সংসদে কুইক রেন্টাল বিল পাস

18

পূর্বদেশ ডেস্ক

জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের সদস্যদের ঘোরতর আপত্তির মুখে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর জন্য করা বিশেষ আইনের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়িয়ে বিল পাস হয়েছে। সরকার বলছে, নিভর্রযোগ্য, নিরবচ্ছিন্ন ও সাশ্রয়ী বিদ্যুতের জন্য মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।
মেয়াদ বাড়ানোর বিরোধিতা করে বিরোধী দলের সদস্যরা বলেছেন, এ সরকারের আমলে যে কয়টি খাতে হরিলুট হয়েছে, তার মধ্যে বিদ্যুৎ খাত অন্যতম। এখানে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। ফলে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হলেও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কিছু মানুষকে সুবিধা দেওয়ার জন্য পাঁচ বছর মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। এটার প্রয়োজন নেই।
বিরোধী দলের সাংসদেরা বলেন, সরকারই দাবি করছে, এখন চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। তাহলে কেন আবার কুইক রেন্টালের মেয়াদ বাড়াতে হবে? জনগণের করের টাকা অন্যের হাতেতুলে দেওয়ার জন্য মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। অবশ্য এসব আপত্তি টেকেনি। কণ্ঠভোটে শেষ পর্যন্ত বিলটি পাস হয়েছে। ফলে আরও পাঁচ বছর কুইক রেন্টাল চালাতে আইনি বাধা থাকবে না।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বৃহস্পতিবার ‘বিদ্যুৎ ও জ্বলানির দ্রæত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) বিল-২০২১’ সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
এর আগে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনীর প্রস্তাবগুলোর ওপর আলোচনা শেষে স্পিকার তা নিষ্পত্তি করেন।
২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ সঙ্কট দ্রæত সমাধানের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি ভাড়া ও দ্রæত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়।
এসব ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বৈধতা দিতে ২০১০ সালে প্রণয়ন করা হয় ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রæত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন’। শুরুতে দুই বছরের জন্য এ আইন করা হলেও পরে কয়েক দফায় সময় বাড়ানো হয়।
২০১০ সালে প্রণীত আইনটির মেয়াদ সর্বশেষ তিন বছর বাড়িয়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত করা হয়েছিল। সেই মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ানোর প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর সংসদের সম্মতি নেওয়ার জন্য বুধবার এ বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন প্রতিমন্ত্রী।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আইনের মেয়াদ বাড়ানোর পর ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ‘স্ট্যান্ডবাই’ হিসেবে রাখা হবে। তবে মেয়াদ বাড়ার পর এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে কীভাবে বিদ্যুৎ কেনা হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ অবশ্য বলেছেন, এই কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কিনলে টাকা দেওয়া হবে, না কিনলে দেওয়া হবে না, এভাবেই চলবে।
বিলটি সংশোধনের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে তিনি সংসদে বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা-২০০৮ অনুযায়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস হতে দেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ১০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার লক্ষ্যে এ খাতে দ্রæত অধিক সংখ্যক প্রকল্প গ্রহণ করা প্রয়োজন।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্য আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চলমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখা অপরিহার্য।
বিলটি পাসের জন্য তোলার পর এর বিরোধিতা করে বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, আরও পাঁচ বছর কেন বাড়ানো হচ্ছে? আমরা শতভাগ বিদ্যুতের কথা বলছি। রূপপুর, মাতারবাড়িতে বড় প্রকল্প করছি। ঋণের বোঝা বাড়ছে। এভাবে চললে দেশ দেউলিয়া হয়ে যাবে।
এই আইন করে আমরা অনিয়ম-দুর্নীতির বৈধতা দিচ্ছি। বিশেষ বিধান রাষ্ট্রের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে করা হয়েছে। সন্ত্রাস দমনসহ বিভিন্ন সময় করা হয়েছে। কিন্তু বিশেষ বিধান কেন ১৬ বছর ধরে চলবে। বিশেষ বিধান সাময়িক সময়ের জন্য করলেন। আজকে কেন আবার পাঁচ বছর? সর্বোচ্চ এই বছরের মধ্যে কাজ শেষ করেন। এছাড়া ঘোর আপত্তি থাকবে।
গণ ফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, এই আইন একটি জঘন্য কালো আইন। এখানে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে। তড়িঘড়ি করে করা হচ্ছে। জনগণের টাকা অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য এই আইন করা হয়েছে।
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু নিজের এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এলাকায় বিদ্যুৎ পাই না। চৈত্র, বৈশাখ, ভাদ্র মাসে মানুষ ঘুমাতে পারে না। এলাকায় ৪-৫ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকে না। জোরে বৃষ্টি হলে বিদ্যুৎ যায়। বাতাস হলে বিদ্যুৎ যায়। আমাদের বাঁচান। আইনের এক্সটেনশন দরকার নেই। বিদ্যুৎ দেন।
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, এলাকায় বিদ্যুৎ আসে না যায় বোঝা যায় না। আমাদের জবাবদিহি করতে হচ্ছে। আপনি অল্প জনবল দিয়ে সেবা দিচ্ছেন। একটা লাইন দিয়ে ৬০-৭০ কিলোমিটার লাইন চালাচ্ছেন। আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ চাই না। আগের অবস্থায় ফিরতে চাই।