সংক্রমণের রেড জোনে চট্টগ্রাম

27

নিজস্ব প্রতিবেদক

গত ১০ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে জেলাগুলোকে উচ্চ, মাঝারি ও কম ঝুঁকিপূর্ণ তথা রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি হলে লাল, ৩০ শতাংশের বেশি হলে গাঢ় লাল রঙে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি ১৪টি ল্যাবে সর্বমোট ৩ হাজার ১৯২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৯৮৯ জনের ফলাফল পজিটিভ এসেছে। নমুনা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আগের দিন যেখানে শনাক্তের হার ছিল ২৩ শতাংশ। একদিনের ব্যবধানে চট্টগ্রামে সংক্রমণের হার বেড়েছে প্রায় ৮ শতাংশ। একই সময়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১ হাজার ৩৪১ জনে দাঁড়িয়েছে।
একইভাবে শনাক্তের হার বিবেচনায় উচ্চ ঝুঁকিতে ১২ জেলার মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম। উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে এসব জেলাগুলো হলো- ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রাঙামাটি, বগুড়া, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, যশোর, লালমনিরহাট, গাজীপুর, পঞ্চগড় এবং খাগড়াছড়ি।
ইয়েলো জোন পর্যায়ের ঝুঁকিতে রয়েছে শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, খুলনা, ময়মনসিংহ, ফেনী, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, সিলেট, নাটোর, কক্সবাজার, ঠাকুরগাঁও, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নওগাঁ, বরিশাল, মাগুরা, জয়পুরহাট, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, পটুয়ালী, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সাতক্ষীরা, লক্ষীপুর, পিরোজপুর, বাগেরহাট, শরীয়পুর ও নড়াইল।
বান্দরবান জেলায় শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ হলেও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়নি, এ জেলায় খুব কম সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্তের এই হার পাওয়া গেছে। গত এক সপ্তাহে ৬১ জেলায় শনাক্তের হার বেড়েছে, কমেছে মাত্র তিনটি জেলায়। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ঢাকায় তারপর চট্টগ্রাম এবং তৃতীয় স্থানে রাঙামাটি। সংক্রমণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, দিনদিন সংক্রমণ বাড়ছেই। একদিনে ৩০ থেকে ৫০ হাজারও শনাক্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে, যদি আমরা যথেষ্ট পরিমাণে টেস্ট করি। এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন।
এেিদকে গত একদিনে সারাদেশে আরও ৯ হাজার ৫০০ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। একদিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল সর্বশেষ গত বছরের ১২ আগস্ট। সেদিন ১০ হাজার ১২৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল।
গতকাল বুধবার নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ১১ শতাংশে। যার মানে হল, প্রতি চারজনের নমুনা পরীক্ষায় একজন কোভিড রোগী পাওয়া গেছে। দৈনিক শনাক্ত রোগীর এই হার গত বছরের ১৩ আগস্টের পর সর্বোচ্চ। সেদিন শনাক্তের হার ছিল ২৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪২ হাজার ২৯৪ জনে। তাদের মধ্যে ২৮ হাজার ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫ হাজার ৫৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ৮ হাজার ৪০৭ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল। সে হিসাবে গত একদিনে রোগী বেড়েছে ১ হাজার ৯৩ জন, যা আগের দিনের চেয়ে ১৩ শতাংশের বেশি।
সরকারি হিসাবে গত একদিনে দেশে সেরে উঠেছেন ৪৭৩ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ২৬৮ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন। এই হিসাবে দেশে এখন সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা ৫৯ হাজার ৮৫০ জন। অর্থাৎ এই সংখ্যক রোগী নিশ্চিতভাবে সংক্রমিত অবস্থায় রয়েছে। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৫০ হাজার ৮৪৫ জন। ১০ জানুয়ারি ছিল ১৬ হাজার ৭১৩ জন হয়।
গতকাল বুধবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল বুলেটিনে সা¤প্রতিক করোনা পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশে আগের সপ্তাহের তুলনায় গত এক সপ্তাহে করোনা রোগী বেড়েছে ২২৮ শতাংশ। এ সময় (১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি) করোনায় সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু বেড়েছে ১৮৫ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বুলেটিনে জানানো হয়, গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশে ২৭ শতাংশের বেশি পরীক্ষা বেড়েছে। সাত দিনে ২ লাখ ৩ হাজার ১২২টি পরীক্ষা হয়েছে। রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩৪ হাজার ৪০৫ জন। এর আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সাত দিনে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার রোগী বেশি শনাক্ত হয়েছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে ২২৮ শতাংশ রোগী বেড়েছে।
গত এক সপ্তাহে করোনায় সংক্রমিত ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ৩৭ জন বেশি। শনাক্ত, পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান বলছে, দেশে বেশিসংখ্যক মানুষ করোনায় সংক্রমিত হচ্ছে।
ঢাকা ও রাঙামাটির পর আরও ১০ জেলাকে করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ছাড়া মধ্যম ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে ৩২ জেলা। আর এখন পর্যন্ত ঝুঁকিমুক্ত ১৬ জেলা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত এক সপ্তাহের তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানিয়েছে।