সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা

9

চবি প্রতিনিধি

সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে জুবায়ের হোসেন নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। জুবায়ের হোসেন আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। গতকাল বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান শেখ মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
এদিকে মামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন সবুজ। তিনি বলেন, বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলার এজাহার দিয়েছেন। আমরা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো। এর আগে বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে জড়ো হয়ে আন্দোলন করেন একদল শিক্ষার্থী। এসময় তারা সিএনজি চালক কর্তৃক শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদ, ক্যাম্পাসে চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতের দাবি জানান। পরে আলোচনার জন্য আন্দোলনকারীদের প্রক্টর কার্যালয়ে ডাকেন সহকারী প্রক্টর হাসান মুহাম্মাদ রোমান শুভ। শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়া শোনার পর আন্দোলনকারী বাকি শিক্ষার্থীদের যেতে দিলেও জুবায়ের নামে ওই শিক্ষার্থীকে প্রক্টর অফিসে আটকে রাখা হয়। দীর্ঘ ১১ ঘণ্টা আটকে রেখে রাত দশটার দিকে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তর।
এদিকে জুবায়েরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জুবায়েরের নিকট থেকে একটি ডায়েরি জব্দ করা হয়েছে। সেখানে লিখা ছিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি ট্রেন শহরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। এর মধ্যে বটতলী ছাড়া কোনো স্টেশনে ট্রেনটি থামবে না। অপহরণ করা হবে ট্রেনের চালককে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগও করতে পারবে না ট্রেনচালক। এছাড়া তার মুঠোফোনে একাধিক ছবি পাওয়া যায়, যেখানে সরকারবিরোধী কার্যক্রমের প্রমাণ পাওয়া গেছে। মোবাইলের গ্যালারিতে একাধিক ছবিতে লিখা ছিল ‘সমাধান একটাই, শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দিতে হবে। হঠাও হাসিনা, বাঁচাও বাংলাদেশ’। এছাড়াও তিনি শিবিরের সাথে যুক্ত বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘সন্দেহ হওয়ায় আমরা হাটহাজারী থানা পুলিশকে খবর দিই। তারা এসে সবকিছু চেক করে তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পায় এবং তা মামলাযোগ্য অপরাধ বলে পুলিশ আমাদেরকে মামলা করার পরামর্শ দেন। এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় মামলা দায়ের করেন।’
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের প্রতিবাদ : মামলার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে এগারোটায় এ বিবৃতি প্রকাশ করে তারা। বিবৃতিতে সংগঠনটির আহবায়ক হাসান মন্জুর প্রভাত বলেন, একজন শিক্ষার্থীর মত প্রকাশ করার মৌলিক অধিকার রয়েছে। একই সাথে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংঘটিত করার অধিকারও শিক্ষার্থীদের আছে। আর সরকারের সমালোচনা মানে রাষ্ট্রদ্রোহী এই চিন্তাটাই সাংঘর্ষিক। রাষ্ট্রপ্রধান বিরোধী হলে রাষ্ট্রদ্রোহী হয়ে যায় না। শিক্ষার্থী এবং দেশের নাগরিক হিসেবে সরকারের নীতি বিরোধী কাজের সমালোচনা করার অধিকার সবার আছে। কিন্তু আমরা দেখলাম আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সম্পূর্ণ এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে আন্দোলন করার জন্য শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে গিয়ে দীর্ঘসময় আটকে রেখে তাদের হেনস্থা করেছে এবং মুঠোফোন ‘হঠাও হাসিনা বাঁচাও দেশ’ এই লেখা ছবি রাখার কারণে আইন বিভাগের জোবায়ের হোসেন সোহাগকে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছে। যা সম্পূর্ণ অন্যায় এবং অসাংবিধানিক। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর করতে পারে না। সরকারবিরোধী হলেই প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়ার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের না। আমরা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।