শোকাবহ আগস্ট

4

পূর্বদেশ ডেস্ক

বাংলাদেশ ও বাঙালির ইতিহাস এলে সবার আগে যে নামটি উঠে আসে তিনি হলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার এক তর্জনির ইশারায় একটি জাতি পায় স্বাধীনতা। স্বাধীন ভূখন্ড।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিঃসন্দেহে বাঙালি জাতির সর্বকালের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা। এ মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি। বাঙালির এ মহান আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু পাকসামরিক শাসকগোষ্ঠীর ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে এ অঞ্চলকে ‘বাংলাদেশ’ বলে অভিহিত করতে শুরু করলেন। ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে বাঙালি জাতির স্বাধীনসত্তাকে জাগ্রত করতে সক্ষম হন। তাঁর নেতৃত্বে এ দেশের সকল স¤প্রদায়ের মানুষ হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান এক ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতিতে পরিণত হয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।একাত্তরের এ মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাংলাদেশের মানুষ তথা ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের মানুষের দীর্ঘকালের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি। এ আন্দোলনটা ছিল প্রকৃত অর্থে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন। একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ডে বসবাসকারী জনগণের আত্মপরিচয় এবং আশা-আকাক্সক্ষা ও চিন্তা-ভাবনা সম্বন্ধে সম্মিলিত চেতনা হলো জাতীয়তাবাদের মূল ভিত্তি। এ জাতীয় চেতনা ধর্মভিত্তিক বা গোষ্ঠীভিত্তিক বা সম্প্রদায়ভিত্তিক চেতনা নয়। এটি প্রধানত এবং মূলত অসাম্প্রদায়িক বা ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা এ অর্থে যে, একটি ভূখন্ডের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অধিবাসীদের আত্মপরিচয়; নিজেদের সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞান সম্পর্কে সম্মিলিত চেতনা থেকে এ জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে।
এমন মধুর ইতিহাসের নির্মাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু বড়ই আশ্চর্য এবং পরিতাপের বিষয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের পর যে গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র ও অস্ত্রের জোরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে, যারা স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বকে মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেনি এবং পাকিস্তানের সমর্থক ছিল, তারা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করতে শুরু করল। এ প্রক্রিয়া তারা ২১ বছর অব্যাহত রেখেছিল।