সংসদ সদস্য হওয়ার দৌঁড়ে এবার নারীরা

95

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। সরকারি গেজেটও প্রকাশ হয়েছে। শুরু হয়েছে উপজেলা নির্বাচনের তোড়জোড়। এরমধ্যেই সংরক্ষিত ৫০টি নারী আসনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।
গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে তফসিল ঘোষণা এবং ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দশম জাতীয় সংসদে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনজনকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য মনোনীত করা হয়। এবারো চট্টগ্রামের ডজনখানেক নারী নেত্রী সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রস্তুতির চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যেই সংরক্ষিত ৫০টি নারী আসনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। সংসদ সদস্যদের দলভিত্তিক ও ভোটভিত্তিক তালিকা প্রস্তুত করতে দলগুলোকে চিঠি পাঠানো হবে। গেজেট প্রকাশের এক মাসের মধ্যেই তফসিল ঘোষণা এবং সংরক্ষিত নারী আসনে প্রার্থী নির্বাচনের জন্য কে কোন দলে আছে তা ২১ কর্মদিবসের মধ্যে জমা দিতে হয়।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান জানান, ‘উপজেলা নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মন্ত্রীসভা গঠনের পরেই মার্চের মধ্যে সংরক্ষিত আসনের নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন সবগুলো বিষয় মাথায় রেখেই কাজ করছে। নিয়মমাফিক যে কোন সময়ে সংরক্ষিত আসনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে।’
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্য মনোনয়নের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। নিয়মানুযায়ী সংসদ প্রধান হিসেবে নিজের পছন্দেই নারী সংসদ সদস্য মনোনীত করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবারের মতো এবারো এই ধারায় মনোনয়ন পাবেন যোগ্য নারীরা। ভাগ্য যার দিকে সহায় হবে, তিনিই এবার সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হবেন।
চট্টগ্রামের নারী নেত্রীদের মধ্যে এবারো সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হতে পারেন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে ওয়াসিকা আয়েশা খান। গত সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন-৩১ এর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সংসদ সদস্য হিসেবে সরকারি ক্রয় ও হিসাব সংক্রান্ত দুই সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন উচ্চশিক্ষিত এই নারী। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত বরাদ্দের যথাযোগ্য ব্যবহার করেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজনে পরিণত হন। সাংগঠনিকভাবে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
দশম জাতীয় সংসদে আলোচনায় না থাকলেও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হয়ে চমক সৃষ্টি করেন ফিরোজা বেগম চিনু ও সাবিহা নাহার বেগম (সাবিহা মুছা)। ফিরোজা বেগম চিনু পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রথমবারের মতো মহিলা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সাবিহা মুছা নারী নেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী) আসন ছাড়া অন্য কোন আসনে পরিবর্তন আনেননি। যে কারণে এবারো ওয়াসিকা, চিনু ও সাবিহাকে রেখেই সংরক্ষিত আসনের কাঠামো সাজাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে পরিবর্তনের শঙ্কা থাকায় আরো কয়েকজন নারী নেত্রী ইতোমধ্যে দলীয় হাইকমান্ড ও জেলা পর্যায়ে তৎপরতা শুরু করেছেন।
নেতাকর্মীরা জানান, এবার সংরক্ষিত মহিলা আসনে ঠাঁই নিতে আলোচনায় আছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহ-সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা এড. কামরুন্নাহার বেগম, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হাসিনা মান্নান, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চেমন আরা তৈয়ব, সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা, কক্সবাজার মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরোয়ার কাবেরী, উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. বাসন্তী প্রভা পালিত, সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর রেহেনা কবির রানু, রেখা আলম চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খদিজাতুল আনোয়ার সনি। এরমধ্যে দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হাসিনা মান্নান ও বর্তমান সভাপতি চেমন আরা তৈয়ব সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী বেশি থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদেও বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে তিন থেকে চারজনের বেশি মহিলা সংসদ সদস্য দেয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে ৪৫টি নারী আসন ১০ বছরের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। এর আগে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ছিল ৩০টি। পরে নবম সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন করা হয়।