শ্বাসরুদ্ধকর শেষ বলে ম্যাচ জিতে সিরিজ বাংলাদেশের

15

ক্রীড় প্রতিবেদক

আবারও মেহেদী হাসান মিরাজ বীরত্ব। ভারতকে পেয়েই যেন তেতে উঠলেন এই অলরাউন্ডার। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে অনিবার্য পরাজয়ের খাদ থেকে টেনে তুলে এক উইকেটের অবিশ্বাস্য জয়। আর দ্বিতীয় ম্যাচে ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দলকে শেষ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে লড়াকু সংগ্রহ দাঁড় করিয়ে বোলিং নৈপুণ্যে দেশকে টানা জয় উপহার দেয়। সেই সাথে নিশ্চিত হয় সিরিজও। যেটি ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় সিরিজ জয়।
গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ওয়ানডে সিরিজে ভারতকে ৫ রানে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিল লাল-সবুজ বাহিনী। আগে ব্যাট করতে নেমে ২৭১ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় টাইগাররা। লক্ষ্য তাড়ায় ২৬৬ রানে থামে রোহিত শর্মাদের ইনিংস। আগামী ১০ ডিসেম্বর সিরিজের শেষ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে।
২৭২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় ভারত। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে বিরাট কোহলিকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার এবাদত হোসেন। দলীয় ৭ রানে ৬ বলে ৫ রান করে আউট হন কোহলি। এরপর দলীয় ১৩ রানে শিখর ধাওয়ানকে ফেরত পাঠান মোস্তাফিজুর রহমান। ১০ বলে ৮ রান করে সাজঘরে ফিরেন ভারতের এই ওপেনার।
এরপর ক্রিজে আসেন ওয়াশিংটন সুন্দর। তাকে সঙ্গে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন ওয়ান ডাউনে নামা শ্রেয়াস আইয়ার। তবে দলীয় ৩৯ রানে ব্যক্তিগত ১১ রানে ওয়াশিংটন সুন্দরকে ফিরিয়ে তৃতীয় ধাক্কাটা দেন বিশ্ব অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
সুন্দরের বিদায়ের পর চতুর্থ উইকেটে আসা লোকেশ রাহুলকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস মেরামত করার চেষ্টা করেন আইয়ার। তবে দলীয় ৬৫ রানের মাথায় রাহুলকে সাজঘরের পথ দেখান মেহেদী মিরাজ। যাওয়ার আগে ২৪ বলে ১৪ রান করেন রাহুল।
৬৫ রানে চার উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে ভারত। পঞ্চম উইকেটে অক্ষর প্যাটেলকে সঙ্গে নিয়ে ১০১ বলে ১০৭ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখান আইয়ার। তবে ৩৫তম ওভারে দলীয় ১৭২ রানে ১০২ বলে ৮২ রান করা শ্রেয়াসকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রæ এনে দেন মেহেদী মিরাজ। ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে আফিফের হাতে জমা পড়েন এই ব্যাটার। আইয়ারের বিদায়ের পর ক্রিজে প্যাটেলে সঙ্গী হন শার্দুল ঠাকুর। তবে দলীয় ১৮৯ রানে এবাদতের বলে সাকিবের হাতে ধরা দিয়ে ব্যক্তিগত ১৭ রানে ফিরতে হয় প্যাটেলকে।
অক্ষর প্যাটেলের বিদায়ের পর নামা দিপক চাহারকে ৪৩তম ওভারে ফিরিয়ে ম্যাচ নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নেন সাকিব। তুলে নেন শার্দুল ঠাকুরের উইকেটও। উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে সাকিবকে মারতে গিয়ে স্ট্যাম্পিং হন তিনি। ব্যাটিংয়ে নামেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
