সংঘাত-সংশয়ের মাঝেও প্রচারণায় ‘গতি’

31

 

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রচারণার বাকি চার দিন। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে তত জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা। এর মধ্যে সংঘাত সংশয়ও ভর করছে ভোটের মাঠে। গত দুইদিনের ঘটনা সেটাই বলছে। নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ২৩৬ জন প্রার্থী। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রার্থীরা ঘরোয়া পরিবেশে প্রচারণা চালালেও দুপুরের পরপরই নেমে পড়ছেন প্রচারণায়। তবে সংঘাত-সংশয় যেন পিছু নিয়েছে এবারের নির্বাচনে। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও সংঘাতে জড়াচ্ছেন প্রার্থীর সমর্থকরা। ইতোমধ্যে নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে দুইজন। যে কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে সংশয়ও আছে। তবে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দেয়ার কথাই বারবার বলছেন নির্বাচন সংশ্লিস্টরা।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান পূর্বদেশকে বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ এখনো পর্যন্ত ভালো আছে। ছোটখাট কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও সেগুলো আমরা তদন্ত করেছি। প্রতিদিন যেসব অভিযোগ পাচ্ছি তা সাথে সাথে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছি পুলিশকে। কঠোর অবস্থানে আছি আমরা। প্রার্থীদেরকে আচরণবিধি মেনেই প্রচার-প্রচারণা চালাতে বলেছি। এছাড়াও আচরণবিধি নিয়ন্ত্রণে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে আছেন।’
সরেজমিনে কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, ভোটারদের মনজয় করতে প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। প্রার্থীদের প্রচারণার ব্যানার- পোস্টারে ছেয়ে গেছে নির্বাচনী এলাকা। কোনো কোনো প্রার্থী প্রচারগাড়িতে মাইক বেঁধে গানের সুরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচনের শেষ সময় পর্যন্ত প্রচারণায় নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত রাখতে চান মাঠে থাকা প্রার্থীরা। উঠান বৈঠক, গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ ও মিছিলে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। নির্বাচন কেন্দ্রিক আলোচনায় মশগুল ভোটাররা। মেয়র কিংবা কাউন্সিলর পদে কোন প্রার্থী জয়ী হবেন তা যেন আগেভাগেই নিশ্চিত হয়ে গেছেন ভোটাররা। একেক ভোটার একেক প্রার্থীর পক্ষেই সাফাই গাইছেন। প্রার্থীদের আচরণ নিয়ে ইতিবাচক নেতিবাচক আলোচনাও উঠে আসছে ভোটারদের আলোচনায়। ভোটাররা এমন আয়েশি ভঙ্গিতে থাকলেও প্রার্থীদের ঘুম হারাম। প্রচারণাতেই দিন পার করছেন প্রার্থীরা। আবার কোন কোন প্রার্থী প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে ঘায়েল করতে নানারকম কৌশল অবলম্বন করছেন। মামলা, হামলা, অভিযোগ পাল্টা অভিযোগেও প্রতিদ্ব›দ্বীকে টেক্কা দিতে চাইছেন প্রার্থীরা। তা নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বাড়ছে সহিংসতার প্রভাব। প্রতিদিন কোন না কোন স্থানে ঘটছে প্রচার কেন্দ্রিক সংঘাত। প্রতিপক্ষের পোস্টার-ব্যানার ছেঁড়া, নির্বাচনী অফিস ভাংচুরের মতো ঘটনাও ঘটছে। যেখানেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছে সেখানেই সংঘাতের শঙ্কা বেশি।
৩৯নং হালিশহর এলাকার ভোটার হাফেজ আবদুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ভোটের পরিস্থিতি এখানে শান্ত। বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয় প্রার্থীরা এখানে শান্তিপূর্ণভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রচারণাকালে তারা ভোটারদের দাবি-দাওয়ার কথাও শুনছেন। তবে প্রচারণায় বিএনপি প্রার্থীদের চেয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীই বেশি এগিয়ে আছেন।
দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে ভোটার সজল বিশ্বাস বলেন, দক্ষিণ কাট্টলীতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় প্রচারণা জমেছে। দুই প্রার্থীই নিজেদের পাশাপাশি নৌকা প্রতীকের জন্য ভোট চাইছেন। তবে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় এখানে সংঘাতের আশঙ্কা আছে। নির্বাচনী পরিবেশ অশান্ত হলে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে নাও যেতে পারে।
পাঁচলাইশ এলাকার ভোটার আরিফুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, পাঁচলাইশ ওয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী প্রচারণায় আছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বিদ্রোহী দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এখানে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারাও দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। যে কারণে তিনটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের দিন মারামারি হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেলে এখানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে।
প্রচারণায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি :
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বড় দুই দলই মেয়রসহ কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থী দিয়েছেন। নির্বাচনে অংশ নেয়া ২৩৬জন প্রার্থীর মধ্যে এই দুই দলের দলীয় সমর্থন পেয়েছেন দুইজন মেয়র ও ১১০জন কাউন্সিলর প্রার্থী। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয় দুই প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী ও ডা. শাহাদাত হোসেন প্রতিদিন তিনটি করে ওয়ার্ডে প্রচারণা চালাচ্ছেন। মেয়র প্রার্থীদের প্রচারণায় সামিল হচ্ছেন সাধারণ ও সংরক্ষিত দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। দলীয় সমর্থন পাওয়া কাউন্সিলর প্রার্থীরা গণসংযোগ করতে গিয়ে নিজের প্রতীকের পাশাপাশি নৌকা কিংবা ধানের শীষ প্রতীকেও একত্রে ভোট চাইছেন। মেয়র পদে প্রচারণাকালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন। নানা উন্নয়ন প্রতিশ্রæতি দিয়েও ভোটারদের মনজয় করতে চাইছেন। দুই প্রার্থীই ভোটারদের অবস্থান তুলে ধরে নির্বাচনী ইশতিহার তৈরির কাজও করছেন। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে বড় দলের দুই প্রার্থীই নির্বাচনী ইশতিহার ঘোষনা করবেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয় দুই মেয়র প্রার্থীর পক্ষেই সিনিয়র নেতারা প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। প্রার্থী ছাড়াও পৃথকভাবে নগরজুড়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। হাতে লিফলেট নিয়ে মাইকিং করেই নৌকা ও ধানের শীষে ভোট প্রার্থনা করছেন প্রার্থীর সমর্থকরা। শেষ সময়ের প্রচারণায় নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতেই মরিয়া হয়ে উঠেছেন প্রার্থীরা।