শুভ জন্মাষ্টমী ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও সম্প্রীতির বারতা বয়ে আনুক

17

 

শ্রীমদ্ভগবদগীতায় উল্লেখ আছে, “যখনই পৃৃথিবীতে অধর্মের প্রাদুর্ভাবে ভক্ত ও সর্বসাধারণের জীবন দুর্বিষহ ও অতিষ্ঠ হইয়া উঠে, দুরাচারীর অত্যাচার ও নিপীড়ন বৃদ্ধি পায়, তখন ধর্ম সংস্থাপন ও নৈতিক জাগরণের জন্য কৃপাবশত ঈশ্বর ‘অবতার’ রূপে এই নশ্বর পৃৃথিবীতে আগমন করে থাকেন। তখন তিনি ষড়গুণ তথা ঐশ্বর্য, বীর্য, তেজ, জ্ঞান, শ্রী ও বৈরাগ্যসম্পন্ন ’পুণ্যাবতার’ রূপে প্রকাশিত হন। তাঁর আবির্ভাবে ধরণী হয় পাপভারমুক্ত। সাধুসজ্জন ও ভক্তদের মনে সঞ্চারিত হয় অনাবিল আনন্দ”। তাঁর এই জন্মলীলাই জন্মাষ্টমী হিসাবে অভিহিত ও স্মরণীয়। সনাতন হিন্দু ধর্মের প্রাণপুরুষ মহামতি শ্রীকৃষ্ণের সেই মহাক্ষণ জন্মতিথি আজ। শুভ জন্মাষ্টমী। এই মহাপুণ্য তিথিতে দেবকী ও বসুদেবের আকুল প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে অত্যাচারী কংসের কারাকক্ষে পুত্ররূপে আবির্ভূত হন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। দুর্গোৎসবের পর এটিই মহা আয়োজনে পালন করা হয়।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই পৃৃথিবীতে শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্মধারী শ্রীকৃষ্ণরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন দ্বাপর যুগে। তাঁর জন্ম হয়েচির বর্ণমালা পিতাসন পরিহিত অবস্থায়। সর্বাঙ্গে ছিল বহুমূল্য বলয় ও মণিমুক্তাখচিত অলংকারাদি। তাঁর আগমনী বার্তায় কারাগারের লোহার শিকল ও বন্ধ দরজা আপনা-আপনি উন্মুক্ত হয়ে যায়। অঝোর বারিধারার সিঞ্চন হতে রক্ষায় অনন্তদেব ফণা বিস্তার করে চক্রধারণ করেন। ভরা ভাদ্রের প্রমত্তা যমুনা তাঁর গমনপথ সুগম করে দেয়। তিনি মানবদেহ ধারণ করে ১২৫ বছর জীবিত ছিলেন। তাঁর জীবনকালকে বিন্যস্ত করলে দেখা যায়, মথুরায় তাঁর জন্ম, গোকুলে নন্দালয়ে পরিবর্ধন, মথুরায় কংস বধ, রাজ্যাধিকার, কুরুক্ষেত্রে পান্ডবদের সঙ্গে সখ্যতা, দ্বারকায় রাজধানী স্থানান্তর ও অতঃপর লীলাবসান।
শ্রীকৃষ্ণের শ্রেষ্ঠ অবদান শ্রীমদ্ভগবদগীতা। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বাণীসমূহই এ মহাগ্রন্থে স্থান পেয়েছে। সব বেদ ও উপনিষদের এটিই সারসংক্ষেপ। গীতায় ঈশ্বর সাধনার বিভিন্ন পথ রয়েছে। জ্ঞান, কর্ম ও ভক্তি যে কোনো পথ ধরে সাধনা করলে ঈশ্বরকে লাভ করা যায়। গীতা মানবজীবনের এক অনন্য জীবনদর্শন। স্বামী বিবেকানন্দের ভাষায়, বিশ্বাস ও প্রেমেই শ্রীকৃষ্ণকে পাওয়া যায়। তিনি অপরাজেয়, ক্ষমাশীল ও পুণ্যময়। তাঁর শুভ আবির্ভাব তিথিতে আমরা বিশ্বের সব মানবসমাজ ও জীবের কল্যাণ কামনা করি। এই দিনে মন্দিরে মন্দিরে অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ প্রার্থনা, কীর্তন. গীতাপাঠ, ধর্মীয় সঙ্গীত, আলোচনাসভা, মহাপ্রসাদ বিতরণ ও কৃষ্ণপূজা। তবে এবার অন্যান্যবারের মত মহাধুমধামের সাথে পথে পথে বের হবে না নয়নাভিরাম শোভাযাত্রা ও আনন্দ মিছিল। গত দেড় বছর ধরে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে সনাতন ধর্মের নেতৃস্থানীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংক্ষিপ্ত পরিসরে জন্মাষ্টমী উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাংলাদেশ একটি ধর্মসহিষ্ণু ও উদার দেশ। এরপরও বিদ্যমান পরিস্থিতি ও বাস্তবতায় সনাতম ধর্মাবলম্বীদের এ উৎসব কর্মসূচি সফল করে তুলতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অধিক তৎপর হতে হবে। আয়োজকদের অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও সচেতনতার সাথে জন্মাষ্টমীর সকল কর্মসূচি বাস্তবায়নে আন্তরিক হতে হবে। একইসাথে জনজট ও যানজট এড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধির প্রতি গবীর মনোযোগ দিতে হবে। সর্বশেষ জন্মাষ্টমী উদযাপন সুন্দর ও সার্থক হউক, এটিই আমাদের প্রত্যাশা। এ উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা।