সন্ত্রাসী কর্মে গ্রেপ্তারকৃতদের কর্মী দাবি করছে বিএনপি

4

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ চুরি-ডাকাতি ছিনতাই, রাহাজানিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অপরাধে গ্রেপ্তার হয়। বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ও রিজভী সাহেবরা গ্রেপ্তারের যে হিসাব দিচ্ছেন, তাতে মনে হচ্ছে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডেযুক্ত যারা প্রতিদিন গ্রেপ্তার হচ্ছে, পুলিশের খাতায় যারা অপরাধী, তাদেরকে বিএনপি কর্মী বলে দাবি করছে। এটাই বিএনপি নেতাদের কথায় মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিএনপির কোন নেতা কিংবা কর্মীর বিরুদ্ধে কোন রাজনৈতিক মামলা দেওয়া হয় না। তাদের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হয়েছে, সেগুলো গাড়ি পোড়ানোর মামলা, পুলিশ এবং মানুষের ওপর হামলার মামলা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাÐের মামলা। এ সমস্ত মামলায় তারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে চিটাগাং উইম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত ১৪তম আন্তর্জাতিক উইম্যান এসএমই এক্সপো’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
চিটাগাং উইম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এমপি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নিজের দলটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য গতানুগতিক কিছু কর্মসূচি পালন করে। গাড়ি যখন বসে যায়, তখন সেটির ব্যাটারি মাঝেমধ্যে স্টার্টে রাখতে হয়। বিএনপিও পুরনো গাড়ির মত বসে গেছে। বসে যাওয়ায় তারা গাড়ি স্টার্টে রাখার জন্য মাঝেমধ্যে দলটাকে স্টার্ট দেয়। সেজন্য কিছু গতানুগতিক কর্মসূচি পালন করে।
‘সরকার চোরাবালিতে দাঁড়িয়ে আছে’- বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ড. হাছান বলেন, আমরা চোরাবালির উপর দাঁড়িয়ে আছি, এটা আমরা গত ১৫ বছর ধরে শুনছি। চোরাবালিটা এত শক্ত যে, তাদেরকে আরো বহু বছর অপেক্ষা করতে হবে।
মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর যারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে তারা আগামী পরশুদিন যাবে, সেটি কনফার্ম কিনা সাংবাদিকদের প্রশ্নে ড. হাছান বলেন, আমাদের সাথে যেটি আলোচনা হয়েছে, তাদের ২২ এপ্রিল নিয়ে যাবার কথা রয়েছে, তবে সেটা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করবে। সেখানকার পরিস্থিতি, তাদেরকে পরিবহন করে নিয়ে যাওয়া কতটুকু নিরাপদ, একই সাথে সমুদ্র এবং আবহাওয়া পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে।
এর আগে আন্তর্জাতিক উইম্যান এসএমই এক্সপো’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাছান বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশে নারীর যে ক্ষমতায়ন হয়েছে, গত ১৫ বছরে সেটি পৃথিবীর সামনে একটি উদাহরণ। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান সমগ্র পৃথিবীতে পঞ্চম। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমাদের অবস্থান দ্বিতীয়, অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়ার পরে আমাদের অবস্থান। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার নারী, রেকর্ড সংখ্যক নারী মন্ত্রী সভার সদস্য। এছাড়া আমাদের স্থানীয় সরকার পর্ষদে ৩০ ভাগ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। আজ থেকে ১০ বছর আগেও কেউ ভাবেনি জেলার ডিসি, এসপি, উপজেলার বিপুল সংখ্যক ইউএনও নারী হবেন। নারী মেজর জেনারেল হয়েছেন, নারী হাইকোর্টের জাস্টিস, এফিলিয়েট ডিভিশনের জাজও হয়েছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা শুধু স্বপ্ন দেখাননা, স্বপ্নের বাস্তবায়নও করেন। আজকে বাংলাদেশ পৃথিবীর সামনে উন্নয়নের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠন করে দেশকে যখন উন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। আমাদের যে ধাবমান চাকা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এগিয়ে চলছিল, সেই চাকাকে ঘূর্ণায়মান চাকায় রূপান্তর করা হয়। ২১ বছর দেশ এক জায়গায় ঘুরপাক খেয়েছে। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা সরকার গঠন করার পর দেশ আবার এগিয়ে যাওয়া শুরু করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার ১৯৯৯ সালে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়। এটি যখন বঙ্গবন্ধু কন্যা ঘোষণা করেন, তখন বিএনপির সাইফুর রহমানসহ অনেকে বলেছিল খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ঘোষণা করা ভালো না। তাহলে বিদেশি সাহায্য পাওয়া যাবে না।
যারা আজকে লম্বা লম্বা কথা বলেন, তারা নারীদের উন্নয়নের জন্য কি করেছিল এমন প্রশ্ন রেখে ড. হাছান বলেন, বিএনপি-জামায়াত যখন ক্ষমতায় ছিল, তারা নারী উন্নয়নের জন্য কিছু করেনি, তারা নারীদেরকে পিছিয়ে রেখেছিল। আজকে নারীদের উন্নয়নের জন্য কাজ করে চলেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। সবাই মিলে দেশটাকে গড়তে হয়। দেশ গড়ার দায়িত্ব প্রত্যেকটি নাগরিকের। শুধু সরকার করে দিবে এই মানসিকতা থাকলে দেশ কখনো এগিয়ে যায় না।
ভারতের গরু চোরাকারবারিরাও দেশ প্রেমিক উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ভারত থেকে যে এত গরু আসে কোন সময় একটা ষাঁড় কিংবা গাভি তারা পাঠায় না, সবগুলো বলদ গরু পাঠায়, যেগুলো নির্জিব, প্রজনন করতে পারে না। কারণ সেগুলো পাঠালে এখানে প্রজন্ম তৈরি হবে, ওখান থেকে আর গরু আসবে না। আর আমরা সেটা মাথায় রাখি না। সুতরাং সবাই মিল দেশটাকে গড়ে তুলতে হবে এবং সেই দেশ গড়ার ক্ষেত্রে উইম্যান চেম্বার বলিষ্ট ভ‚মিকা রাখতে পারে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে গত ১৫ বছর যে অভুতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, তার সাক্ষী চট্টগ্রাম। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এবছর আমরা বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছি হস্তশিল্পকে। এ বর্ষপণ্যটাকে গ্রাম থেকে শহরে, শহর থেকে সারাদেশে এবং ই-কমার্সের মাধ্যম সারাবিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা ‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ এ ¯েøাগানে সারা বাংলাদেশ থেকে গ্রাম পর্যায়ে যে হস্তশিল্পগুলো আছে, সেগুলোকে বাছাই করে তাদেরকে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে এবং বাজারজাত সহজিকরণের মাধ্যমে তাদেরকে দেশে-বিদেশে পৌঁছে দিতে চাই।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন দিলোয়ারা ইউসুফ এমপি, শামীমা হারুন লুবনা এমপি, এফবিসিসিআই’র সভাপতি মাহবুবুল আলম, জাতীয় মহিলা সংস্থার সভাপতি চেমন আরা তৈয়ব। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চিটাগাং ওমেন চেম্বার এন্ড কমার্স সহ-সভাপতি ও এক্সপো চেয়ারম্যান আবিদা মোস্তফা। বিজ্ঞপ্তি