শুকিয়ে যাচ্ছে ঝিরি-ঝর্ণা পানির তীব্র সংকট

22

বান্দরবানের দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় বিশুদ্ধ জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় ঝিরি-ঝর্ণার পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় পানির স্থিতি নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে। ফলে পানিরস্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এবং শুস্ক মৌসুমে অতি খরার কারণে পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের খাবার পানির অন্যতম প্রধান উৎস ঝিরি-ঝর্ণা, খাল ও নদী। এসব উৎস থেকে পানি পান করে তারা জীবন ধারণ করে। তাই শুস্ক মৌসুমে ঝিরি র্ঝণা শুকিয়ে গেলে তাদেরকে তীব্র পানির সঙ্কটে পড়তে হয়। এসব খাল থেকে পাথর উত্তোলন করায় শুষ্ক মৌসুম আসার আগেই শুকিয়ে যায় ঝিরি র্ঝণা আর খালের পানি। নদীর তীরবর্তী মানুষের পানির কষ্ট আরো দ্বিগুন। তাই প্রাকৃতিক পরিবেশের কথা চিন্তা করে পাহাড়ি এসব মানুষের পানির কষ্ট লাঘবের জন্য পাথর উত্তোলন বন্ধে আরো কঠোর হওয়ার দরকার প্রশাসনকে- এমন মত সংশ্লিষ্ট সচেতন মহলের।
এদিকে চলতি মৌসুমে জেলার লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি এবং থানচি উপজেলার দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় সাধারণ জনগণের চরমভাবে খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, লামার সাতটি, আলীকদমের চারটি, নাইক্ষ্যংছড়ির পাঁচটিসহ অন্যান্য চারটিসহ মোট ২০টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভায় বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। তবে এইসব এলাকায় জনসংখ্যার তুলনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক নলকূপ নেই। যেসব এলাকায় রিং টিউবওয়েল রয়েছে বর্ষা মৌসুমে সেগুলোতে পানি পাওয়া গেলেও শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নীচে নেমে যাওয়ায় রিংওয়েল এবং টিউবওয়েলগুলোতে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে এসকল এলাকার মানুষকে পাহাড়ি ঝিরি, ঝর্ণা ও নদীর পানি পান করতে হয়। তবে পানি সংকট নিরসনে পাহাড়ের দূর্গম এলাকায় তৎপর রয়েছে জেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগ। এছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মানবতার সেবায় প্রতিনিয়ত পাহাড়ের দূর্গম এলাকায় ভুক্তভোগী জনসাধারণের মাঝে খাবার পানি বিতরণ করে যাচ্ছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এছাড়াও লামা উপজেলার যে সকল এলাকা পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় নেই, কিংবা নি¤œ আয়ের জনগোষ্ঠী; তাদের মাঝে ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে করে পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিদিন সকাল-বিকাল বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতে, পানির উৎস রয়েছে এমন এলাকাসমূহ থেকে অবাধে পাথর উত্তোলন এবং পরিবেশ বিনষ্ট করে বনজ সম্পদ ধ্বংস করে বৃক্ষ নিধনের ফলে প্রতিবছরই জেলায় শুষ্ক মৌসুমে পানির উৎস হারিয়ে যায়। ফলে দূর্গম ও গ্রামীণ এলাকাসমূহে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। তাদের মতে, পাথর উত্তোলনে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া ছাড়াও দূর্গম এলাকার আশেপাশের পাড়াগুলোতে পানি সংকটসহ বনের জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। পাহাড় খূঁড়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ না হলে অচিরেই পাহাড়ি এলাকা পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। বিনা পারমিটে ঝিড়ি ও খাল থেকে পাথর উত্তোলন সম্পূর্ণ অবৈধ এবং তা বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ঝিরি-ঝর্ণার সব পাথর আহরিত হওয়ায় এখন পানি সংকট দেখা দিচ্ছে। এতে পাহাড়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ না করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ব্যাপক ক্ষতির আশংকা রয়েছে।
মৃক্তিকা ও পানি সংরক্ষণ বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, পাহাড়ি এলাকায় প্রতিবছর শত শত পাহাড়ে অপরিকল্পিতভাবে জুমসহ নানা ফসল চাষাবাদ করা হয়। ফলে একদিকে পাহাড় ন্যাড়া হয়ে যায়, অন্যদিকে মাটি ক্ষয় হয়। ফলে ঝিরি-ঝর্ণাতে পাহাড়ের ক্ষয়ে মাটিতে নাব্যতা দেখা দেয়। এছাড়াও মানুষ দ্বারা অপ্রয়োজনে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন এবং ঝিরি-ঝর্ণা থেকে পাথর উত্তোলন পানি সংকটের অন্যতম আরেকটি কারণ। ঝিরিতে পাথর না থাকায় এবং পাহাড়ে পর্যাপ্ত গাছ না থাকার কারণে পানির উৎসস্থল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে পড়তে হয়।
তবে সময় মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট সৃষ্টি হয় বলে মনে করেন এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
বান্দরবান জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শর্মিষ্ঠা আচার্য্য বলেন, জেলায় পাহাড়ি এলাকায় ঝিরি-ঝর্ণার পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় পানির স্থিতি নিম্নমুখি। স্বাভাবিক কারণে প্রতিবছর এ সময় পানিরস্তর নিচে চলে যায়। এবছর বৃষ্টি অনেক দেরীতে হচ্ছে, অনাবৃষ্টির কারণে টিউবওয়েলের পানির স্তর নিচে নেমে যায় এবং শুষ্ক মৌসুমে রিংওয়েল এর আশেপাশে পানি পাওয়া যায় না। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে পানির সংকট নিরসন হবে।