সংবাদমাধ্যমকে বাম নেতারা বারবার ছাত্র ইউনিয়নের উপর হামলা, ক্ষুব্ধ বাম জোট নেতারা

14

নিজস্ব প্রতিবেদক
সমাবেশে বার বার হামলায় ক্ষুব্ধ বাম নেতারা। তারা জানান, ‘সরকারের সমালোচনা একজন নাগরিকের অধিকার। সরকারের কাজের কিংবা দলীয় প্রধানকে নিয়ে কোনো সমালোচনা হলেই তাকে কটুক্তি বলে হামলা চালানো হয়।এ এই হামলা প্রমাণ করে, সরকারের সমালোচনা সহ্য করার মতন গণতান্ত্রিক চরিত্র নেই। সরকারের দলীয় ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের অসভ্যতা, গুÐামিকে আর বিনা চ্যালেঞ্জে ছাড় দেওয়া হবে না’ বলেও জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা।
নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিসহ নানান দাবিতে আন্দোলনরত বাম সংগঠনগুলোর উপর হামলার প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমকে তারা এসব কথা বলেন।
ঘটনার সূত্রপাত বোয়ালখালী উপজেলার স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ থেকে। গত শনিবার স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে ছাত্র ইউনিয়ন সমাবেশ করলে এতে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা হামলা করে। যদিও এটি সরকার বা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কোনো কর্মসূচি ছিলনা। এরপর শনিবার সন্ধ্যায় সেই হামলার প্রতিবাদ করতে গিয়ে চট্টগ্রাম শহরে ছাত্র ইউনিয়ন ও যুব ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের আরেকদফা হামলার শিকার হয়। বিনা উসকানিতে ছাত্রলীগের গুÐারা লাঠি, হকিস্টিক, লোহার রড নিয়ে হামলা করে। তাদের হামলা থেকে রেহাই পায়নি প্রতিবন্ধী ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী অরিত্রও। নারী কর্মীদের গায়েও তারা হাত তুলেছে। এ ঘটনায় আহত হন দৈনিক ভোরের কাগজ চট্টগ্রাম ব্যুরোর সাংবাদিক প্রীতম দাশসহ ১০-১২ জন। এসব ঘটনার প্রতিবাদে গত রবিবার বাম জোটের নগরীর প্রতিবাদ মিছিল করেন। এ সময় তারা এসব ঘটনার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা সিপিবির সভাপতি অশোক সাহা জানান, হামলার সময় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা বলেছে- সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলায়, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কথা বলায় নাকি তারা হামলা করেছে। আমরা বলতে চাই, সরকারের বিরুদ্ধে কথা, সরকারের সমালোচনা করা প্রত্যেক নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার। আমরা দেখতে পাচ্ছি, যতই দিন যাচ্ছে, সরকার আরও বেশি কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠছে। এ কারণে যারা সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের পক্ষে ন্যায্য কথা বলে তাদের কণ্ঠরোধ করার জন্য ছাত্রলীগের গুÐাদের মাঠে নামিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, গুÐামি করে, অসভ্যতা করে, হামলা-নির্যাতন চালিয়ে বাম প্রগতিশীল শক্তির কণ্ঠরোধ করা যাবে না। আমরা সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে কথা বলে যাব। আমরা লুটপাটের বিরুদ্ধে, সা¤প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জারি রাখব।
এসব হামলার প্রতিক্রিয়ায় বাসদ চট্টগ্রাম জেলা ইনচার্জ আল কাদেরী জয় জানান, এই হামলা প্রমাণ করে, সরকারের সমালোচনা সহ্য করার মতন গণতান্ত্রিক চরিত্র নেই। সরকার কাজের কিংবা দলীয় প্রধানকে নিয়ে কোনো সমালোচনা হলেই তাকে কটুক্তি বলে হামলা চালোনো হয়।এভাবে স্বৈরাচারী দমনপীড়নের রাস্তায় সরকার ও তার নেতাকর্মীদের কর্মকান্ড আরো গণবিক্ষোভ হয়ে উঠছে।
চট্টগ্রামের বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা সফি উদ্দিন কবির আবিদ বলেন, ছাত্রলীগের চরিত্র এখন আর ছাত্র সংগঠনের চরিত্র নেই। বর্তমানে যে সরকার ক্ষমতায় আছে, তারা কর্তৃত্ববাদী, স্বৈরতান্ত্রিক, ফ্যাসিস্ট আচরণের সরকার। ছাত্রলীগ এই ফ্যাসিস্ট সরকারের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। ছাত্রলীগ সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে বাম সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে আসছে। সামনে হয়ত আরও কঠিন সময় আসছে, ছাত্রলীগ আরও বেপরোয়া আচরণ করতে পারে, সরকার আরও বেশি কর্তৃত্ববাদী আচরণ করতে পারে। আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, ছাত্রলীগের অসভ্যতাকে আর ছাড় দেয়া হবে না। এখন থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য বাম নেতাকর্মীদের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে।