শেষ হলো চসিক নির্বাচন অভিনন্দন নব-নির্বাচিত নগরপিতা রেজাউল করিম চৌধুরীকে

36

গতকাল বুধবার বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার মধ্যদিয়ে শেষ হলো বহু কাক্সিক্ষত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। নগরবাসী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব রেজাউল করিম চৌধুরীকে নির্বাচিত করেছেন তাদের আগামী দিনের নগর প্রতিনিধি তথা অভিভাবককে। দৈনিক পূর্বদেশ পরিবারের পক্ষ থেকে উঞ্চ অভিনন্দন নব-নির্বাচিত নগর পিতা রেজাউল করিম চৌধুরীকে। নির্বাচন নিয়ে যত কথাই হোক, বাস্তবতা হচ্ছে, একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বচ্ছ রাজনীতিক হিসাবে রেজাউল করিমের যে ভাবমূর্তি তাতে নগরবাসী যথাযথ যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নিয়েছেন বলে আমাদের বিশ্বাস। এ দুই গুণের বাইরে তাঁর আরো একটি গুণ রয়েছে, আর তা হলো তিনি একজন লেখক ও প্রাবন্ধিক। ছাত্র জীবন থেকে তাঁর রাজনীতির হাতেকড়ি। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। তার ব্যক্তিত্ব ও রাজনীতির অভিজ্ঞতা থেকে ধরে নেয়া যায়, রেজাউল করিম তার প্রত্যয় অনুযায়ী এ নগরীকে সাজাবেন। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, নগর পিতা হিসাবে নগর ব্যবস্থাপনা ও সেবা প্রদানের প্রেক্ষাপট থেকে যেমন, দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকেও তেমনি এ নির্বাচন গুরুত্বপূণ ছির্ল। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। তবে উৎসাহ-উদ্দীপনার পাশাপাশি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও ছিল। নির্বাচনী প্রচারণার সময়ে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণ কেটেছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদেরও পরস্পরের প্রতি সৌহার্দপূর্ণ আচরণ লক্ষণীয় ছিল। ২৭ জানুয়ারি ছিল চূড়ান্ত পরীক্ষা! সেই পরীক্ষায়ও কিছু অঘটন, শঙ্কা ও উদ্বেগ ডালপালা বিস্তার করলেও ভোটগ্রহণ এবং পরবর্তী পর্যায়গুলো সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্নভাবে সম্পন্ন হয়েছে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন, ৪০টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৭২ জন এবং ১৪টি সংরক্ষিত পদে ৫৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এই নির্বাচনে কয়েকটি রাজনৈতিক দল প্রতিদ্ব›দ্বীতা করলেও মূল প্রতিদ্ব›দ্বীতা হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির। আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরী বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন। নির্বাচন আর খেলার মাঠের জয় পরাজয় আছে। এ সত্যিকারের বিধান সবাইকে মেনে নিতে হবে। আমাদের দেশে নির্বাচনে পরাজিত পক্ষ বিজয়ীদের সহজেই মেনে নেয় না। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ আনলেও বিএনপির পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোন প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। আমরা আশা করব, অতীতের সংস্কৃতির বিপরীতে গিয়ে সকল রাজনৈতিক দল বিজয়ী প্রার্থীকে গ্রহণ করবেন, সেই সাথে আগামীতে একটি আধুনিক, সমৃদ্ধ ও উন্নত নগরী গড়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন। অবশ্যই বিজয়ী প্রার্থীকেই সহযোগিতা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। আমরা নির্বাচনের তিনদিন আগে লক্ষ্য করেছি প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে অপরূপ এক স্বপ্নের শহর গড়ার অঙ্গীকার করেছেন। প্রত্যেকেই যানজটমুক্ত, দূষণমুক্ত, সচল, ইন্টেলিজেন্ট, সুন্দর বাসযোগ্য স্বপ্নের চট্টগ্রাম নগরী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মেয়র প্রার্থীদের এসব প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরিতে ভোটাররা আশ্বস্থ হয়েই নির্বাচনে তাদের রায় দিয়েছেন। আমরা আশা করব নির্বাচিত মেয়র তাঁর সেই ইশতেহার বাস্তবায়নে আন্তরিকতার সাথে কাজ করবেন। বলাবাহুল্য, সিটি করপোরেশনের মেয়রের কর্তৃত্ব খুবই কম। তাদের কাজ করতে হয় বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে। স্বাভাবিকভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে মেয়রদের কাছে।
আমরা মনে করি, নির্বাচনী প্রতিশ্রæতিগুলো শুধু প্রতিশ্রæতির মধ্যে না থেকে আইনের সংস্কার এবং বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে, তাহলেই নগরবাসীর প্রকৃত উন্নয়ন সেবা নিশ্চিত হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। আমরা অবশেষে ধন্যবাদ জানাই নির্বাচন কমিশনকে। সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন অংশগ্রহণকারী প্রার্থী, ভোটার এবং সমর্থনদানকারী রাজনৈতিক দলগুলোরও যে দায়িত্বশীল ভ‚মিকা ছিল, তারা পুরোপুরি না হলেও কিছুটা হলেও পালন করেছেন। তবে ক্ষত থেকে গেল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুইএকটি কেন্দ্রের খুনোখুনির ঘটনার। দেশের জনগণ আগামীতে আরো সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করে।