শ্রমিকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা

11

 

 

এক সময়ে শ্রমিকদের দৈনিক ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করতে হতো, যা অত্যন্ত অমানবিক ছিল। তাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হতো। বিনিময়ে নগণ্য পারিশ্রমিক মিলতো। মালিক পক্ষের ইচ্ছায় শ্রমিকদের উপর চলতো নানাবিধ নিষ্ঠুর নির্যাতন। কারো কারো দাসত্ব জীবন ছিল। তাদের স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিলনা। সে সময় বিশ্বের কোথাও শ্রমিক আইন ছিলনা। শ্রমিকদের মানবিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকারও ছিল লোকায়িত। চাকরির স্থায়িত্ব ও ন্যায়সঙ্গত পারিশ্রমিকের বিন্দুমাত্র নিশ্চয়তা ছিলনা। ফলে ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিকরা দৈনিক ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করানোর প্রতিবাদে শিল্পাঞ্চল এলাকায় ধর্মঘট আহবান করা হয়। শিকাগোর হে মার্কেটের সামনে সেদিন বিশাল শ্রমিক জমায়েত হয়। শ্রমিকদের ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি এক অজ্ঞাতনামার বোমা নিক্ষেপের পর পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলি চালালে ১১-১২ জনের মৃত্যু হয়। ফলে সারা বিশ্বে কল্পনাতীত বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষ এক সুরে এর প্রতিবাদ জানান।
পুলিশ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হয় ৮ জন শ্রমিককে। ১৮৮৭ সালের ১১ নভেম্বর এক প্রহসনমূলক বিচার আয়োজনের মাধ্যমে উক্ত ৮ জনের মধ্য থেকে ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়, বাকী ২ জনের মধ্যে ১ জনকে দেয়া হয় ১৫ বছরের কারাদÐ, আর অপর জন কারাগারের ভিতরেই আত্মহত্যা করেন। বোমা বিস্ফোরণকারীর কোন হদিস পাওয়া না গেলেও আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে, পরবর্তীতে ১৮৯৩ সালের ২৬ জুন পুলিশ হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত উক্ত ৮ জন শ্রমিককে নিরাপরাধ মর্মে ঘোষণা দেয়া হয় ।
অবশেষে ১৯০৪ সালে অ্যামস্টারড্যামে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবি আদায়ের জন্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মিছিল ও শোভাযাত্রা হয়। বিশ্বজুড়ে শ্রমজীবী মানুষ পহেলা মে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। উত্তাল সেই আন্দোলনের মুখে শ্রমজীবী মানুষের চাপে পড়ে সরকার অবশেষে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি মানতে বাধ্য হয়। অতঃপর আত্মত্যাগী শ্রমিকদের স্মরণে মে মাসের প্রথম দিনটি শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বে ৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবি মেনে নেওয়া হয়। সেই থেকে বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতীক হিসাবে পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, যে কোন ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ে একতাবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই। শ্রমিকদের দাবি আদায়ের জন্য হাসিমুখে বুকের তাজা রক্তে রাজপথকে রঞ্জিত করা সাহসী শ্রমিকদের স্মরণে বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক আয়োজিত কর্মসূচিসমূহের সফলতা কামনা করছি।