শ্যামল ছায়ায় নীল ছড়ানো লেকে, সন্ধ্যা নামে বুনো প্রাণীর ডাকে

21

সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁও

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জের আওতাধীন মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান (ন্যাশনাল পার্ক) দিন দিন ভ্রমণপিপাসুদের নজন কাড়ছে। এর নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবাইকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
উদ্যানের সৌন্দর্য ও স্বচ্ছ লেকে অতিথি পাখিদের কলরব শীতের চিরচেনা সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলেছে। সু-উচ্চ পাহাড়, মনজুড়ানো সবুজ ছায়াঘেরা পরিবেশ, সন্ধ্যায় বন্যপ্রাণীর হাঁকডাক, লেকের স্বচ্ছ জলরাশি সব মিলিয়ে এক কথায় অনন্য এই উদ্যান। এখানে পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো রয়েছে অজস্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণ। বিকেলের গোধূলিতে লেকের সৌন্দর্যে মন ভরে যায়। ছুটির দিন শুক্রবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভ্রমণ করতে আসেন ভ্রমণবিলাসী লোকজন। তাদের আনাগোনায় তখন মুখরিত হয়ে ওঠে উদ্যানটি।
তবে কোটি টাকা ব্যয়ে পার্কে ইকো ট্যুরিজম ও লেক তৈরির কাজ পার্কের সৌন্দর্য বর্ধনের দৃশ্যমান কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে। জানা গেছে, মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের প্রথম ইকো অ্যাডভেঞ্চার। মহাসড়ক সংলগ্ন হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এ উদ্যানের জনপ্রিয়তা। পরিবার নিয়ে মেদাকচ্ছপিয়া ইকো পার্কে এসেছেন আতাউর রহমান। তিনি বলেন, চকরিয়ায় এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশের কথা জানা ছিল না। সবুজের সমারোহের মাঝে ইকো-অ্যাডভেঞ্চার সত্যিই মুগ্ধ করে। উপজেলার খুটাখালী মেদাকচ্ছপিয়ায় ৩৯৬ হেক্টর বনভ‚মি নিয়ে গড়ে তোলা মেদাকচ্ছপিয়া ইকো ট্যুরিজম এরই মধ্যে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। দর্শণার্থীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রাখা হয়েছে। আছে রাত্রীযাপনের সুযোগও। ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি এখানে ট্রি-অ্যাডভেঞ্চার চালু করে বেসরকারি সংস্থা ইউএসএআইডির নেকম-ক্রেল প্রকল্প। গর্জন গাছের মধ্যভাগে রোপওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে রয়েছে মেছোবাঘ, হাতির পাল, বানর, উল্টোলেজ বানর, বনবিড়াল, বনমোরগ, শুশুক, ইগল, সবুজ ঠোঁট ফিঙে, চিল, শ্যামা, গুইসাপ, হ্যাজা সাপসহ নানা প্রজাতির প্রাণী। নেকম ইকোলাইফ প্রকল্পের ন্যাচারাল রিসোর্স ম্যানেজম্যান্ট ফ্যাসিলিটেটর আবু জাফর মুহাম্মদ সেলিম ফারুক বলেন, পর্যটকরা এখানে নিয়মিত আসেন। অনেকে রাতের সৌন্দর্যও উপভোগ করেন। এখানে বারবিকিউসহ নানা আয়োজন রয়েছে। আমরা পর্যটকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দিই।
প্রকল্পের সাইট অফিসার সিরাজুম মনির বলেন, মেদাকচ্ছপিয়া ইকোপার্কের অভয়ারণ্যে ট্রি অ্যাডভেঞ্চার, সাইক্লিন, হ্রদে বোটিং, ফিশিং, টি হাউস, ইকো হাউস, তাঁবু জলসা, হেমগ, গাছে ঝোলা, ট্রেল হাইকিং, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয়।
মেদাকচ্ছপিয়া বিট অফিসার আলাউদ্দীন বলেন, মেদাকচ্ছপিয়া অত্যন্ত ঘন বন। এখানে বিরল প্রজাতির শুশুক পাখি, বিরল প্রজাতির উল্টো লেজ বানর, হাতির প্রজনন স্থান, ওয়াচ টাওয়ার থেকে নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণি দেখার সুযোগ রয়েছে।