প্রয়োজনীয় খাবার পাওয়া যায়নি। সকালে পান্তা ভাতের সাথে নারিকেলের কোড়া, শুকনো পোড়া মরিচ খেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে দেখতে গিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন স›দ্বীপের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা, উপজেলা চেয়ারম্যান মাস্টার শাহজাহান, মসজিদের ইমাম হাফেজ ইউছুপ, কৃষক দুলাল খলিফা ও স্কুল ছাত্রী তাবাচ্ছুমের সাথে। ভিডিও কনফারেন্সের স›দ্বীপ প্রান্তে শুভেচ্ছা বক্তব্য রেখে সভা সঞ্চালনা করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন। এ উপলক্ষে উপজেলা পরিষদ মাঠে আয়োজিত সমাবেশে দ্বীপের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার প্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পটিয়ার জুলধায় ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র্র (৩য় ইউনিট), শিকলবাহা (২৩০/১৩২ কেভি) উপকেন্দ্র ও বারৈয়ারহাট (১৩২/৩৩ কেভি) উপকেন্দ্র উদ্বোধনকালে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা, সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. হাবিবুর রহমান, পিডিবি বিতরণ দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন, সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ নভেম্বর থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে জুলধা-থ্রি পাওয়ার প্লান্ট। একর্ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার এন্ড সার্ভিসেস লিমিটেড বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করে। এর আগে ১০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র আগে থেকে উৎপাদন করে আসছিল। পিডিবির সাথে চুক্তি মোতাবেক চলতি বছরের মাঝামাঝিতে ‘জুলধা-টু’ নামের ১০০ মেগাওয়াটের আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করার কথা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
রাঙামাটি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাঙামাটির ১৩২/৩৩ কেভি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাহাড়ে বিদ্যুৎতায়নের জন্য ৭০০ কোটি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যাতে পাহাড়ের মানুষ অন্ধকারে না থাকে, বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়। তিনি পার্বত্য এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্মাণের আবাসিক হিসেবে নির্মাণ করতে নির্দেশ দেন।
কাপ্তাই লেকে মাছ ধরা বন্ধকালীন সময়ে যেন খাচায় মাছ চাষ করা হয় ও কৃষকরা যেন মাছের চাষের পাশাপাশি শাক-সবজির চাষ করে এবিষয়ে কৃষি কর্মকর্তাদের কাজ করার নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাহাড়ের মানুষ আগে জমির ক্ষতিপূরণ পেত না, এবার আমরা সমতলের সাথে মিলিয়ে ক্ষতিপূরণের পরিমান তিনগুণ করে দিয়েছি। ভিডিও কনফারেন্সে সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার, জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদসহ শিক্ষার্থী, মাছ ব্যবসায়ী ও নারী উদ্যোক্তারা বক্তব্য রাখেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ রিয়াদ মেহমুদ, সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবদুল খালেক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ছুফি উল্লাহসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ।