সকল শ্রেণিতে পুরোদমে ক্লাস শুরু

10

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা মহামারি কাটিয়ে ক্লাসে ফিরেছে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার সকাল থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সশরীরে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হতে দেখা যায়। এর মধ্য দিয়ে দেশের প্রায় ২১ লাখ শিক্ষার্থী মাধ্যমিক স্তর পেরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের আঙিনায় প্রবেশ করলো।
গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর সারাদেশে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। পরীক্ষায় গড় পাসের হার ছিল ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন শিক্ষার্থী।
এসএসসি ও সমমানে মোট ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেন ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৪৬ জন শিক্ষার্থী। চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কলেজে ভর্তি জন্য অনলাইনে আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয় গত ৮ জানুয়ারি। এ প্রক্রিয়া চলে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। ১৯ থেকে ২৪ ফেব্রæয়ারির মধ্যে সম্পন্ন হয় একাদশে শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া।
এদিকে করোনা মহামারির বিরূপ পরিস্থিতি কাটিয়ে প্রায় দেড় মাস পর গতকাল বুধবার সশরীরে ক্লাসে ফিরেছে প্রাথমিক স্তরের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। তবে সংক্রমণ পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসায় এখনই খুলছে না প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর আগে গত ২২ ফেব্রæয়ারি থেকে দেশের সব স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হয়েছিলো।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ওই বছরের ১৭ মার্চ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। ১৮ মাস পর গত বছর সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও এ বছরের শুরুতে করোনার সংক্রমণ বাড়ায় গত ২১ জানুয়ারি আবারও স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কোভিড মহামারির মধ্যে দ্বিতীয় দফায় প্রায় ছয় সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর প্রতিদিন ক্লাসের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নিয়মিত ক্লাসের মাধ্যমে তারা মহামারীর দুই বছরের শিখন ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আশা করছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২২ ফেব্রæয়ারি আবার সীমিত পরিসরে সরাসরি ক্লাস শুরু হলেও ক্ষুদেদের রাখা হয়েছিল অপেক্ষায়।
গতকাল বুধবার প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর মধ্য দিয়ে সেই অপেক্ষা ঘুচল। এখন থেকে প্রাথমিক স্তরে প্রতিদিনই ক্লাস হবে বলে আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে প্রথম দিন অনেক স্কুলে উপস্থিতি ছিল কিছুটা কম ছিলো। দীর্ঘ বিরতির পর বন্ধুদের কাছে পেয়ে তারা উল্লসিত ছিলো শিক্ষার্থীরা। ধীরে ধীরে উপস্থিতি বাড়ার আশা করছেন শিক্ষকরা। আবার অনেক স্কুলে শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে সব ক্লাস শুরু হবে। স্যানিটাইজারে হাত জীবাণুমুক্ত করে শিক্ষার্থীদের স্কুলে ঢোকার ব্যবস্থা করেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
অভিভাবকরা জানান, অনলাইনের পড়া তো আর বিকল্প হতে পারে না। আর ছোট বাচ্চারা তো আরও বুঝতে পারে না। এখন শিক্ষকরা নজর দিলে গ্যাপটা কমতে পারে।
এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আগামী ২০ মার্চ থেকে প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হবে। মহামারীর কারণে দুই বছর ধরে বন্ধ প্রাক-প্রাথমিকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান।
প্রথম শ্রেণির আগের এই শ্রেণিগুলোতে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তির কয়েক মাস পরই শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়। আবার অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে এই বন্ধ থাকা অবস্থায়ই। এই দুই বছর প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের কাছে ক্লাস মানেই ছিল মোবাইল ফোন কিংবা কম্পিউটার-ট্যাব, মানে ভার্চুয়াল ক্লাসের মাধ্যমেই তাদের শিক্ষাজীবন শুরু হয়। কোভিড-১৯ সংক্রমণ কমে আসায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় সীমিত পরিসরে খুললেও প্রাক প্রাথমিকে খোলেনি। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আবার জানুয়ারিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন সংক্রমণ আবার কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে সব ক্লাস খুলছে। সবশেষে প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদেরও ক্লাসে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল সরকার। এর ফলে স্কুলে ভর্তি হয়েও যারা শ্রেণিকক্ষ দেখেনি, তাদের সেই সুযোগ ঘটতে যাচ্ছে।
গতকাল বুধবার অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুটিনে প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ক্লাস ২০ মার্চ থেকে শুরু করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বাংলা, ইংরেজি ও গণিতে শিক্ষার্থীদের বিশেষ শিখন ঘাটতি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সহায়তামূলক শ্রেণি কার্যক্রমের মাধ্যমে তা পূরণ করতে বলা হয়েছে।