শুভ বড়দিন মুক্তিদাতা প্রভু যীশুর জন্মদিন

112

প্রমোদ দাশ

প্রতি বছর ফিরে আসে ২৫ শে ডিসেম্বর বড়দিন যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন। ২৫ শে ডিসেম্বর আগে ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালী জাতির তথা বাংলাদেশের বিজয় দিবস। নয় মাস রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের পর ৩০ লাখ বাঙ্গালীর আত্মদানের এ বিজয়। আত্মউৎসর্গের এ বিজয়। পরাধীনতার দাসত্ব থেকে বিজয় লাভ করেছিল। আমার মনের ভেতর কেন জানিনা এই সময় ভীষণ নাড়া দেয়।
প্রভু যীশু খ্রীষ্টের জন্মের একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে ছিল মানব জাতির মুক্তির জন্য। সেটি কি? সেটি হল-মানব জাতিকে পাপের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে স্বর্গে নিয়ে যাওয়ার পথ নিশ্চিত করন। পবিত্র শাস্ত্র অর্থাৎ পবিত্র বাইবেলে লেখা আছে ‘সবাই পাপ করেছে এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে বিপথে গেছে’ পাপ থেকে মুক্ত করা কি এতোই সহজ? অবশ্যই নয়? বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ কি এতোই সহজ ছিল? নিশ্চয় নয়? কিন্তু অগণিত মুক্তিকামী মানুষের আত্মত্যাগ আর রক্তের অর্থাৎ ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এ দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল। মুক্ত হয়েছিল তৎকালীন বাংলার সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালী পরাধীনতার দাসত্ব থেকে।
‘যীশু’ নামের অর্থ হলো ‘উদ্ধারকর্ত্তা’ মুক্তিদাতা তাঁর জন্মের শত শত বৎসর পূর্বে ভবিষ্যবাণী করা হয়েছিল –পবিত্র বাইবেলে যিশাইয় পুস্তুকে লেখা আছে একটি শিশু আমাদের জন্য জন্মগ্রহণ করবেন। তাঁর নাম হবে শান্তিরাজ, রাজাদের রাজা-প্রভুদের প্রভু, তাঁর রাজত্ব কখও শেষ হবেনা——।
ভভিষ্যবাণী অনুযায়ী তিনজন পন্ডিত আকাশের তাঁরার পরিচালনায় গোয়াল ঘরে শিশু যীশুকে যাবপাত্রে শোয়ানো দেখতে পেয়েছিলেন। সেই রাতে রাখালেরা মাঠে ভেড়ার পাল পাহারা দিচ্ছিলো ‘হঠাৎ’ একদল স্বর্গদূত তাদের সংবাদ দিলো ভয় করোনা আমরা তোমাদের জন্য এক আনন্দের খবর নিয়ে এসেছি। এ আনন্দ সমগ্র মানব জাতির জন্য সুখবর। আজ দায়ূদের গ্রামে বৈৎলেহেমে তোমাদের উদ্ধারকর্তা জন্মেছেন। তিনিই মমশীহ, তিনিই প্রভু। এ কথা যে সত্যি তার চিহ্ন হল এই তোমরা কাপড়ে জড়ানো এবং যাবপাত্রে শোয়ানে একটি শিশুকে দেখতে পাবে। “লূক২ঃ৮-১২ পদ।
