সংগ্রাম পরিষদ গঠনের পর ভাষা আন্দোলন গতিলাভ করে

12

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারত ভাগের পর পাকিস্তান সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শহরের অন্যান্য কলেজ, কয়েন, স্ট্যাম্প এবং নৌবাহিনীর নিয়োগ পরীক্ষাসহ সরকারি সকল কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর প্রতিবাদে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ঢাকায় সাধারণ ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হয়। ধর্মঘট থেকে পাকিস্তানের অঙ্গরাজ্য পূর্ব পাকিস্তানে সরকারিভাবে বাংলা ভাষা ঘোষণা করার দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
ধর্মঘট থেকে শামসুল হক, শওকত আলী, কাজী গোলাম মাহবুব, অলি আহাদ, আব্দুল ওয়াহেদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় মোহাম্মদ তোয়াহা নামে এক ছাত্রনেতা পুলিশের এক অফিসার থেকে একটি রাইফেল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে বেধড়ক পেটায়। গুরুতর আহতবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বেশ ক’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের বর্বরতা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রাজপথে মিছিল বের করে ছাত্রনেতারা। আব্দুল মতিন ও আবদুল মালেক উকিল মিছিলে নেতৃত্ব দেয়। ছাত্ররা মিছিল নিয়ে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের বাড়ির দিকে যেতে চাইলে পুলিশ থামিয়ে দেয়।
একটি নিয়মানুগ রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যে ভাষা চালু করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা পরে একটি সংগ্রাম কাউন্সিল গঠন করে। আব্দুল মতিন পরিষদের আহব্বায়ক নির্বাচিত হন। এই পরিষদের ব্যানারে তিনটি ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা সংগঠিত হতে থাকে।
প্রকৃতপক্ষে, সংগ্রাম পরিষদ গঠনের পর থেকেই বাংলা ভাষার দাবি আদায়ের আন্দোলন ব্যাপকভিত্তিতে গতিলাভ করে। চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে ভাষা আন্দোলনের দ্রোহী চেতনা। যা পরবর্তীতে রূপ নেয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় উজ্জীবিত হতে থাকে তরুণ ছাত্র-যুবরা। মাতৃভাষার অধিকারের চেতনার অগ্নিমশাল জ্বলে ওঠে দিকে দিকে।