সংক্রমণ কমেছে বলে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই : সিভিল সার্জন

20

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ এখন গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। মৃত্যুহারও কমছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সবকিছুই খুলেছে। এই পরিস্থিতিতেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে করোনা চলে গেছে- এমন ভাবনা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ আরো কমেছে। সংক্রমণের হার এখন শতকরা ৫.৯৮ ভাগ, যা একদিন আগে ছিল ৬.৬৪ ভাগ। আর ছয়মাস আগে গত মার্চের ৯ তারিখে সংক্রমণ ছিল শতকরা ৫ ভাগ, ১০ মার্চ ৫.৯৮, ১১ মার্চ ৫.৮২ এবং ১২ মার্চ ৬.৬২ ভাগ। সেই হিসেবে করোনা সংক্রমণ এখন গত ছয়মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছেন ৫১ জন। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৭ হাজার ১০৯ জন।
করোনায় সংক্রমণের হার শতকরা পাঁচ ভাগের নিচে নামলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যেতে পারে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান। বাংলাদেশে এখন স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতসহ প্রায় সবকিছুই খোলা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও খুলছে ভ্যাকসিন পাওয়া সাপেক্ষে। স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে সবকিছু খোলা হলেও সেই ব্যাপারে উদাসীনতা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হলেও এখন অধিকাংশ মানুষই আর ঘরের বাইরে মাস্ক পরছেন না। মাস্ক পরাতে বাধ্য করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো তৎপরতাও নেই। শিক্ষার্থীরা মাস্ক পরে সামাজিক দূরত্ব মেনে ক্লাস করলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে অভিভাবকদের ভিড় কোনোভাবেই সামলানো যাচ্ছে না। অভিভাবকদের অনেকে মাস্কও পরছেন না। বাজার, শপিংমল, হোটেল-রেস্তোরাঁ, গণপরিবহণ কোথাও স্বাস্থ্যবিধি তেমন একটা মানা হচ্ছে না। এমনকি হাসপাতালেও স্বাস্থ্যবিধি উধাও। করোনা রোগীদের ওয়ার্ডে দর্শনার্থী ও বহিরাগতদের উপস্থিতি স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি রোগীর সঙ্গে স্বজনরা থাকছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামেও বর্তমানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিম্নমুখী। দৈনিক সংক্রমণের হার ৬ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে, সুস্থতার হারও ৮০ শতাংশের উপরে। আর মৃত্যু ১ দশমিক ২ শতাংশ, যা সারাদেশের মৃত্যুহারের চেয়ে কম। হাসপাতালে রোগী ভর্তিও কমেছে। নগরীর হাসপাতালগুলোত বর্তমানে প্রায় ৮০ শতাংশ কোভিডশয্যা খালি। তবে আইসিইউ শয্যাগুলো বরাবরের মতোই পূর্ণ। বর্তমানে হাসপাতালে যে রোগীগুলো ভর্তি আছে তারা মূলত কো-মরবিডিটি (সহরোগ) ও জটিল রোগে আক্রান্ত। সে হিসেবে বলা যায়, চট্টগ্রামে এখনও আইসিইউ শয্যার চাহিদা রয়েছে। দৈনিক পূর্বদেশের সাথে সাক্ষাৎকালে এসব তথ্য জানান জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে মানুষের মধ্যে স্বস্তিদায়ক মনোভাব চলে আসছে। করোনা আর নেই এই ভেবে আত্মতুষ্টিতে ভোগা যাবে না। এখন লকডাউন তুলে দেওয়ায় মানুষ আর স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না। এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও খুলে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা থাকলেও কতটুকু মানা হচ্ছে সেটা বুঝতে পারবো পরবর্তী সংক্রমণের হারের উপর। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধির উপর সবাইকে গুরুত্ব দিতে হবে। সতর্কতার কোনো বিকল্প নাই। স্বাস্থ্যবিধির অবহেলা করলে সংক্রমণ আবারো বাড়বে।
সিভিল সার্জন বলেন, সকল নাগরিককে টিকার আওতায় নিয়ে আসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নিয়েছেন। বাংলাদেশে টিকা উৎপাদন হয় না। ফলে আমাদের টিকা কার্যক্রম পুরোটাই বিদেশ থেকে পাওয়ার উপর নির্ভরশীল। এ ব্যাপারে যেসব দেশে টিকা উৎপাদন হয় সেসব দেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। চট্টগ্রামে এই পর্যন্ত প্রায় ৩১ লক্ষ মানুষ টিকার নিবন্ধন করেছেন। টিকা পেয়েছেন প্রায় সাড়ে ২২ লক্ষ মানুষ। চট্টগ্রামে টিকা এসেছে ২৭ লাখেরও বেশি। বর্তমানে চট্টগ্রামে ৯ লক্ষ নিবন্ধিত ব্যক্তি টিকাপ্রত্যাশী। চট্টগ্রামে মহানগর এলাকায় ৭০ লাখ ও উপজেলায় ৭০ লাখ লোক রয়েছে।
সেখ ফজলে রাব্বি জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংক্রমণ খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো যে ১৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছে তা আপাতত যথেষ্ট। তবে স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে কোনো অবহেলা করা যাবে না। এখনও ১৮ বছরের কম বয়সীদের টিকা দেওয়ার কোনো নির্দেশনা আসেনি। টিকা পাওয়া সাপেক্ষে ১২ বছরের কম বয়সীদের টিকার আওতায় আনার বিষয়ে ভাবা হবে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করব।