সচেতনতা-সতর্কতায়ও আক্রান্ত হচ্ছে যক্ষায়

13

নিজস্ব প্রতিবেদক

যক্ষা রোগ নিয়ে সচেতনতা ও সতর্কতা অব্যাহত আছে। এরপরও সংক্রমণ ঘটিত রোগটি এখনও দূর করা সম্ভব হয়নি। প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। নিরাময়যোগ্য রোগ হওয়ার পরও যক্ষার বিপদ দূর করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় রোগটি নিয়ে সচেতনাত গড়ে তুলতে প্রতিবছর ২৪ মার্চ পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব যক্ষা দিবস।
এবছর রমজানের কারণে দিবসটি একদিন আগে গতকাল পালন করা হয়েছে। ১৮৮২ সালের এই দিনে বিজ্ঞানী রবার্ট কোচ যক্ষার জন্য দায়ী মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস আবিষ্কার করেন। এ কারণে তিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এ দিনে বিশ্ব যক্ষা দিবস পালন করা হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- হ্যাঁ, আমরা যক্ষা নির্মূল করতে পারি।
গতবছর (২০২২ সাল) চট্টগ্রাম জেলায় মোট যক্ষা রোগী শনাক্ত হন ১৫ হাজার ৯৯১ জন। ক্যাটাগরি-১ যক্ষা রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৯৩৩ জন, পুনঃআক্রান্ত যক্ষা রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৮ জন, ফুসফুস আক্রান্ত যক্ষা রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ৫৪৫ জন, ফুসফুস বহির্ভূত যক্ষা রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৪৪৬ জন। শনাক্তকৃত রোগীরমধ্যে শিশু যক্ষা রোগীর সংখ্যা ৬৬৬ জন, চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে যক্ষা ও অন্যান্য কারণে মৃত্যু হয়েছে ১৬১ জনের। সন্দেহজনক রোগীর (যাদের দুই সপ্তাহের বেশি কাশি আছে) কফ পরীক্ষা করা হয় ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৪৮৯ জনের।
চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও উপ-পরিচালক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, টিউবারকুলোসিস (টিবি) বা যক্ষা শুধু ফুসফুসের ব্যাধি নয়। এটি বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক ব্যাধি, যেটা মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস জীবাণুর সংক্রমণে হয়ে থাকে। মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে ত্বক, অন্ত্র, লিভার, কিডনি ও হাড়সহ শরীরের যে কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে যক্ষার সংক্রমণ হতে পারে। যক্ষা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে। ফুসফুসে যক্ষার জীবাণু সংক্রমিত হলে টানা কয়েক সপ্তাহ কাশি ও কফের সাথে রক্ত যায়। আমাদের এমন কোনো অঙ্গ নেই যেখানে যক্ষা হয় না। তবে বর্তমান সময়ে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। যক্ষা হলে চিকিৎসার মাধ্যমে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
আক্রান্ত ব্যক্তি কাশি দিলে, হাঁচি দিলে বা থুতু ফেললে এই জীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে যায়। একটি আশঙ্কাজনক তথ্য হচ্ছে, বিশ্বের ৪ ভাগের ১ ভাগ মানুষের শরীরে যক্ষা রোগের জীবাণু সুপ্ত থাকে। তার মানে হল ওই মানুষগুলো জীবাণুতে আক্রান্ত। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা অসুস্থ হননি। এই আক্রান্তদের ৫-১৫% শতাংশ সারা জীবন ধরেই রোগের শিকার হবার আশঙ্কা থেকে যায়।
দুই সপ্তাহের বেশি কাশি, ওজন কমে যাওয়া, রাতে ঘাম হওয়া, দুর্বলতা সহ নানা লক্ষণ রয়েছে যক্ষার, এইসব লক্ষণ দেখা মাত্র নিকটতস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ বেসরকারি ব্র্যাক সংস্থা সহ অনেক জায়গায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পরীক্ষা করা হয়।
যারা এইচ আইভি আক্রান্ত, অপুষ্টিতে ভোগে, ডায়বেটিস রয়েছে তাদের যক্ষা রোগীর সংস্পর্শে আসলে অসুস্থ হবার সম্ভাবনা রয়েছে বেশি। থুতুর নমুনা অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা যক্ষার জীবানু রয়েছে কিনা পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া এক্সরে দ্বারা, জিন এক্সপার্ট মেশিন দিয়েও পরীক্ষা করা হয়।
জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির হিসাব অনুযায়ী, দেশে যক্ষা রোগে বছরে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। সে হিসেবে প্রতিদিন ১১০ জন রোগী মারা যান য²ায়।