দলীয় ২১৩ রানে ইনিংসের ৪৬তম ওভারে নিজের তৃতীয় উইকেট তুলে নেন পেসার এবাদত। পুল করতে গিয়ে শান্তর হাতে ধরা পড়েন ১৮ বলে ১১ রান করা দিপক চাহার। এরপর সেই ওভারের তৃতীয় ও পঞ্চম বলে ছক্কা এবং শেষ বলে চার মেরে ভয় দেখান রোহিত শর্মা।
৪৭তম ওভারে বোলিংয়ে এসে মিরাজ এক বল পর ইনজুরিতে পড়ে ওভার শেষ না করেই মাঠ ছাড়লে তার পরিবর্তে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এসে পাঁচ বলে মাত্র ১ রান দেন।
শেষ তিন ৩ ওভারে জয়ের জন্য ৪০ রান প্রয়োজন হয় ভারতের। ৪৮তম ওভারটি কোন রান ছাড়াই মোস্তাফিজুর রহমান শেষ করলে দুই ওভারে ৪০ রান প্রয়োজন হয় রোহিত শর্মার দলের।
এই ওভারে বোলিংয়ে আসা মাহমুদুল্লাহকে ধবল ধোলাই দিয়ে ১৬ রান নেয় ভারত। কিন্তু এই রান নিতে গিয়ে দুই দুই বার ক্যাচ তুলে দিলেও ব্যর্থ হন এবাদত ও বিজয়। তবে শেষ বলে সিরাজকে বোল্ড করেন মাহমুদুল্লাহ।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ছিল ২০ রান। মোস্তাফিজের করা ওভারের প্রথম বল ডট, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে পরপর চার হাঁকান রোহিত। চতুর্থ বল আবার ডট। পঞ্চম বলে আবারও ছক্কা হাঁকান রোহিত।
শেষ বলে জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ছিল ৬ রান। রোহিত শর্মাকে ছক্কাই হাঁকাতে হতো। কিন্তু বাংলাদেশ দলের অভিজ্ঞ পেসার মোস্তাফিজুর রহমান ইয়র্কার দিলে লক্ষ্যভ্রষ্ট হন রোহিত। ৫ রানের উল্লাসে মাতে বাংলাদেশ। ২৮ বলে ৫১ রান করে অপরাজিত থাকেন রোহিত শর্মা।
বাংলাদেশের পক্ষে এবাদত হোসেন নেন সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট। দুইটি করে শিকার করেন সাকিব ও মিরাজ।
এর আগে টস জিতে ব্যাট নেমে ১৮.৬ ওভারে ৬৯ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। অপেক্ষা করছিল বড় লজ্জার। এ অবস্থায় ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে লড়াই করে দলকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর আগের ম্যাচের নায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। সপ্তম উইকেটে তারা ১৬৫ বলে গড়েন ১৪৮ রানের জুটি। যে কোনো উইকেটে যেটি কিনা ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড।
ইনিংসের শেষ বলে মিরাজ পান ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা। মাহমুদউল্লাহ খেলেন ৭৭ মহামূলবান ইনিংস। যেখানে তার হাফসেঞ্চুরিটি ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৭তম। ভারতের হয়ে ওয়াশিংটন সুন্দর ৩টি এবং মোহাম্মদ সিরাজ ও উমরান মালিক ২টি করে উইকেট তুলে নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭১/৭ রান (মিরাজ ১০০, মাহমুদউল্লাহ ৭৭, নাজমুল হোসেন ২১; ওয়াশিংটন সুন্দর ৩/৩৭, মোহাম্মদ সিরাজ ২/৭৩, উমরান মালিক ২/৫৩)।
ভারত: ৫০ ওভারে ২৬৬/৯ রান (শ্রেয়াস ৮২, অক্ষর প্যাটেল ৫৬, রোহিত ৫১*; এবাদত ৩/৪৫, মিরাজ ২/৪৬, সাকিব ২/৩৯)।
ফল: বাংলাদেশ ৫ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: মেহেদি হাসান মিরাজ।