শোকে কাতর আমানবাজার

47

হাটহাজারী প্রতিনিধি

জিয়াউল হক সজীব; বয়স ২২ বছর। নগরীর ওমরগণি এমইএস কলেজে গণিত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তার হতদরিদ্র পিতা অন্যের দোকানে মাসিক বেতন চাকরি করে কোন রকমে ছয় সদস্যের পরিবারটাকে চালিয়ে নিচ্ছিলেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম পিতার সাথে পরিবারের হাল ধরতে সজীব পড়াশুনার পাশাপাশি এলাকার বন্ধুদের নিয়ে চালু করে ‘আর এন্ড জে কোচিং সেন্টার’। এভাবে পিতার অল্প আয় ও কোচিং সেন্টার থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে চলছিল তাদের কষ্টের সংসার।
কিন্তু গতকাল শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে মিরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া রেলস্টেশনের এক কিলোমিটার এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসে থাকা সজীব ঘটনাস্থলেই মারা যায়। সজীব হাটহাজারী উপজেলার চিকনদন্ডী ইউনিয়নের আমানবাজারের খন্দকিয়া গ্রামের যুগিরহাট এলাকার আব্দুল হাকিম মিয়াজি বাড়ির মো. আব্দুল হামিদের পুত্র।
এ দুর্ঘটনায় আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়। এদের একজন উপজেলার মধ্যম মাদার্শার মাদারিপুল এলাকার আব্দুল মাবুদের পুত্র ইকবাল হোসেন মারুফ (১৭)। মারুফ মায়ের সাথে তার নানাবাড়ি চিকনদÐী ইউনিয়নের খন্দকিয়া গ্রামের যুগিরহাট এলাকার আব্দুল ওয়াদুদ মাস্টার বাড়িতে থাকত। ১০-১২ বছর আগে মারুফের পিতা আরেকটি বিয়ে করে তার মাকে তাড়িয়ে দেয়। বহু কষ্টে দুই পুত্র ও এক কন্যাকে নিয়ে জীবনযুদ্ধ সামাল দিচ্ছিলেন মারুফের মা কামরুন নাহার। মারুফ পার্শ্ববর্তী শিকারপুর ইউনিয়নের কেএস নজু মিয়া হাই স্কুল থেকে চলতি বছর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।
এদিকে, দুর্ঘটনার খবর নিহতদের পরিবার তথা হাটহাজারীর খন্দকিয়া গ্রামে পৌঁছলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। এলাকাজুড়ে চলছে শোকের মাতম। নিহতদের পরিবারের সদস্য, তাদের আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকার আবাল বৃদ্ধ বনিতার আহাজারিতে খন্দকিয়া গ্রামের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
দুর্ঘটনায় নিহত কোচিং সেন্টারের আরেক শিক্ষক খন্দকিয়া গ্রামের আজিজ মেম্বার বাড়ির জানে আলমের পুত্র ওয়াহিদুল আলম জিসান। গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টায় তার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় জিসানের ছোট বোন উক্ত কোচিং সেন্টারের শিক্ষিকা জেসি আক্তারের সাথে। তিনি বলেন, কোচিং সেন্টারটি ২০২২ সালের এসএসসি শিক্ষার্থীদের বিদায় উপলক্ষে মিরসরাই খৈয়াছড়া ঝর্নায় বেড়াতে নিয়ে যায়। তাদের সঙ্গে মোস্তফা মাসুদ রাকিব, জিয়াউল হক সজীব, রিদোয়ান চৌধুরী ও ওয়াহিদুল আলম জিসান নামের চার শিক্ষক ছিলেন। এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিকের কয়েকজন শিক্ষার্থীও ছিল।
কেএস নজু মিয়া হাই স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের এসএসসি পরীক্ষার্থী মুসহাব আহমেদ হিসাম। সে খন্দকী এলাকার বজল আহমেদ কন্ট্রাক্টর বাড়ির মৃত মোজাফ্ফর আহমদের পুত্র। হিসামের মা কানাডায় অবস্থান করায় তার দেখভাল করছিলেন চাচারা। কিন্তু গতকাল দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় হিসাম।
খবর পেয়ে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ছুটে যান হিসামের চাচা মো. মানিক। তিনি চমেক হাসপাতাল থেকে মুঠোফোনে জানান, এসএসসি পরীক্ষার পর তার কানাডা চলে যাওয়ার কথা ছিল। এ ব্যাপারে সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। এসএসসি পরীক্ষা না পেছালে সে এতদিনে কানাডায় তার মায়ের কাছে থাকতো।
চিকনদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. হাসান জামান বাচ্চু বলেন, ‘মিরসরাইয়ে খৈয়াছড়া ঝর্না দেখে ফেরার পথে ট্রেনের ধাক্কায় আমার এলাকার ১১ জন নিহত হয়েছে। এ খবর শুনে আমি দ্রæত চমেক হাসপাতালে ছুটে আসি। ৫/৬ জনকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।’