সংঘাতপ্রবণ দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চমেক ও চবি

15

চবি প্রতিনিধি

বন্দর নগরীর দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে (চমেক) কয়েকদিন পর পর সংঘর্ষে জড়াচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। এতে প্রতিষ্ঠান দুটিতে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরনের অস্থিরতা। নগর আওয়ামী লীগের বড় দুই নেতার দ্ব›দ্ব, আধিপত্য বিস্তার, গ্রুপিং এবং হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠান দুটিতে এমন অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, নগর আওয়ামী লীগ বৃহৎ দুটি ধারায় বিভক্ত। একটি পক্ষ মহানগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী এবং অপরপক্ষ সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী। আবার মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর গ্রুপটি নিয়ন্ত্রণ করছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। নগর আওয়ামী লীগের এ দুটি ধারার প্রভাব পড়েছে ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের উপর।
দীর্ঘদিন ধরে চমেকে এককভাবে আধিপত্য বিস্তার করে আসছিল আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী ছাত্রলীগের গ্রুপ। তিনি চমেক হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিও ছিলেন দীর্ঘদিন। গত বছরের ২০ আগস্ট এ পদে আসেন ব্যারিস্টার নওফেল। সে থেকে ধাপে ধাপে চমেক ক্যাম্পাসে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করে নওফেল গ্রুপ। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক পর্যায়ে উভয় গ্রুপ সংঘর্ষে জড়ায়। ছোটোখাটো সংঘর্ষের পর গত ২৭ এপ্রিল সিএমসি ক্যান্টিনে এক ছাত্রলীগ নেতাকে কটূক্তির ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে বড় সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হন। এ ঘটনার পর পাঁচলাইশ থানায় উভয় গ্রুপ পাল্টাপাল্টি মামলা করেন। একই সঙ্গে চমেক হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ধর্মঘট ডাকেন। পরে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
সর্বশেষ গত শুক্রবার দিবাগত রাত ও গতকাল শনিবার উভয় গ্রুপের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে গতকাল শনিবার জরুরি বৈঠকে বসে প্রশাসন। বৈঠক শেষে মেডিক্যাল কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং আবাসিক শিক্ষার্থীদের শনিবার সন্ধ্যার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
চমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আকতার বলেন, শুক্রবার ও শনিবার সংঘর্ষের ঘটনার পর পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নগর পুলিশ উত্তর জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোখলেছুর রহমান বলেন, চমেক ক্যাম্পাসে আসলে ছোটোখাটো বিষয়ে সংঘর্ষ হচ্ছে। এসব ঘটনায় কলেজ প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছেন। পাশাপাশি আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে আইনগত পদক্ষেপ নিচ্ছি। এর আগের ঘটনায় কয়েকটি মামলা হয়েছে। শুক্রবার ও শনিবারের ঘটনায়ও অভিযোগ সাপেক্ষে মামলা হবে।
এদিকে চবি ছাত্রলীগও দীর্ঘদিন ধরে দুটি ধারায় বিভক্ত। অঘোষিতভাবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ইউনিটটিতে কমিটি ঘোষণার সময় এক গ্রুপের অনুসারীকে সভাপতি এবং অন্য গ্রুপের অনুসারীকে সাধারণ সম্পাদক করে থাকেন। বর্তমান সভাপতি রেজাউল হক রুবেল হচ্ছেন নওফেলের এবং সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু হচ্ছেন নাছিরের অনুসারী। এর আগের কমিটিতে নাছির গ্রুপের আলমগীর টিপু সভাপতি এবং নওফেল গ্রুপের ফজলে রাব্বি সুজন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
তবে চবিতে বৃহৎ এ দুটি ধারার পাশাপাশি ছাত্রলীগে একাধিক উপগ্রুপও রয়েছে। এদের মধ্যে সামান্য কথা কাটাকাটি, হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন পর পর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে গ্রুপ-উপগ্রুপগুলো।
সর্বশেষ গত ১৪ এবং ১৫ অক্টোবর দুই দফায় সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগের নাছির-নওফেল গ্রুপ। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হন। ঘটনার পর সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্য যাচাই-বাছাই করে ১২ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করে প্রশাসন। তাদের মধ্যে দুজনকে এক বছর করে ও বাকিদের ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
চবি-চমেক ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং ও সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।