শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ

24

পূর্বদেশ ডেস্ক

চরম আর্থিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে উত্তাল গণবিক্ষোভের মধ্যে পদত্যাগ করেছেন। দেশটির এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গতকাল সোমবার প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দার ছোট ভাই। স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে বড় আর্থিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কার বিরোধী দলগুলো এই দুর্দশার জন্য তাদেরকেই দায়ী করে আসছে। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, অর্থনীতির ভুল ব্যবস্থাপনার কারণে শ্রীলঙ্কা বিদেশি ঋণে ডুবতে বসেছে, রিজার্ভ ঠেকেছে তলানিতে।
ভারত মহাসাগরীর দ্বীপ দেশটির হাজার হাজার মানুষ প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া এবং প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। সোমবার দেশটির রাজধানী কলম্বোয় সরকারবিরোধীদের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিক্ষোভস্থলে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের হামলার ঘটনা ঘটে। সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর পর ক্ষমতাসীন দলের এক আইনপ্রণেতার লাশ উদ্ধার হয়েছে। গতকাল রাজধানী কলম্বোর কাছের নিত্তামবুয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
শ্রীলঙ্কা পুলিশের বরাত দিয়ে এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অমরাকীর্থি আথুকোরালা নামের ওই এমপি নিত্তামবুয়া এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সামনে পড়েন। এ সময় তার গাড়ির পথরোধ করলে তিনি গুলিবর্ষণ করেন। এতে দুইজন গুরুতর আহত হন। সংঘর্ষের একপর্যায়ে কাছের একটি ভবনে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেন ওই এমপি। পরে তার লাশ পাওয়া যায়। এর পরপরই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর আসে। প্রধানমন্ত্রীর এ পদত্যাগে সংকটে পড়া দেশটিতে নতুন একটি মন্ত্রীসভার গঠনের পথ খুলতে পারে।
শ্রীলঙ্কার ডেইলি মিররের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার এক বিশেষ বৈঠকে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া দেশজুড়ে চলা রাজনৈতিক সংকট সমাধানে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দাকে পদত্যাগ করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন, তার কয়েকদিনের মধ্যেই সাড়া দিলেন তার বড় ভাই। এখন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করায় প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া একটি সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য পার্লামেন্টে থাকা সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে বিরোধী এসজেবি পার্টি নিশ্চিত করেছে, তাদের নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা অন্তবর্তী এ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না।
সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে ক্ষমতাসীন দলের একদল সমর্থক জড়ো হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ না করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে শ্লোগান দিতে থাকে। এরপর প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দার সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়। এই বৈঠক শেষ করে মিছিল করে গিয়ে প্রেসিডেন্ট দপ্তরের সামনে অবস্থানরত সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায় তারা। তারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভকারীদের ওপর লাঠি ও লোহার পাইপ নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। হামলকারীদের সেখান থেকে সরাতে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে।
বিবিসি জানিয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের এ হামলার ঘটনার পর দেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে। কলম্বোয় প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের কাছে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
স্থানীয় হাসাপতালের ভাষ্য অনুযায়ী, সোমবারের এ সহিংসতায় অন্তত ৭৮ জন আহত হয়েছেন।