শূন্যরেখায় গোলাগুলি চলছে আগুনও জ্বলছে

12

বান্দরবান ও নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তুমব্রু’র ওপারে শূন্যরেখার অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবিরে গত বুধবারে সংঘটিত গোলাগুলি ও আগুনের ঘটনার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে ৫ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয়হীন হয়েছে। ঘটনায় পাঁচশ এর অধিক বসতঘর পুড়ে যায়। এসময় বসতঘর পুড়ে যাওয়াদের পাশাপাশি অন্য রোহিঙ্গারাও বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। যাদের সংখ্যা ৪ হাজারের অধিক। তারা সবাই এখন বাংলাদেশের তুমব্রু, কোনারপাড়া, পশ্চিমপাড়া, মধ্যমপাড়া ও উত্তরপাড়ায়। অনেকেই ক্যাম্পে চলে গেছে গোপনে।
এদিকে আহত-নিহতদের ব্যাপারে এখনো সঠিক তথ্য কেউ দিচ্ছে না। জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বনজঙ্গলে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নারী, বৃদ্ধ ও শিশুরা প্রচন্ড শীতে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে দেখা যায়, ঘটনার সময় দিগি¦দিক পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারা ফিরে আসতে পারছে না। যারা মিয়ানমার ভূখন্ডে আশ্রয় নিয়েছিল তারা মিয়ানমারের তুমব্রু রাইট গ্রামে চরম সমস্যায় জীবন কাটাচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে তুমব্রু গ্রামে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জড়ো করে পুশব্যাক করতে চেষ্ঠা করছে প্রশাসন। সব মিলে এক হযবরল অবস্থা বিরাজ করছে তুমব্রুতে।
এক সূত্রে জানা গেছে, বিজিবি স্থানীয় ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারগণের মাধ্যমে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন জায়গা হতে খুঁজে বের করে পুশব্যক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গতকাল ভোর থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কিছুক্ষণ পর পর গুলির শব্দ শোনেন বলে জানায় স্থানীয়রা। অন্য দিনের তুললায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার ক্যাম্পটিতে ৫শ ৩০টি ঘর ছিল। সেখানে ৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করতেন।
তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা দিল হোসেন বলেন, হঠাৎ একদল মুখোশধারী এসে আগুন লাগিয়ে দেয়। এরপর ছেলে-মেয়ে নিয়ে পালিয়ে আসি।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, শূন্যরেখার পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা চরম আতঙ্কে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমেন শর্মা বলেন, অধিকাংশ রোহিঙ্গার ঝুপড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা শূন্যরেখা থেকে অনুপ্রবেশ করেছে। তারা ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তবে সেখানে কয়টি পরিবারের মোট কতজন রোহিঙ্গা রয়েছে এটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। শূন্যরেখার এসব রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে আলাপ করা হচ্ছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের শূন্যরেখায় ফেরত পাঠানো হতে পারে জানান নাইক্ষ্যংছড়ির ইউএনও। এখনও কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা শূন্যরেখায় অবস্থান করলেও ‘বেশিরভাগ মিয়ানমারে অভ্যন্তরে চলে গেছে’ জানিয়ে ইউএনও রোমেন শর্মা বলেন, সীমান্তের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং প্রশাসন এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছে।
এ ঘটনায় এমএসএফ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য মতে ঘটনায় একজন নিহত আর দুইজন আহত ছাড়া আর কোনো হতাহতের তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী। তিনি জানান, হামিদ উল্লাহ (২৭) নামের নিহত রোহিঙ্গার মরদেহ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। গুলিবিদ্ধ মুহিব উল্লাহকে (২৫) আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত অপর শিশু এখনও কুতুপালংয়ে এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।