শ্রীলঙ্কাকে একটু এগিয়ে রাখলো ম্যাথুজের সেঞ্চুরি

17

পূর্বদেশ অনলাইন
ব্যাটিং-স্বর্গ বলে নাম আছে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের। গত ১০ বছরের রেকর্ড বিবেচনায় নিলে এশিয়ায় সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড় এই মাঠেরই! তাই টস জিতলে এখানে ব্যাটিং নিতে চাইবে যে কেউ। এমন উইকেটে বোলারদের জন্য কিছু না থাকলেও আউট অব দ্য বক্স চিন্তা করলে সাফল্য অনিবার্য। যেমনটি করে দেখালেন সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলাম। দুজনের ধীরগতির বোলিং যেমন লঙ্কানদের রানের চাকা শ্লথ করতে ভূমিকা রেখেছে; পাশাপাশি উইকেটও নেওয়া গেছে এই ধীর গতির বোলিংয়েই। তাতে প্রথম দিনটা সমানে সমান লড়েছে বাংলাদেশ। তবে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের সেঞ্চুরিতে একটু এগিয়ে থেকেই প্রথম দিন শেষ করেছে সফরকারী দল। ৯০ ওভারে ইনিংসে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২৫৮ রান। অফস্পিনার নাঈমের দুই উইকেট শিকারের পর বাকি দুটি নিয়েছেন তাইজুল-সাকিব। অবশ্য ধীরগতির বোলিং বিবেচনায় শেষ দুইজনই লঙ্কানদের বেঁধে রাখতে পেরেছেন বেশি। ৪ ম্যাচ পর ফেরা সাকিব ১৯ ওভার বল করে মেডেন দিয়েছেন ৭টি। রানও দিয়েছেন কম, মাত্র ২৭। বিনিময়ে তার ঝুলিতে গেছে একটি উইকেট। তাইজুল সেখানে ৩১ ওভার বোলিং করে ৮ মেডেন দিয়েছেন। ৭৩ রানের বিনিময়ে নিয়েছেন একটি উইকেট। নাঈম হাসান অবশ্য ১৬ ওভার বল করে ২ মেডেনে নিয়েছেন দুটি উইকেট। দিয়েছেন ৬৭টি রান। পরে উইকেট ভেঙে যাবে এই বিবেচনায় শুরুতে টস জিতে ব্যাটিং নেয় শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ তিন স্পিনার আর দুই পেসার নিয়ে মাঠে নামলেও এই স্পিন-ই কাজে দিয়েছে দিনভর। প্রথম সেশনে ২৪ ওভারের খেলায় তাদের স্বস্তি নিয়ে লাঞ্চে যেতে দেননি নাঈম। প্রথম সেশনটা এক কথায় ছিল এই অফস্পিনারেরই। অষ্টম ওভারে প্রথম বল হাতে তুলে নেন এই অফস্পিনার। পঞ্চম বলে পেয়ে যান সাফল্য। অফ স্টাম্প থেকে ভেতরে পড়া বল লেগ সাইডে সরে গিয়ে কাট করতে গিয়েছিলেন করুনারত্নে। কিন্তু বামহাতি ব্যাটার বলের লাইন থেকে বেশি সরে পড়ায় বল ছুঁয়ে যায় তার প্যাড। এলবিডব্লিউর আবেদন উঠতেই তাতে সাড়া দেন আম্পায়ার। অবশ্য শ্রীলঙ্কা রিভিউ নিলেও কাজে দেয়নি তা। আম্পায়ার্স কলে ৯ রানে সাজঘরে ফিরেছেন করুনারত্নে। ২৩ রানে প্রথম উইকেট পড়ার পর জুটি গড়ার দিকে মনোযোগী ছিলেন ওশাডা ফার্নান্ডো ও কুশল মেন্ডিস। প্রায় দুই ঘণ্টার