শীত ও ছেলেটা

26

 

এই শীতে ও ছেলেটা ছেঁড়া একটা গেঞ্জি পরে ডিম দিতে আসলো। দরজা খুলতেই রুদমিলা দেখলো ডিমের ট্রে হাতে ছেলেটা দাঁড়িয়ে। কপাল কুঁচকে গেলো রুদমিলার।
কি রে শীত লাগছে না তোমার?
হ আফা লাগে তো।
তাহলে এরকম গেঞ্জি পরে আছো কেন? গরম কাপড় নেই?
লজ্জা পেলো খানিক ছেলেটা। রুদমিলা বুঝতে পারলো ওর মনের কথা।
দাও ট্রে টা দাও। আর তোমার নাম কি?
জ্বি আফা আমার নাম মফিজ।
আচ্ছা শুনো মফিজ, তুমি কিছু মনে না করলে আমি তোমাকে কয়েকটা নতুন কাপড় কিনে দিতে চাই। তুমি নিবে?
আফা আম্মা কি কয় দেহি। তারপর আপনেরে জানামু।
ততক্ষণে রুদমিলা মফিজকে ড্রইং রুমে বসতে দিয়েছে। বয়স আর কতো মফিজের দশ এগারো এরকমই।
আচ্ছা মফিজ বাসায় আর কে কে আছে তোমার?
জ্বি আমার আম্মা আর একটা ছোট বইন।
তোমার বাবা?
আব্বাই তো আর এক বেডিরে বিয়ে করছে। আমাগো সাথে থাহেনা।
তোমাদের সংসার কিভাবে চলে?
আম্মা আর আমিই যা আয় করি তা দিয়ে চলে।
তোমার মা কি করে?
একটা সুতার ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। আর আমি কি করি তা তো দেখছেনই।
তোমার লেখাপড়ার কি খবর?
হ আফা রাতে যতটুক পারি টুকটাক করি। আর অহন তো মেলা দিন ধরে স্কুলও বন্ধ। স্কুলে যাওয়া হয়না। নিজে নিজে যা পারি তাই পড়ি।
প্রায়ই সময় মফিজ এসে রুদমিলা সহ তাদের ফ্ল্যাটের অন্যান্য সবাইকে ডিম দিয়ে যায়। ওভাবে কোনদিন কথা বলেনি তার সাথে। পড়াশোনার ব্যাপারে মাঝে মধ্যে এটা ওটা জানতে চাইতো। খুবই চটপটে আর মায়াবী চেহারার ছেলেটার নাম ও জানতো না রুদমিলা। আর ও যখন ডিম নিয়ে আসে তখন রুদমিলার অফিস যাওয়ার তাড়া। কথাই বা বলবে কেমন করে?
আজ ছুটি নিয়েছে অফিস থেকে। সকাল থেকে শরীরটা ম্যাঁজ ম্যাঁজ করছে। শীতের প্রকোপ বেশি আজ। তাই হয়তো শরীর মন দুটোতেই একটু আলস্যে পেয়ে বসেছে। ফুয়াদকে অফিসের জন্য রেডি করে দিয়ে আবার বিছানায় শুয়ে থাকলো রুদমিলা। ফুয়াদ জানতে চাইলো, শরীর খারাপ করলে বলো ডাক্তার এর সিরিয়াল নিই।
রুদমিলা হেসে উড়িয়ে দিলো ফুয়াদের কথায়। সামান্য সর্দি লাগলেও তোমার ডাক্তার ওষুধ এসব লাগবে না? নিজে যেমন আমাকেও তার মধ্যে ফেলো।
হুম আবার তো বলবা তোমার শরীর খারাপ আমি খবর নিইনি। নির্বিকার হয়ে অফিস করছি।
ও তাই? – হেসে উঠলো রুদমিলা
হুম তাই। আর এ সময় সামান্য শরীর খারাপেও অবহেলা করতে নেই মিলা। দেখছো না করোনার প্রকোপ। বিভিন্ন ভাবে করোনা আক্রমণ করছে। তাই সাবধান থাকতে হবে আমাদের। আর আমাকে ফোন করো কেমন লাগছে না লাগছে।
আচ্ছা ঠিক আছে, আল্লাহ হাফেজ।

ওভাবেই আজকে মফিজের সাথে রুদমিলার সাক্ষাৎ। অন্য সময় রহিমা বুয়ার হাতেই ডিম দিয়ে যায় ছেলেটা। রুদমিলার হাতে আজ অখন্ড অবসর। মাঝে মাঝেই এমন হয়। অফিস ছুটির সময়টায় একদম নির্ভার ভাবনাহীন মনে হয়। কেমন যেন একটা গা ছাড়া ছাড়া ভাব।- এটা ভাবতেই হাসি পেলো রুদমিলার।

ড্রইং রুমে বসানো মফিজের সাথে গল্প জুড়ে দিলো রুদমিলা।
এটা সেটা আরও কতো কথা। রুদমিলার সব ভালো দিকগুলো ইচ্ছে করলো মফিজের ভিতর প্রবাহিত করতে। আলোর দেখা পাক ডিম বিক্রেতা আমাদের মফিজ মিঞাও। এরকম একটা আশায় গল্প করে যেতে লাগলো রুদমিলা। গল্প শেষে বললো-
আচ্ছা মফিজ ঠিক আছে তুমি তাহলে কালকে এ সময়টায় এসো তোমার মাকে জিজ্ঞেস করে।
আমি আজই গরম কাপড় নিয়ে আসবো তোমার জন্য তোমার বোনের জন্য।
ঠিক আছে আফা। আমি যাই তাহলে।
ঠিক ঠিক পরদিন মফিজ এসে দরজায় কড়া নাড়লো।
রুদমিলা হাসিমুখে দরজাটা খুলে দাঁড়ালো।
কি মফিজ সাহেব আম্মা কি বলছে?
হ আফা আম্মায় বলছে আপনি একজন ভালা মানুষ। আর ভালা মানুষদের মনে কষ্ট দিতে নেই। তারা যা দিতে চায় তাই নেয়া উচিত। না হয় তাদের মনে কষ্ট হবে।
রুদমিলা মফিজের কথায় বিস্মিত হলো খানিক। তারপর ভিতর থেকে মফিজ আর তার বোনের জন্য আনা গরম কাপড়গুলো হাতে তুলে দিলো।
আনন্দে মফিজের চোখ দুটো ভিজে আসলো।
রুদমিলা মফিজের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো পরম মমতায়।