শীতে জবুথবু লামা উপজেলার দুস্থ ও শ্রমজীবীরা

91

হিম হিম শীত জেঁকে বসেছে বান্দরবানের লামা উপজেলায়। সন্ধ্যার পর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ি পল্লীগুলো। আর সেটি অব্যাহত থাকে সকাল ১০টা পর্যন্ত। কোন কোন সময় দুপুর পর্যন্তও সূর্যের দেখা মেলে না। গত কয়েকদিন ধরে এ ঘন কুয়াশা ও শৈত্য প্রবাহে বিরাজ করছে। শীতের তীব্রতায় দুস্থ ও শ্রমজীবী মানুষের জবুথবু অবস্থা। আবার শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাবও। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। দরিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী এখানকার অধিকাংশ অধিবাসীরা প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে রয়েছেন অতিকষ্টে। শীত নিবারণের জন্য দুর্গম পাহাড়ে বসবাসরতরা খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন বয়োবৃদ্ধ ও শিশুরা। আবার কেউ কেউ গরম কাপড়ের দোকানে দিকে ভিড় জমাচ্ছেন। এদিকে উপজেলায় শীতার্তদের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৬৬৪টি কম্বল। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এ পর্যন্ত শীতার্তদের সহায়তায় কোন বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে আসেনি বলেও জানান স্থানীয়রা। দুস্থ ও শ্রমজীবী মানুষ জনের শীতের কষ্ট লাঘবে গরম কাপড় ও আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহল।
সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই পাহাড়ি জনপদে তীব্র শীত জেঁকে বসে। সেই সঙ্গে বাড়ে কুয়াশাও। সকাল ১০টা পর্যন্ত শীত ও কুয়াশা অব্যাহত থাকার কারণে নিম্ন আয়ের পাথর শ্রমিকরা কাজে বের হতে পারেন না। এছাড়া বাগান এলাকায় কর্মরত শ্রমিকরাও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ঠান্ডা বাতাসের কারণে ছোট ছোট শিশু ও বৃদ্ধরা নিউমোনিয়া ও কাশিসহ ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছে। শীত নিবারণে এ পর্যন্ত সরকারিভাবে পৌরসভা এলাকার জন্য ৩৩৩টি ও ৭টি ইউনিয়নের জন্য ২ হাজার ৩৩১টি কম্বল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট জানিয়েছে। অথচ উপজেলায় প্রায় এক লাখ মানুষ প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় দরিদ্র সীমার নিচে বাস করছে বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এদিকে কুয়াশার কারণে বিশেষ করে রাতের বেলা ও ভোর বেলায় লামা-চকরিয়া সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ঘন কুয়াশায় আচ্ছাদিত সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। জিপ চালক ওসমান গনি শিমুল জানান, সকাল ৮টা পর্যন্ত লামা-চকরিয়া সড়কের কয়েকটি এলাকা কুয়াশায় ঢেকে থাকে। অনেক সময় গাড়ির সামনে হেড লাইট জ্বালিয়েও ১৫-১৬ ফুটের বেশি দেখা যায় না।
এখানকার খেটে খাওয়া মানুষগুলো জানান, প্রচন্ড শীতের তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। প্রতিবছর এভাবেই শীতের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় তাদের। এতে জীবনযাত্রা হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত। পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে জ্বালিয়ে আগুনে শরীর ছেঁকে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন তারা।
লামায় খোলা আকাশের নিচে প্রায় অর্ধ-শতাধিক শীতবস্ত্রের দোকান আছে। এসব দোকানে খুচরা মূল্যে পুরনো শীতবস্ত্র কাপড় বিক্রিতে ধুম পড়েছে। বাজারের কাপড় ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরের চেয়ে পুরনো কাপড় বেচাবিক্রি ভালো।
এখনও গ্রহণ করিনি। বরাদ্দকৃত কম্বলের চেয়ে ইউনিয়নে দুস্থ ও গরিব মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি বলে জানান তিনি। একই অবস্থা অন্য ইউনিয়নগুলোতেও।
লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক মো. শফিউর রহমান মজুমদার বলেন, শীতজনিত কারণে বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হচ্ছে।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মজনুর রহমান বলেন, চলতি শীত মৌসুমে উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের দুস্থ ও গরীবদের মধ্যে বিতরণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভান্ডার থেকে ২ হাজার ৬৬৪টি কম্বল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এসব কম্বল ইউনিয়ন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তরও করা হয়েছে।