শেষ বলেই পাকিস্তান ‘শেষ’

17

পূর্বদেশ ক্রীড়া ডেস্ক

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানে চার-ছক্কার ফুলঝুরি। তার মধ্যে পাক-ভারতের ম্যাচ হলে কথাই নেই। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উত্তেজনার পারদ ছড়ানো থাকে। ঠিক সেরকমই এক রুদ্ধশ্বাস মহারণ দেখেছে গতকাল ক্রিকেটপ্রেমিরা। বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পেন্ডুলামের মতো দুলছিল ম্যাচটি। কখনো জয়ের পাল্লা পাকিস্তানের দিকে আবার কখনো ভারতের দিকে। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে উপস্থিত প্রায় লাখ খানেক দর্শক তখন দারুণ উৎকণ্ঠায়। তবে শেষ পর্যন্ত শেষ বলেই ম্যাচটি ভারতই জিতে নেয়। গতকাল সুপার টুয়েলভের গ্রæপ টুয়ের ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ১৫৯ রান করে পাকিস্তান। জবাবে শেষ ওভারে কোহলি-বীরত্বে জয় তুলে নেয় ভারত।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ছিল ১৬ রান। ব্যাট হাতে উইকেটে ছিলেন বিরাট কোহলি এবং হার্দিক পান্ডিয়া। মোহাম্মদ নওয়াজের করা ওভারের প্রথম বলেই ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরেন ৪০ রান করা পান্ডিয়া। ৩৭ বলে ১ চার এবং ৩ ছক্কায় পান্ডিয়া এ রান করেন।
পান্ডিয়া চলে যাওয়ার পর বিরাট কোহলির সাথে জুটি গড়েন দিনেশ কার্তিক।ওভারের দ্বিতীয় বলে দিনেশ ১ রান নেন। তৃতীয় বলে ২ রান নেন কোহলি। ফলে শেষ ৩ বলে ভারতের প্রয়োজন পড়ে ১৩ রানের।
ওভারের চতুর্থ বলে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। নওয়াজের করা বল কোহলির কোমড়ের নিচে থাকলেও ছক্কা হাঁকানো বলে উচ্চতার কারণ দেখিয়ে নো বল ডেকে বিকর্তের জন্ম দেন আম্পায়ার। ফলে ওই বল থেকে ৭ রান পেয়ে যায় ভারত।
উত্তেজনাকর শেষ ওভারে নো বল দিয়ে ঘাবড়ে যান নওয়াজ। ফ্রি হিডে বলটি করে ওয়াইড। ফলে আরও একটি রান পেয়ে যায় ভারত। পরের বলে কোহলি স্ট্যাম্প উড়িয়ে দিলেও ফ্রি হিড থাকায় বেঁচে যান এবং দৌড়ে ৩ রান নেন। যার কারণে জয়ের জন্য শেষ ২ বলে ভারতের প্রয়োজন হয় ২ রান।
পঞ্চম বলে দিনেশ কার্তিক আউট হলে শেষে বলে ভারতের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২ রান। তবে নওয়াজ আবারও ওয়াইড বল করলে স্কোর সমান হয়ে যায়। ফলে শেষ বলে ১ রান নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন।
অপর প্রান্তে ৮২ রানে অপরাজিত ছিলেন বিরাট কোহলি। ওয়ান ডাউনে ব্যাট করতে নেমে ৫৩ বলে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কার মারে এ ইনিংস সাজান বিরাট কোহলি।
পাকিস্তান সব ফিল্ডারকে ৩০ গজের বৃত্তে নিয়ে আসল, যাতে সিঙ্গেল না হয়। কিন্তু নওয়াজ বলটা করলেন একবারেই সাদামাটা। প্রায় ওভার পিচড বলটা অশ্বিন মিড অফের ওপর দিয়ে জাস্ট তুলে দিলেন। লং অফে ফিল্ডার নেই, বল চলে গেল বাউন্ডারিতে! ৪ উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয় পেয়ে গেল ভারত।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ভারতীয় বোলিংয়ের সামনে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয় দুই ওপেনার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানকে। উইকেটের সুবিধা নিয়ে পাকিস্তানি ব্যাটারদের নাভিশ্বাস তুলে ছাড়েন আর্শদ্বীপ সিং ও ভুবনেশ্বর কুমাররা।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই পাকিস্তান হারিয়ে বসে তাদের অধিনায়ককে। গোল্ডেন ডাক মেরে ১ বলে ০ রানে ফিরেন বাবর। আর্শদীপ সিংয়ের দুর্দান্ত এক ডেলিভারি বাবরের প্যাডে লাগলে আবেদন হয়, আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার।
বাবরের বিদায়ের খানিকবাদে একই পথ ধরেন রিজওয়ানও। দলীয় ১৫ রানের মাথায় তার উইকেটও হারিয়েছে পাকিস্তান। আর্শদ্বীপের বলে ভুবনেশ্বরের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। তার আগে ১২ বল খেলে করে যান মাত্র ৪ রান।
বিপর্যয় যখন চোখ রাঙ্গাচ্ছে, ঠিক তখনি তিনে নামা শান মাসুদের সঙ্গে দারুণ এক জুটি গড়েন চার নম্বর ব্যাটার ইফতিখার আহমেদ। তৃতীয় উইকেট জুটিতে তারা দুজন গড়েন অবিচ্ছিন্ন ৫৪ রানে জুটি। এর মধ্যে ইফতিখার ৩৪ বলে করেন তার ব্যক্তিগত অর্ধশতক।
অর্ধশতক করার খানিকবাদেই ৫১ রানে শামির বলে এলবিডবিøউ হয়ে যান ইফতিখার। তার ইনিংসটিতে ছিল ২ চার ও চার ছক্কার মার। এরপর হঠাৎ করেই ধ্বস নামে পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে। বল হাতে ধস নামান হার্দিক পান্ডিয়া।
পান্ডিয়ার বলে একে একে বিদায় নেন শাদাব খান (৫), হায়দার আলী (২) ও মোহাম্মাদ নাওয়াজ (৯)। এরপর হার্ডহিটার হিসেবে পরিচিত আসিফ আলীকে দুই রানে বিদায় করেন আর্শদ্বীপ। তাতেই মূলত শেষ হয়ে যায় পাকিস্তানের বড় রান করার আশা।
এর মাঝে ৪০ বলে ৫ চারের মারে ব্যক্তিগত অর্ধশতক তুলে নেন শান মাসুদ। শেষ জুটিতে শাহীন আফ্রিদিকে নিয়ে ছোট্ট একটা জুটি গড়ে দলকে লড়াই করার মতো পুঁজি এনে দেন তিনি। ৮ বলে ১টি করে চার-ছক্কায় ১৬ রান করেন শাহীন। শেষ পর্যন্ত ৪২ বলে ৫ চারে ৫২ রানে অপরাজিত থাকেন মাসুদ।

