শুরুর খরা পুষিয়ে দিচ্ছে বর্ষা

65

কখনও রিমঝিম ছন্দ তুলে আবার কখনওবা অঝোর ধারায় বৃষ্টিকে সঙ্গী করে এবার যাত্রা শুরু হয়নি আষাঢ়ের। এমনকি মধ্য আষাঢ়েও বর্ষার চিরচেনা রূপের দর্শন মিলে নি। কোথাও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি আবার কোথাওবা অস্বস্তির তাপদাহে বর্ষা নিজের চেহারাই পাল্টে ফেললো কিনা এমন ফিসফাসও শোনা যাচ্ছিল। তবে, আষাঢ়ের বিদায়ী সপ্তাহে এসে বর্ষা চিরচেনা রূপে নিজেকে মেলে ধরার পাশাপাশি শুরুর দিকের খরাটাও যেন পুষিয়ে দিচ্ছে। বর্ষণের ঝাঁপি খোলা পরিস্থিতিতে গত কয়েকদিনের মত আজ মঙ্গলবারও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ধসের সতর্কতা জারি রেখেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
লঘুচাপের বিদায়ে আবহাওয়া পরিস্থিতিতে একাধিপত্য বিস্তার করে চলতি জুলাইয়ের প্রথম দিনেই সীমান্তবর্তী ও উপকূলীয় টেকনাফে মৌসুমের সর্বোচ্চ পরিমাণ বৃষ্টি ঝরিয়ে স্বরূপে আবির্ভূত হতে থাকে বর্ষা। যা সংখ্যায় দ্বিশতকের কাছাকাছি। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবেই অব্যাহত রয়েছে তার দাপট। আগেরদিন চট্টগ্রামের সীতাকুÐ ও বরিশালের খেপুপাড়ায় বর্ষার শতক পেরোনো ইনিংসের দেখা মিললেও গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘন্টায় শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বিভাগেরই দুই অঞ্চলে দুটি দ্বিশতক ছাড়ানো ইনিংসের পাশাপাশি মহানগরসহ আরও চারটি অঞ্চলে শতক পেরোনো ইনিংস খেলল বর্ষা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের রেকর্ড অনুযায়ী, সোমবার উপকূলীয় অঞ্চল সীতাকুÐে রেকর্ডকৃত দুইশ’ ৩১ মিলিমিটারই ছিল একইসাথে দিনের ও চলতি বর্ষা মৌসুমের এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। একইভাবে দুইশ’ সাত মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে। এছাড়া, চট্টগ্রাম মহানগরের পাশাপাশি দুই উপকূলীয় এলাকা স›দ্বীপ ও হাতিয়ায় রেকর্ডকৃত বৃষ্টিপাতের পরিমাণও ছিল দ্বিশতকের কাছাকাছি। নগরে একশ’ ৮৯ এবং উপকূলীয় অঞ্চল হাতিয়া ও স›দ্বীপে যথাক্রমে একশ’ ৭৯ ও একশ’ ৬৭ মিলিমিটার। নোয়াখালী বা মাইজদী কোর্টে রেকর্ডকৃত বৃষ্টির পরিমাণ ছিল একশ’ ১৮ মিলিমিটার। এর বাইরে চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনীতে ৮৯, কক্সবাজারে ২৪, কুতুবদিয়ায় ৮৯ আর টেকনাফে ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চট্টগ্রামের বাইরে সারাদেশের মধ্যে শুধুমাত্র উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুরেই রেকর্ড করা হয়েছে একশ’ ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। এছাড়া, দেশের সবকটি বিভাগের প্রায় সব অঞ্চলেই কমবেশি বৃষ্টিপাতের তথ্য পাওয়া গেছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের রেকর্ডকৃত পরিসংখ্যানে।
অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ সতর্কবার্তা জানিয়ে পূর্বদেশকে বলেন, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে গতকাল সোমবার সকাল দশটা থেকে পরবর্তী চব্বিশ ঘণ্টা মানে আজ মঙ্গলবার দিবাগত রাত দশটার মধ্যে রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, বরিশাল এবং চট্রগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি ( ন্যূনতম ৮৯ মিলিমিটারের ওপরে ) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারি বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভ‚মিধসের শঙ্কাও রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সোমবার সন্ধ্যা ছয়টার পর থেকে পরবর্তী চব্বিশ ঘন্টার জন্য প্রচারিত পূর্বাভাসে জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় থাকায় আগামী ৪৮ ঘণ্টা দেশজুড়ে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা একই থাকবে। রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরণের বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরণের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারি বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভ‚মিধ্বসের আশঙ্কা রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমূদ্রবন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।