সক্ষমতার নতুন মাত্রার অঙ্গীকার নিয়ে ১৩৩ বছরে পা দিল চট্টগ্রাম বন্দর

166

চট্টগ্রাম বন্দরের বয়স কত ? এমনটি প্রশ্নের সহজ উত্তর স্বয়ং বন্দর কর্তৃপক্ষই দিয়ে যাচ্ছে। ১৩২ বছর। ২৫ এপিল ২০১৯খ্রিস্টাব্দ ১৩৩ বছরে পা দিল মাত্র। অথচ ঐতিহাসিক ও ভূগোলবিদরা এ বন্দরের ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে আড়াই হাজার বছর আগেই এ বন্দরের অস্তিত্ব পেয়েছেন। কিন্তু প্রাচীন এ বন্দরকে আমাদের বন্দর কর্তৃপক্ষ ছোট করে একেবারে শতাধিক বছরে নিয়ে এসেছেন। অথচ ২০১৩ সালে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম পৌরসভার দেড়শ বছর পূর্তি হয়েছিল। সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ব্যাপক আয়োজনে তা পালন করেছিল। ব্রিটিশ উপনিবেশিক সরকার যে প্রাচীন বন্দরের লোভে এ চট্টগ্রামে এসে মিউনিসিপ্যাল্টি প্রতিষ্ঠা করেছিল সেখানে ব্রিটিশের সৃষ্টিতত্ত¡ দিয়ে আনন্দ-উৎসবে বন্দর দিবস পালন করছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ-যার যৌক্তিকতা নিয়ে সম্প্রতি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যে দেখা যায়, ব্রিটিশ শাসক ১৮৮৭ সালের ২৫ এপ্রিল ‘পোর্ট কমিশনারস অ্যাক্ট পাশ করে বন্দরে তাদের কর্তৃপক্ষ নিয়োগ এবং আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়। ধারণা করা হচ্ছে, এ দিনটিকেই ভুল করে খোদ বন্দরের জন্মদিন পালন করছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। আমরা মনে করি, এ দিনটি বন্দরের জন্মদিন পালন না করে বরং পার্ট কমিশনারস অ্যাক্ট প্রণয়ন দিবস পালন করাই শ্রেয় হতো। এতে আমাদের বন্দরের প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যে কালিমা রক্ষা পেত। এরপরও আমরা অভিনন্দন জানাই তারা একটি উপলক্ষকে সামনে রেখে বন্দর দিবস পালন করছেন। বন্দরকে নিয়ে কর্তৃপক্ষ নতুন নতুন যেসব পরিকল্পনা করছেন তা জনগণ জানতে পারছে। গত বুধবার বন্দর দিবস উপলক্ষে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ আগামীতে কন্দরের সক্ষমতা নিয়ে বলেছেন, ‘অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের বৈদেশিক বাণিজ্যের সিংভাগই সামাল দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। সক্ষমতা বৃদ্ধি, নতুন ধরনের পণ্য খালাসের সুবিধা প্রদান এবং পণ্য ওঠানামার সময় কমিয়ে সেবার দক্ষতা বৃদ্ধি করতে নতুন মাত্রায় গড়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বন্দর। এখন বন্দর বিগত দিনের চেয়ে অনেক বেশি কর্মক্ষম। আগামীতে বন্দর হতে যাচ্ছে আরও আকর্ষণীয় এবং সমৃদ্ধ।’
তাঁর ভাষায়, ২০১৭ সালে জাহাজের সর্বোচ্চ গড় অবস্থানকাল সাত থেকে আট দিন পর্যন্ত ছিল। বর্তমানে বন্দরে কি গ্যান্ট্রি ক্রেন সংযোজনের ফলে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে গতি বেড়েছে। একইসাথে ২০১৭ সালে ২০ ফুট দীর্ঘ ২৬ লাখ ৬৭ হাজার কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করলেও ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৯ লাখ ৩ হাজার। গড় প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশ। আর সাধারণ কার্গো ওঠানামা হয়েছে ৯ কোটি ৬৩ লাখ মে.টন। এই খাতে প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ১৩ শতাংশ। কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের এই পরিসংখ্যান চট্টগ্রাম বন্দরের ৩০ বছরের মেয়াদি প্রক্ষাপণকে ছাড়িয়ে গেছে।
এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার ইয়ার্ড ও ধারণ ক্ষমতা বেড়েছে। বর্তমানে বন্দরের ইয়ার্ডে ৫০ হাজারের বেশি কন্টেইনার রাখা সম্ভব হচ্ছে। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে বন্দর স¤প্রসারণের লক্ষ্যে বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল, লালদিয়া টার্মিনাল, কর্ণফুলী কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি মিরসরাই-সীতাকুন্ড-ফেনী নিয়ে দেশের বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরকে সহায়তা দিতে সীতাকুন্ডে আরেকটি টার্মিনাল নির্মাণের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ চলছে বলে জানান বন্দরের চেয়ারম্যান।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ‘গ্রিন পোর্ট’ ধারণা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে চট্টগ্রাম বন্দরও গ্রিন পোর্ট ধারণা গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে বন্দরের ইক্যুইপমেন্টগুলো ইউরোপীয় ইমিশন স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণে সংগ্রহ করা হচ্ছে। বন্দর জেটিতে অবস্থানরত সব জাহাজে সৌর পাওয়ার সরবরাহের পরিকল্পনা নিয়েছি। নতুন সব নির্মাণকাজে বিশেষ করে সব ইয়ার্ড ও জেটির ছাউনিতে সোলার প্যানেল বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ বন্দরকে দক্ষিণ এশিয়ার রিজিওনাল হাবে পরিণত করার স্বপ্নও সুদূর পরাহত নয়। বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কথাগুলো নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য আশাবাদের। বন্দর নিয়ে আমাদের গৌরব ও অহংকারের পাশাপাশি আশংকা ও হতাশার বিষয় হয়ে পড়ে যখন গণমাধ্যমে গ্যান্ট্রি ক্রেনের সংকট, কন্টেইনার ইয়ার্ড এ জট ও শ্রমিক অসন্তোষের কারণে বন্দরের অচল অবস্থার কথা শুনি। আমরা মনে করি, সম্প্রতি বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগগুলো যথাযত বাস্তবায়ন হলে চেয়াম্যানের সাথে আমরাও সহমত পোষণ করে বলতে পারি এ বন্দরকে দক্ষিণ এশিয়ার রিজিওনাল হাবে পরিণত করার স্বপ্ন মোটেই সুদূর পরাহত হবে না।