শুল্ক ছাড়ের পরেও চিনির বাজারে অস্থিরতা

25

ফারুক আবদুল্লাহ

চিনির দাম গত ছয় মাসে মোট চারবার বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কোনোবারই সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম কার্যকর হয়নি। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চিনি কিনতে হয়েছে ভোক্তাদের। নানা অজুহাতে কাটেনি চিনির বাজারে অস্থিরতা। আসন্ন রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার চিনি আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়েছে। কিন্তু বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি, উল্টো দাম বেড়েছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, শুল্ক ছাড়ের ফলে খুচরা বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। কারণ পাইকারি বাজারে চিনির দাম কমানো না হলে খুচরা বাজারে প্রভাব পড়বে না।
তবে আমদানিকারকরা বলছেন, শুল্ক কমানোর পূর্বে যে চিনি আমদানি করা হয়েছে, সেগুলো এখনও বিক্রি শেষ হয়নি। শুল্ক ছাড়ের পর এলসি খুলে চিনি আমদানি করলে সেগুলো বাজারে আসতে দুই মাস সময় লাগতে পারে।
এদিকে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়েছে। একই সঙ্গে প্রতি টন অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে তিন হাজার টাকা এবং পরিশোধিত চিনিতে ছয় হাজার টাকা আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমদানিকারকরা আগামী ৩০ মে পর্যন্ত শুল্ক ছাড়ের এই সুবিধা পাবেন।
বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমান জানান, ‘আমরা চিনির শুল্ক কমানোর জন্য দু-তিন মাস আগেই বলেছিলাম। কিন্তু সরকার তখন উদ্যোগ নেয়নি। তখন শুল্ক কমানো হলে ভোক্তারা রমজানে সেই সুফল পেতেন।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে খুচরা বাজারে চিনির দাম বেড়েছে প্রায় ৪৬ শতাংশ। খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, পাইকারি বাজারে দাম বেশি। পাইকারিতে না কমলে খুচরা বাজারে দাম কমার কোনো সুযোগ নেই।
দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গত বুধবার এক বস্তা চিনি বিক্রি হয়েছে ৫৩৫২ টাকায়। মণপ্রতি চিনির ডিও বিক্রি হয়েছে ৫৩২৫ থেকে ৫৩৩০ টাকায়। সেই হিসেবে কেজি প্রতি চিনি ১০৭ টাকা দরে বিক্রি হয়, যা এক সপ্তাহ আগে কেজিপ্রতি ১০৬ টাকায় বিক্রি হয়।
নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার পাইকারি দোকান জয় ট্রেডার্স এর ম্যানেজার জানান, গত ১৫ দিন পর্যন্ত কেজিপ্রতি চিনি ১০৯ টাকা দরে বিক্রি হয়। এর আগে ১০৭ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
চকবাজার ও বহদ্দারহাট সহ নগরীর বেশকিছু বাজারে খুচরা দোকানে কেজিপ্রতি চিনি ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে নগরীর অলিগলির দোকনে ১১৫-১২০ টাকা পর্যন্ত চিনি বিক্রি হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য মতে, শুধু ফেব্রæয়ারি মাসেই চিনিবাহী জাহাজ এসেছে পাঁচটি, যেখানে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি আছে ২ লাখ ৪১ হাজার টন।
কেন্দ্রিয় ব্যাংকের তথ্য মতে, এ বছর জানুয়ারিতে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯৪১ মেট্রিক টন চিনির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। এক বছর আগের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ১১ হাজার ৪৯৩ মেট্রিক টন। এ বছরের জানুয়ারিতে ৫৪ হাজার ৪৪৮ মেট্রিক টন বেশি চিনির ঋণপত্র খোলা হয়েছে।