‘সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা’ সূচকে বাংলাদেশের অবনমন

5

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে গত এক বছরে বাংলাদেশের অবস্থান আরও এক ধাপ পিছিয়েছে। প্যারিসভিত্তিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের করা এই বার্ষিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৮০ দেশের মধ্যে ১৫২তম। ২০২১ সালের ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স’ বলছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের অধিকারের প্রশ্নে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে পিছিয়ে।
সাতটি মাপকাঠিতে বিচার করে একটি দেশের সংবাদমাধ্যম কতটা স্বাধীনতা ভোগ করছে তা বোঝার চেষ্টা করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস। এই সাতটি মাপকাঠি হল- সংবাদমাধ্যমে বহু মতের প্রকাশ, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ, পরিবেশ ও স্ব-আরোপিত সেন্সরশিপ, আইনি কাঠামো, সংবাদমাধ্যমের কাজে স্বচ্ছতা, অবকাঠামো, সংবাদকর্মীদের ওপর নিপীড়ন।
সবগুলো মাপকাঠির স্কোরের গড় করে তৈরি করা হয় একটি দেশের গ্লোবাল স্কোর। ১০০ পয়েন্টের এই সূচকে যে দেশের স্কোর যত কম, সে দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা তত বেশি বলে ধরা হয়।
এ বছরের সূচকে ১৫২তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের স্কোর দেখানো হয়েছে ১০০ এর মধ্যে ৪৯ দশমিক ৭১। গতবছর বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৪৯ দশমিক ৩৭, আর বিশ্বে অবস্থান ছিল ১৫১ নম্বরে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ২০০২ সালে ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স’ প্রকাশ শুরু করার পর ২০১৩ সালে প্রথম বাংলাদেশকে যুক্ত করা হয়। তখন থেকে ছয় বছর বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৪ থেকে ১৪৬ এর মধ্যে ঘোরাফেরা করলেও ২০১৯ সালের সূচকে তা এক ধাক্কায় ১৫০তম অবস্থানে নেমে আসে। এর পরের দুই বছরে আরও এক ধাপ করে পিছিয়েছে বাংলাদেশ।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের বিচারে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশেই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সবচেয়ে কম, এমনকি মিয়ানমারও এই সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের এই প্রতিবেদনের মুক্ত সাংবাদিকতার মানচিত্রে সার্বিক পরিস্থিতি ও স্কোরের বিচারে ১৮০টি দেশকে ভালো, সন্তোষজনক, সমস্যাসঙ্কুল, কঠিন পরিস্থিতি ও গুরুতর- এই পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বাংলাদেশকে রাখা হয়েছে সাংবাদিকতার জন্য ‘কঠিন পরিস্থিতির’ দেশের ভাগে।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে করোনা ভাইরাস সঙ্কট এবং লকডাউনের সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের মধ্যে সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। মহামারি এবং সমাজে তার প্রভাব নিয়ে প্রতিবেদনের জন্য সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে।
প্রতিবেদনে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কথাও বলা হয়েছে, এ আইনকে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস বর্ণনা করেছে সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের ‘একটি বিচারিক হাতিয়ার’ হিসেবে।
সংগঠনটি বলছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সর্বোচ্চ সাজা ১৪ বছরের কারাদন্ড। ফলে সেলফ-সেন্সরশিপ এখন ‘অভূতপূর্ব পর্যায়ে’ পৌঁছেছে। যৌক্তিক কারণেই সম্পাদকরা ‘জেলে যাবার অথবা সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি’ নিতে চাইছেন না।
এবারের প্রতিবেদনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরও সমালোচনা করা হয়েছে, বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে পুনর্র্নিবাচিত হওয়ার পর থেকে সরকার গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ‘কঠোর অবস্থান’ নিয়েছে। সাংবাদিকরা দলীয় নেতা-কর্মীদের সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। তাদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নিউজ সাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যে সাংবাদিকরা দুর্নীতি বা স্থানীয় অপরাধী চক্রের বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধান করেছেন, তাদের অনেকে বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাতে মৃত্যুও ঘটেছে’। খবর বিডিনিউজের
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের পর্যবেক্ষণ এবং সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে সরকারের প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব হয়নি। তবে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বরাবরই দাবি করে আসছেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম অনেক দেশের তুলনায় অনেক বেশি ‘স্বাধীনতা’ ভোগ করে।