সংরক্ষিত আসনের নির্বাচন যে প্রক্রিয়ায়

66

আইন অনুযায়ী সাধারণ নির্বাচনের ফলের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। গত ১ জানুয়ারি গেজেট হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের। এ হিসাবে আগামী ১ এপ্রিলের মধ্যে সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের ভোট করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)।
জানা গেছে, আগামী মার্চের মধ্যে ভোট করার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। অবশ্য সংসদ সদস্যদের ভোটে অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনে ভোটগ্রহণের নজির এখন পর্যন্ত নেই।
সংবিধান অনুসারে বর্তমানে ৫০ টি সংরক্ষিত মহিলা আসন রয়েছে। সংসদের আসনের সংখ্যানুপাতে নির্ধারিত এই মহিলা আসনে রাজনৈতিক দল বা জোটগুলো তাদের নির্ধারিত আসনের জন্য একক প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ায় তারা বিনা ভোটে নির্বাচিত হন।
জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনের মতো সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার প্রয়োজন পড়লেও ভোটার ও আসনবণ্টনসহ কমিশনকে এই নির্বাচনের নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এ বিষয়টি জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন আইনে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। খবর বাংলাট্রিবিউনের
এই আইন অনুযায়ী নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে যারা শপথ গ্রহণ করেছেন তাদের তথ্য তিন কার্যদিবসের মধ্যে সংসদ সচিবালয়ে নির্বাচন কমিশনে পাঠাবে। আর নির্বাচিতদের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের পরবর্তী ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে দল বা জোটগুলো বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের জোটের অবস্থান নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে। এদিকে গেজেট হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচনের উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশন সাধারণ আসনে নির্বাচিত সদস্যদের রাজনৈতিক দল বা জোটওয়ারী সদস্যদের পৃথক পৃথক তালিকা প্রস্তুত করবে। সে অনুযায়ী একাদশ সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠানে আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে দলগুলোকে ইসিতে জোটের তথ্য এবং ইসিকে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তালিকা প্রস্তুত করবে।
তালিকা প্রস্তুতের পরের কার্যদিবসে অর্থাৎ ১৩ ফেব্রুয়ারি সেই তালিকা নির্বাচন কমিশনে প্রকাশ্য কোনও স্থানে টাঙিয়ে দেওয়া হবে। একইসঙ্গে সংসদ সচিবালয়কে সেই তালিকার প্রত্যায়িত কপি পাঠিয়ে তা টাঙানোর জন্য বলবে। নির্বাচনের আগে সেই তালিকার আর কোনও পরিবর্তন করা যাবে না। তবে কোনও করণিক ভুল হলে নির্বাচন কমিশন তা সংশোধন করতে পারবে।
আসনবণ্টন বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্যদের জন্য কোনও নির্ধারিত নির্বাচনি এলাকা নেই। তারা কেবল দলীয় বা জোটের সদস্য হিসেবে পরিচিত হবে। এক্ষেত্রে দল বা জোটের প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে মহিলা আসন বণ্টিত হবে।
সংবিধান অনুসারে বর্তমানে সংরক্ষিত মহিলা আসন সংখ্যা ৫০। এই ৫০ সংখ্যাকে ৩০০ (দেশের নির্বাচনি এলাকা) দিয়ে ভাগ করলে যে ভাগফল পাওয়া যাবে তাকে কোনও দল বা জোটের যে সংখ্যক সদস্য শপথ নিয়েছেন তা দিয়ে গুণ করলে যে ফল পাওয়া যাবে, সেই সংখ্যক মহিলা সদস্য হবে ওই দল বা জোটের। গুণফল ভগ্নাংশ হলে সেক্ষেত্রে শূন্য দশমিক ৫ বা তার থেকে বেশি সংখ্যকের জন্য একটি আসন পাওয়া যাবে। অবশ্য এক্ষেত্রে বণ্টিত আসন সংখ্যা মোট আসনের থেকে বেড়ে গেলে ভগ্নাংশের হিসাবে হেরফের হতে পারে। আইনে কোনও কোনও ক্ষেত্রে লটারির বিধানও রয়েছে।
উহাদরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, এবার জাতীয় পার্টি সংসদে ২২ টি আসন পেয়েছে। এই হিসাবে এ দলটির ৪ টি সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পাওয়ার কথা। ৫০৩০০= ০.১৬৬৭। এরপর ২২০.১৬৬৭= ৩.৬৭।
এই হিসাবে আওয়ামী লীগ এককভাবে ৪৩ জন মহিলা সংসদ সদস্য পাওয়ার কথা। অবশ্য অন্য কোনও দল বা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হলে এই সংখ্যা বেড়ে যাবে।
এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের মিত্র গণফোরাম ৮ টি আসনে বিজয়ী হয়ে সংরক্ষিত আসনে একজন মহিলা সংসদ সদস্য পাওয়ার কথা। তবে, এই দলটির সদস্যরা এখনও শপথ গ্রহণ না করায় তাদের ক্ষেত্রে আপাতত এটি প্রযোজ্য হবে না। এক্ষেত্রে আসনবণ্টনে বিএনপি যে সংখ্যক মহিলা সদস্য পাওয়ার কথা, সেগুলো বাদ রেখে অন্যগুলোতে ভোট হবে।
আইন অনুযায়ী শপথ নেওয়া সংসদ সদস্যরাই সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনে ভোটার হবেন এবং এই ভোটাররা কেবল নিজেদের দলের প্রাপ্ত আনুপাতিক আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনের জন্য ভোট দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে বণ্টিত আসনে একক প্রার্থী হলে ভোটগ্রহণের প্রয়োজন পড়বে না। কিন্তু বণ্টিত আসনের তুলনায় ওই দল বা জোটের প্রার্থী বেশি হলে ভোট নিতে হবে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া প্রার্থীরাই নির্বাচিত বলে গণ্য হবেন। অবশ্য এমন ভোটের নজির এখনও দেখা যায়নি।
তফসিল জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন আইন-২০০৪ অনুযায়ী, সাধারণ নির্বাচনের মতো সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করতে হয়। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কোনও কর্মকর্তা রিটার্নিং অফিসার নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। নির্বাচন কমিশন জোটের তালিকা প্রকাশ্যে টানানোর পর এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ করবে। একইসঙ্গে মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই ও ভোটের দিন ঘোষণা করবে। এছাড়া ভোটগ্রহণের স্থান নির্ধারণ করবে। ভোটের প্রয়োজন পড়লে সংসদ ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে বলে জানান নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহম্মদ খান।
তবে এ নির্বাচনের জন্য অধিবেশনের প্রয়োজন নেই। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য সংসদ অধিবেশন চলমান থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে তা নেই। অধিবেশন চলুক বা না চলুক কোনও সমস্যা নেই। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সংসদ অধিবেশন কক্ষে অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও সংরক্ষিত আসনের ভোট অধিবেশন কক্ষের বাইরে সংসদ সচিবালয়ের যেকোনও স্থানে হতে পারে।
এদিকে কোনও দল বা জোট যদি তাদের প্রাপ্য মহিলা সংসদ সদস্যপদে প্রার্থী না দেয় বা প্রাপ্য আসনের তুলনায় কম দেয় সেক্ষেত্রে ওই আসনগুলোতে সরাসরি ভোটের প্রয়োজন পড়বে। তবে এ ক্ষেত্রে দলভিত্তিক কোনও বণ্টন হবে না। সব দল বা জোট প্রার্থী দিতে পারবে।
গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ১ জানুয়ারি নবনির্বাচিতদের গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে ইসি। এতে ২৯৮ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির নাম ঠিকানাসহ প্রকাশ করা হয়। এরপর ৩ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ২৮৮ জন ও ৫ জানুয়ারি ২ জন সদস্য শপথ নেন। বিএনপির ৫ জন ও গণফোরামের ২ জন এখনও শপথ নেননি। অন্যদিকে কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শপথ নেওয়ার জন্য সময় চাইলেও তিনি ৩ জানুয়ারি রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে অনিয়মের কারণে স্থগিত তিন কেন্দ্রে ৯ জানুয়ারি ভোট নেওয়া শেষে ধানের শীষের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।
অন্যদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৩ আসনের এক প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় সেখানে আগামী ২৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ করা হবে। সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে একটি আসন শূন্য হওয়ার প্রেক্ষাপটে বর্তমানে ২৯৮ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৫৬ টি আসন, জাতীয় পার্টি ২২ টি আসন, বিকল্পধারা বাংলাদেশ ২ টি আসন, ওয়ার্কার্স পার্টি ৩ টি আসন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ ২ টি আসন, জাতীয় পার্টি- জেপি একটি আসন এবং বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন একটি আসন পেয়েছে। মহাজোট মোট ২৮৮ টি আসন পেয়েছিল, তবে বর্তমানে এই সংখ্যা ২৮৭। অন্যদিকে বিএনপি ৬ টি ও গণফোরাম ২ টি আসন পেয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মোট ৮ টি আসন পেয়েছে। আর স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তিন প্রার্থী।