শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ

20

আজ ১৭ মে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৪৩তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধার এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। তাঁর এ আগমন ছিল বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলতুন্নেছার হত্যাকাÐের পর প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন তাদের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যেদিন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়, শেখ হাসিনা তখন তার ছোটবোন শেখ রেহানা এবং দুই সন্তানসহ স্বামীর কর্মস্থল পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন। ফলে তারা ঘাতকদের হাত থেকে প্রাণে বেঁচে যান। পশ্চিম জার্মানি থেকে সেই সময় ভারত সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেন শেখ হাসিনার স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী এমএ ওয়াজেদ মিয়া। ভারত সরকার আবেদনে সাড়া দিলে ২৫ আগস্ট সকালে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে দিল্লি পৌছান শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, ওয়াজেদ মিয়া এবং তাদের দুই সন্তান। দিল্লিতে পৌঁছানোর দুই সপ্তাহ পর ওয়াজেদ মিয়া এবং শেখ হাসিনা ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বাসায় যান। সেখানেই শেখ হাসিনা ১৫ আগস্টের পুরো ঘটনা জানতে পারেন।
১৯৭৯ ও ১৯৮০ সালে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা বিভিন্ন সময়ে দিল্লিতে গিয়ে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিতে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রæয়ারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এর এক সপ্তাহ পরে ২৪ ফেব্রæয়ারি ড. কামাল হোসেন, জিল্লুর রহমান, আব্দুল মান্নান, আব্দুস সামাদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা দিল্লি যান। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২৮ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত কয়েকটি বৈঠক করেন তাঁরা। দেশের গণতন্ত্র আর প্রগতিশীলতার রাজনীতি ফেরাতে রাতে দুই শিশুসন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছোটবোন শেখ রেহানার কাছে রেখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। তখনকার রাজনীতির মতোই প্রকৃতিও সেদিন ছিল ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ। ১৯৮১ সালের ১৭ মে ছিল কালবৈশাখীর ঝড়ো হাওয়ার সাথে ছিল প্রচÐ বৃষ্টি। কিন্তু এ বৈরি আবহাওয়া বৈরি রাজনৈতিক পরিবেশ কিছুই সেদিন গতিরোধ করতে পারেনি গণতন্ত্রকামী লাখ লাখ মানুষের মিছিল। মুষলধারার বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে তারা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন নেত্রী কখন আসবেন এই প্রতীক্ষায়। অবশেষে ৪টায় কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে জনসমুদ্রের জোয়ারে এসে পৌঁছান শেখ হাসিনা। তাকে একনজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত রাস্তাগুলো রূপ নিয়েছিল জনসমুদ্রে। তখন স্বাধীনতার অমর ¯েøাগান “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় বাংলার আকাশ বাতাস। জনতার কণ্ঠে বজ্রনিনাদে ঘোষিত হয়েছিল ‘পিতৃহত্যার বদলা নিতে/লক্ষ ভাই বেঁচে আছে, শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই।’ দেশের মাটিতে পা দিয়ে লক্ষ লক্ষ জনতার সংবর্ধনায় আপ্লুত শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, “সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই’। “আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই।” তিনি বলেন, “আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।” তিনি আরো বলেন, “জীবনের ঝুঁকি নিতেই হয়, মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত¡ থেকে বঞ্চিত হয়।” দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার; বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার ও স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের হৃত গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সার্বভৌম সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এরপর আর পেছনে ফিরে থাকাননি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। পিতার আদর্শের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সকল ষড়যন্ত্র আর প্রতিবন্ধকতাকে এড়িয়ে এ দেশে গণতন্ত্র, মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকারসহ বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে এখান ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, এমজিডি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গসমতা, কৃষি দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলে পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক বৃদ্ধি প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি ও পরিশ্রমের ফসল। এছাড়া পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, চট্টগ্রাম গভীর সমুদ্র বন্দর, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ, ঢাকা মেট্রোরেলসহ, কর্ণফুলী টানেলের মত মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে তাঁর সাহসিকতা এখন বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কেড়েছে। ২০৪১ সালে এদেশ উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ পরিনত করতে তার যে ভিশন তা বাস্তবায়ন করতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিকল্প নেই। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফলতা, সুস্থতা ও দীর্ঘজীবন কামনা করছি।