১২ বছর বয়সে বিরুশালেম মন্দিরে-ধর্মগুরুদের সংগে প্রভু যীশু খ্রীষ্টের সাথে প্রশ্নোত্তর আলোচনায় পুরোহিতরা খুব আশ্চর্য জ্ঞান করেছিলেন। ৩০ বছর বয়সে কান্না নামক গ্রামে বিয়ে বাড়ীতে প্রথম অলৌকিক কাজ করেছিলেন-বারটি মঠকার-জলকে উত্তম পানীয় রসে পরিণত করে বিয়ে বাড়ীর সকলকে বিষ্মিত করেছিলেন। মানব জাতির জীবনে এই পবিত্র বিবাহকে সর্ব্বোচ্চ সম্মান করেছিলেন। তবে তিনি পৃথিবীতে তেত্রিশ বৎসর এ পৃথিবীতে কোন বিবাহ করেননি। মানব জাতিকে পাপের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে স্বর্গে নিয়ে যাবার জন্য ক্রুশে নিজের জীবন উৎসর্গ (কোরবানী) করেছিলেন। তিনি মানুষকে ভালবাসতেন, তাঁর তেত্রিশ বৎসর জীবনে বহু মানুষকে রোগ থেকে সুস্থ করেছিলেন। মৃতকে জীবন দিয়েছিলেন। বার বছর বয়সী এক মেয়েকে মৃত্যু থেকে জীবন দিয়েছিলেন, বিধবার একমাত্র সম্বল তার যুবক ছেলেকে মৃত্যু থেকে জীবিত করে বিধবার কাছে ফিরিয়ে দিয়েঠিলেন। কুষ্ঠকে সুস্থ করেছিলেন। অন্ধকে সুস্থ করে দেখবার শক্তি দিয়েছিলেন। আরো বহু আলৌকিক কাজ করে মানব জাতির কল্যাণ সাধন করেছিলেন। শেষে নিজের জীবন ক্রুশে উৎসর্গ করে তিনদিন পর কবর থেকে জীবিত হয়ে উঠে তিনি দেখিয়ে ছিলেন সত্যিই তিনি মানব জাতির মুক্তি দাতা। তার উদাহরণ স্বরূপ আমরা দেখি/ক্রুশের উপরে যীশু খ্রীষ্টের সাথে আরো দুজন দশ্যেকেও ক্রুশে দেয়া হয়েছিল, তাদের একজন প্রভু যীশুকে টিটকারী দিলো, অন্যজন প্রভুকে বিনয়ের সহিত বলেছিল ‘প্রভু আপনি যখন স্বমহিমায় এ পৃথিবীতে ফিরে আসবেন তখন আমাকে একটু স্মরণ করবেন—-। উত্তরে প্রভু যীশু সেই দশ্যুকে বলেছিলেন-‘আজই তুমি আমার সঙ্গে পরমদেশে উপস্থিত হবে’ অথাৎ স্বর্গে উপস্থিত হবে। এখানেই প্রভু যীশু পাপী মানুষকে অকৃত্রিম ভালবাসার প্রমাণ দেখিয়েছিলেন-মানব জাতিকে কতোখানি ভালবাসেন তার প্রমাণ তিনি ক্রুশের উপর যে শক্ররা তাঁকে তাঁর দেহ ক্ষত-বিক্ষত করে যাতনা করেছিল তাদের জন্যে পিতা ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেছিলেন-“পিত এরা কি করছে তা এরা জানেনা! এদের তুমি ক্ষমা কর’ শুধু তাই নয় ক্রুশে নিজের জীবন বলী দিয়ে তিনদিন পর কবর থেকে পুনরুথিত হয়েছিলেন,-এবং চল্লিশদিন পর্যন্ত পাচঁশর বেশী লোককে দেখা দিয়ে ‘জৈতুন’ পর্বতে তার শিষ্যেদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে স্বর্গে চলে গেলেন।
প্রিয় পাঠক তিনি আপনাকে ভালবাসেন, তাই তিনি ক্রুশের উপর তাঁর জীবন উৎসর্গ করে পবিত্র রক্ত ঢেলে দিয়ে আপনার সমস্ত পাপ ধুয়ে দিয়েছেন। পৃথিবী থেকে স্বর্গে চলে যাওয়ার সময় তিনি তাঁর শিষ্যেদের আদেশ দিয়ে বলেছিলেন-‘তোমরা যাও সারা পৃথিবীতে সমস্ত জাতির কাছে এ শুখবর পৌঁছে দাও-যে কেউ আমাকে বিশ্বাস করে অন্তবর স্থান দেয় তবে অনন্ত জীব লাভ করবে। আমি তাকে কখনো দাড়বোনা। শুধুু বিশ্বাস ও গ্রহণের মধ্যে দিয়ে আপনি অনন্ত জীবনের নিশ্চয়তা লাভ করতে পারেন। এতে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আপনার জীবনে থাকতে আসবেন।

লেখক : প্রাবন্ধিক