শেষ পর্যন্ত বাদ পড়ল ফেরদৌস

72

‘আমরা ফেরদৌসের জন্য অপেক্ষা করব। আশা করছি এই ঝামেলা ফেরদৌস কাটিয়ে উঠে আবার শুটিংয়ে ফিরবেন।’ গত ২৮ এপ্রিল প্রথম আলোকে বলেছেন, ভারতের বাংলা ছবির অন্যতম জনপ্রিয় নায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তিনি আরও বলেন, ‘ফেরদৌস আমার বহু বছরের বন্ধু। আমাদের সম্পর্কটা পারিবারিকও। আমার চিন্তা, ওর যেন কোনো ক্ষতি না হয়।’
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘দত্তা’ অবলম্বনে কলকাতায় তৈরি হচ্ছে চলচ্চিত্র। সেখানে ‘বিলাস বিহারি’ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ফেরদৌস। এপ্রিল মাসে বোলপুরে ছবিটির শুটিংও করেছেন। নির্মাতাদের মতে, ছবির ১০ ভাগ শুটিং হয়েছে। ছবিতে বিজয়ার চরিত্রে অভিনয় করছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
ওই সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী কানহাইয়া লাল আগরওয়ালের প্রচারণায় অংশ নেন ফেরদৌস। সেদিন তিনি রায়গঞ্জ আসনের করণ দিঘি থেকে ইসলামপুর পর্যন্ত তৃণমূলের প্রচার মিছিলে অংশ নেন। এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, তৃণমূল তো বিদেশি তারকা এনে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছে।
নির্বাচন কমিশনের কাছে এ ব্যাপারে তখন অভিযোগ করে রাজ্য বিজেপি। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ফেরদৌসকে তখনই ভারত ছাড়ার আদেশ দেয় দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাঁর ভিসা বাতিল করা হয়। তখন ভারতের সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, দেশটিতে তাঁকে কালোতালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
আজ শনিবার ভারতের ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ‘দত্তা’ ছবি থেকে ফেরদৌসকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন ‘বিলাস বিহারি’ চরিত্রে অভিনয় করবেন সাহেব চট্টোপাধ্যায়। ছবির পরিচালক নির্মল চক্রবর্তী বলেছেন, ‘ফেরদৌসের জন্য আমরা প্রায় ছয় মাস অপেক্ষা করেছি। তাঁর ভিসা নিয়ে সমস্যা হয়েছে। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছুই হলো না। শেষ পর্যন্ত বিলাস বিহারি চরিত্রে সাহেব চট্টোপাধ্যায়কে নিয়েছি। তাঁকে নিয়ে আগামী ডিসেম্বরে আবার ছবিটির শুটিং শুরু করব।’
তিনি জানান, ফেরদৌসকে নিয়ে বাংলাদেশে গিয়ে ছবিটির শুটিং করার পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু ছবির যা বাজেট, তা দিয়ে সেই পরিকল্পনামতো কাজ করা সম্ভব না। সবকিছু মিলিয়েই ‘বিলাস বিহারি’ চরিত্রের জন্য সাহেব চট্টোপাধ্যায়কে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে কলকাতা থেকে ঢাকায় ফিরে ১৬ এপ্রিল পুরো বিষয় নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন ফেরদৌস। তখন তিনি বলেছেন, ‘একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে অন্য একটি দেশের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ কোনোভাবেই উচিত হয়নি। আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আশা করি, সংশ্লিষ্ট সবাই আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।’
১৯১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম প্রকাশিত হয় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘দত্তা’। ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত হয় ‘দত্তা’র নাট্যরূপ ‘বিজয়া’। এই উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৫১ ও ১৯৭৬ সালে ভারতে দুটি ছবি তৈরি হয়েছে। এবার একই উপন্যাস নিয়ে নির্মল চক্রবর্তী তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন।