শ্রীলঙ্কা ও দ্রব্যমূল্য নিয়ে সংসদে নানা মত

27

পূর্বদেশ ডেস্ক

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সঙ্কটের বিষয়ে বাংলাদেশ অত্যন্ত সতর্ক রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, যে দেশ কোনোদিন ঋণ পরিশোধে ডিফল্টার হয়নি, হবেও না। সেদিক থেকে আমাদের অর্থনীতির ভিত্তি অনেক মজবুত। সেটা আমি বলে রাখতে চাই। আমরা অত্যন্ত সতর্ক। গতকাল বুধবার একাদশ জাতীয় সংসদের ১৭তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
বিদেশি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে বলে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদেরের আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনীতির ভিত্তি অনেক মজবুত।
সরকার প্রধান বলেন, বিরোধী দলীয় নেতা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শ্রীলঙ্কার বিষয়টি নিয়ে, এটা বাস্তব। তবে আমরা সরকার গঠন করার পর থেকে এ পর্যন্ত উন্নয়নের ক্ষেত্রে যত ঋণ নিয়েছি তা সময়মত পরিশোধ করছি।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সমাপনী ভাষণে দ্রব্যমূল্য, রাজধানীতে যানজট নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বেগুনের পরিবর্তে মিষ্টিকুমড়া বা অন্য কোনো সবজি দিয়ে বেগুনি তৈরি করা, সড়কে যানজট কমাতে ব্যক্তিগত গাড়ি কম বের করার পরামর্শ দেন।

সড়কে গাড়ি বের করবেন জ্যাম হলে গালি দেবেন
পাবলিক বাস বাড়ানো ও মেট্রোরেল করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন সড়কে অতিরিক্ত গাড়ি চলে। সবাই ট্রাফিক আইন মেনে চললে আর গাড়ি কম বের করলে যানজট তো থাকে না। গাড়িতেও চড়বেন, একেকটি পরিবার দু-তিনটি গাড়ি বের করবেন আবার ট্রাফিক জ্যাম হলে গালি দেবেন, এটা তো চলবে না।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নেওয়া সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ যাতে বেশি কষ্ট না পায়, সে পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে। মোটা চালের দাম এখন ৪৬ টাকার মতো, সেটা খুব বেশি বাড়েনি। চিকন ও মাঝারি চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। আলু পাইকারি বাজারে ২০ টাকা, খুচরা বাজারে ২৫ টাকা। পেঁয়াজের দামের জন্য এখন কৃষক হাহাকার করছে।

নিত্যপণ্যের দাম কমেছে
সরকারি দলের কাজিম উদ্দিন আহমেদের প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান সংসদে বলেন, টিসিবির বিক্রয় কার্যক্রম চলমান থাকায় দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারমূল্য উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারিতে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে সব দেশেই দ্রব্যমূল্য ভীষণভাবে বেড়েছে। এর মধ্যে অনাকাক্সিক্ষতভাবে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর কুফল হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। তবে জনবান্ধব বর্তমান সরকার দেশের নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সম্ভাব্য সব রকম পদক্ষেপ নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের নানামুখী কার্যক্রমের ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রয়েছে। পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপণ্য সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলে আশা করি।
প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি নিত্যপণ্যে টিসিবির বর্তমান ও আগের বাজারমূল্যের একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা জানান, গত ১ মার্চ সয়াবিন তেলের এক লিটার ক্যানের বাজারমূল্য ছিল ১৭০ টাকা, ৫ এপ্রিল এ মূল্য কমে হয়েছে ১৬১ টাকা ৫০ পয়সা। এ সময় সয়াবিন খোলা প্রতি লিটার ১৭৫ থেকে কমে ১৫৫ টাকা এবং পাম ওয়েল প্রতি লিটার ১৫৮ থেকে কমে ১৪২ টাকা হয়েছে। এছাড়া টিসিবি সয়াবিন তেলের প্রতি লিটার ক্যান বিক্রি করেছে ১১০ টাকায়।
প্রধানমন্ত্রী জানান, মসুর ডালের কেজি গত ১ মার্চ ছিল ১২০ টাকা। তা কমে ৫ এপ্রিল হয়েছে ১১২ টাকা ৫০ পয়সা। এসময় টিসিবি বিক্রি করেছে ৬৫ টাকা কেজিতে। খোলা চিনি প্রতি কেজি ১ মার্চের ৮৫ টাকা থেকে কমে ৫ এপ্রিল হয়েছে ৭৮ টাকা। এ সময়ে টিসিবি বিক্রি করছে ৫৫ টাকা কেজি দরে। ছোলার কেজি ১ মার্চের ৭৭ থেকে কমে ৫ এপ্রিল ৭২ টাকা ৫০ পয়সায় নেমেছে।
এ সময় টিসিবি বিক্রি করেছে ৫০ টাকা কেজি। পেঁয়াজ ১ মার্চের ৬০ টাকা কেজি থেকে কমে ৫ এপ্রিল হয়েছে ৩১ টাকা ৫০ পয়সা। টিসিবি বিক্রি করছে ২০ টাকা কেজি দরে।