মতো প্রতিরোধ গড়ে খেলেন ফার্নান্ডো। লাঞ্চের আগে ৭৬ বল খেলা এই ব্যাটারকে বিপদে ফেলেন নাঈম। তার স্পিন ঠিকমতো ডিফেন্ড করতে পারেননি। বল এজ হয়ে জমা পড়ে লিটনের গ্লাভসে। ওশাডা দ্রুত রিভিউ নিলেও আলট্রা এজে দেখা গেছে বড় স্পাইক। ৩৬ রানে লঙ্কান ওপেনার সাজঘরে ফিরলে সফরকারীদের দ্বিতীয় উইকেটের পতন হয় ৬৬ রানে। নাঈমের কল্যাণে প্রথম সেশনে বাংলাদেশের প্রাপ্তি ছিল দুই উইকেট। পাশাপাশি নষ্ট করেছে দুটি রিভিউ। তবে দ্বিতীয় সেশনে পুরোপুরি কর্তৃত্ব ছিল শ্রীলঙ্কার। সফরকারী দল একটি উইকেটও হারাতে দেয়নি। বরং বিরতির পর ঘণ্টা খানেক স্বাগতিকদের ওপর চড়াও হয়ে খেলেছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ ও কুশল মেন্ডিস। ফিফটি তুলে নেন দুজনেই। একটা পর্যায়ে তাদের প্রতিরোধ ভাঙা অসম্ভবই মনে হচ্ছিল। কিন্তু চা পানের বিরতিতে যাওয়ার পর পুনরায় পাল্টে যায় দৃশ্যপট। ধীরগতির বোলিংকে অস্ত্র বানিয়ে তৃতীয় সেশনের প্রথম বলে ৯২ রানের জুটি ভাঙেন তাইজুল। অথচ দ্বিতীয় সেশনে শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ১৫৮ রান। তাইজুলের নির্বিষ শর্ট বলে অলসভাবে পুল করতে গিয়ে মিডউইকেটে তালুবন্দি হয়েছেন মেন্ডিস। তাতে ১৩১ বল খেলা লঙ্কান ব্যাটারের ইনিংস শেষ হয় ৫৪ রানে। অবশ্য মেন্ডিসের বিদায়ে প্রতিরোধ ভাঙলেও ম্যাথুজ ব্যাট করেছেন ভাগ্যের ছোঁয়ায়! দুবার তার ক্যাচ উঠলেও বাংলাদেশ সেসব কাজে লাগাতে পারেনি। ৬৫তম ওভারে তাইজুলের বলে ক্যাচ মিস হয় স্লিপে। খালেদের ৫৮তম ওভারেও বল ম্যাথুজের ব্যাটে লেগে গেলে ধরা যায়নি তা। দ্বিতীয় সেশনে ৪৫তম ওভারে বেঁচেছেন রিভিউর কল্যাণে। বল ব্যাটে লেগে গ্লাভসে জমা পড়েছে ভেবে আম্পায়ার আঙুল তুলে দিয়েছিলেন। পরে রিভিউ নিলে দেখা যায় বল ব্যাটেই লাগেনি!
এই সময়ে ধনাঞ্জয়া ম্যাথুজের সঙ্গী হতে চাইলেও সেটি স্থায়ী হয়নি সাকিবের দুর্দান্ত বোলিংয়ে। তার বল ঠিকমতো ডিফেন্ড করতে পারেননি লঙ্কান ব্যাটার। তাতে বল ব্যাটের কানা ছুঁয়ে উঠে যায় বাতাসে। সেই ক্যাচ মাহমুদুল হাসান লুফে নিলে আম্পায়ার সাড়া দেননি প্রথমে। পরে রিভিউতে সাফল্য এলে ২৭ বল খেলা ধনাঞ্জয়াকে ফিরতে হয় ৬ রানে। এরপর রানরেট কমে গেল শেষভাগে দিনেশ চান্ডিমাল যোগ্য সঙ্গ দেন ম্যাথুজের। দুর্দান্ত কিছু শটস খেলে ৭৫ রানের জুটি গড়েন তারা। দিন শেষে ৭৭ বল খেলা চান্ডিমাল অপরাজিত ৩৪ রানে। তাতে রয়েছে দুটি ছয়। ১২তম সেঞ্চুরি হাঁকানো ম্যাথুজ ২১৩ বল খেলে অপরাজিত ১১৪ রানে। যাতে ছিল ১৪টি চার ও ১টি ছয়ের মার।