অপরদিকে গতকাল দিনের প্রথম ম্যাচে লঙ্কানদের কাছে ৯ উইকেটে হেরে ধাক্কা খায় আয়ারল্যান্ড। প্রথম ব্যাট করে শ্রীলঙ্কাকে ১২৯ রানের লক্ষ্য দেয় অ্যান্ড্রæ ব্যালবার্নির দল। জবাবে ৫ ওভার হাতে রেখেই ম্যাচ জিতেছে দাসুন শানাকার দল।
সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নবম ওভারে দলীয় ৬৩ রানে আউট হন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। তিনি করেন ২৫ বলে ৩১। এরপর অবিচ্ছিন্ন ৭০ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন কুশল মেন্ডিস ও চারিথ আসালাঙ্কা। ৪৩ বলে ৬৮ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন কুশল মেন্ডিস। ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন আসালাঙ্কা। এর আগে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১২৮ রান সংগ্রহ করে আয়ারল্যান্ড। হ্যারি টেক্টর ৪২ বলে ৪৫ ও পল স্টারলিং ২৫ বলে ৩৪ রানের ইনিংস খেলেন। জর্জ ডকরেল ১৪ ও লরকান টাকার ১০ রান করেন। এ ছাড়া আর কোনো আইরিশ ব্যাটার দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছতে পারেননি।
শ্রীলঙ্কার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও মহেস থিকসানা দুটি করে উইকেট পান। বিনুরা ফার্নান্দো, লাহিরু কুমারা ও চামিকা করুণারতেœর শিকার একটি করে উইকেট।
আজকের খেলা-বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস (সকাল ১০টা), দক্ষিণ আফ্রিকা-জিম্বাবুয়ে (দুপুর ২টা)