মিষ্টিকুমড়ার বেগুনি বানানো যায়
সংসদ নেতা বলেন, বেগুনের দাম ১১০ টাকার ওপরে চলে গেল। সেটা এখন কমে ৮০ টাকায় এসেছে। বেগুন দিয়ে বেগুনি না খেয়ে আরও যেসব সবজি সহজলভ্য আছে, সেটা দিয়ে খেলেই হয়। আমরা তো তাই খাই। বেগুনি না বানিয়ে মিষ্টিকুমড়া দিয়ে খুব ভালো বেগুনি বানানো যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে জিনিসের দাম বেড়েছে। রড-সিমেন্টসহ প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। এটা কেবল বাংলাদেশে নয়, সব দেশে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ার জন্য আমেরিকার অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এক ডলারের তেল চার ডলার হয়ে গেছে।

মানুষের আয় বেড়েছে
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপে সাড়ে সাত ভাগের ওপরে মূল্যস্ফীতি। বাংলাদেশে ৬ ভাগের নিচে আছে মূল্যস্ফীতি। তিনি বলেন, এই করোনার ধাক্কার মধ্যেও বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯৪ ভাগ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। মাথাপিছু আয়ও বৃদ্ধি পেয়ে ২৫১১ মার্কিন ডলার হয়েছে। জিনিসের দাম বাড়লেও মানুষের আয় বেড়েছে। দারিদ্র্যসীমাও হ্রাস পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকতে বিদেশ থেকে কোনো জিনিস কেনার সময় ১০ টাকার জিনিস ২০ টাকায় কিনে বাকি ১০ টাকা পকেটে ঢুকাত। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে সেটা হয় না। আমরা বরং দাম কমিয়ে আনি।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ আছে বলেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আছে, ভারসাম্য আছে। অন্য পথে যারা ক্ষমতা দখল করতে চায়, তারা এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

দেশের মানুষের দুর্ভাগ্য
সংবিধান নিয়ে জি এম কাদেরের এক বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য হলো এমন একটি দলের থেকে সংবিধানের বিষয় শুনতে হচ্ছে, যে দলটি ক্ষমতায় এসেছিল সংবিধান লঙ্ঘন করে, ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে মার্শাল ল জারি করে। মার্শাল ল’র মাধ্যমে যাদের জন্ম, যার নেতা ক্ষমতাই দখল করেছিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতিকে বিদায় দিয়ে, সেনাপ্রধান হয়ে গেলেন রাষ্ট্রপ্রধান। যে সংবিধান স্থগিত করে ক্ষমতায় এসেছিল, তার থেকে আজকে আমাদের সংবিধান শিখতে হচ্ছে। সংবিধানের ব্যাখ্যা শুনতে হচ্ছে।

জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গ
বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী ঘটনা এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া ও সাক্ষ্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন জিয়াউর রহমানই বঙ্গবন্ধুর আসল খুনি ।
এর আগে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ তার বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে অনুমান নির্ভর বক্তব্য দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে তার কোনো নাম আসেনি। তিনি এর ধারেকাছেও ছিলেন না।
‘জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর খুনি’ বলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুনিকে কেন খুনি বলবে না। আমার কাছে ছবি আছে। ১৯৮৭ সালে খালেদা জিয়া এবং কর্নেল ফারুক- কথা বলছেন। কর্নেল ফারুক আর রশিদের বিবিসির ইন্টারিভিউতে আছে জিয়াউর রহমান তাদের সঙ্গে ছিল।