শীতের আমেজে পিঠার স্বাদ

2

পূর্বদেশ ডেস্ক

শীত মানেই পিঠাপুলির মৌসুম। কাক ডাকা ভোরে মাটির চুলায় মায়ের হাতে বানানো ভাপা পিঠা। এরপর পরিবারের সবাই মিলে খাওয়া। এমন সৌভাগ্য এখন আর খুব বেশি মানুষের হয় না। তাই তারা বেছে নিয়েছে নগরের অলি-গলিতে গড়ে ওঠা অস্থায়ী দোকানে বানানো পিঠা। শীতের আগমন বার্তা দিতেই পিঠা খাওয়ার ধুম পরেছে নগরের বিভিন্ন স্থানে। শহরের মোড়গুলোতে এখন পিঠার ঘ্রাণ। এসব পিঠায় মায়ের আদর মাখা না থাকলেও আছে শহুরে পিঠা বিক্রেতাদের যতœ। রাস্তায় অলিগলি ও ফুটপাতে পছন্দের শীতের পিঠা খেতে পেরে খুশি নগরের মানুষ। খবর বাংলানিউজের
ভাপা পিঠা দুই উপায়ে তৈরি ও তিন পদ্ধতিতে খাওয়া হয়। এরমধ্যে চালের গুঁড়োর সাথে খেজুরের গুড় মিশিয়ে ও গুড় ছাড়া আলাদাভাবে তৈরি করা হয়। তৈরিকৃত ভাপা পিঠা ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস, মাংসের ঝোল ও খেজুরের গুড় দিয়ে খাওয়া হয়। তবে আগেকার দিনের মতো সুস্বাদু খেজুরের রস খুঁজে পাওয়া ভার। শুধু ঘরে ঘরে নয় কর্মজীবী মানুষেরা যেন শীতের পিঠার আমেজ থেকে বাদ না পড়ে সেজন্য ফুটপাত, রাস্তার মোড়, হাট-বাজারগুলোতে ভ্রাম্যমাণ দোকানে পিঠা খাওয়া ও বিক্রির ধুম পড়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত চলে চালের গুঁড়ো দিয়ে সুস্বাদু এই পিঠা বিক্রি ও খাওয়ার পালা।
বিক্রেতারা জানান, শীত মৌসুমে তারা ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়ে ভাপা পিঠা বিক্রি করেন। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকেই রাত পর্যন্ত চলে পিঠা বিক্রি। একেকটি পিঠা বিক্রি করা হয় ১০ টাকায়। যে পিঠাগুলো আগে আমরা ৫ টাকা দরে বিক্রি করতাম এখন সেগুলো ১০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। চাল, গুড়, গ্যাসের দাম বেড়েছে। তাই পিঠার দামও বাড়িয়েছি।
নজরুল ইসলাম একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। চাকরি শেষে বাসায় ফিরতে নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকায় ভাপা পিঠা বিক্রি করতে দেখে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন। তিনি বলেন, ঘরের নারীরা এখন ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে পড়ে থাকে। অনেকে পিঠাপুলি বানাতে জানে না। তাই শীতের পিঠার স্বাদ নিতে এই দোকানে আসি। খেতে ভালোই লাগে।
নগরীর অভিজাত সুপার শপগুলোতেও বসেছে পিঠাপুলির আসর। বিক্রি হচ্ছে শীতের হরেক রকম পিঠা। যদিও দাম কিছুটা বেশি। সুপার শপে আসা ক্রেতারা কিনছেনও এসব পিঠা। আউটার স্টেডিয়ামে চলমান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায়ও বসেছে পিঠাপুলির স্টল।
পাহাড়ে ঘেরা ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার, জিরো পয়েন্ট, লেডিস ঝুপড়ি, দুই নম্বর গেটে শীতকালীন পিঠার ভ্রাম্যমাণ দোকান বসেছে। এছাড়াও ভিন্ন ভিন্ন সংগঠন আয়োজন করে শীতকালীন পিঠা উৎসবের। উৎসবে তারা নানান রকমের পিঠার পসরা সাজিয়ে তৈরি করেন এক অন্যরকম পরিবেশ। এরমধ্যে রয়েছে- পাটি সাপটা, পুলি, পাতা পিঠা, ঝাল পিঠা, নারকেল পিঠা, ভাপা পিঠা, নকশা পিঠা, ঝিনুক, জামদানি, সূর্যমুখী, গোলাপি, দুধপুলি, রসপুলি, দুধরাজ, সন্দেশ, আন্দশা, মালপোয়া, পাজোয়াসহ ভিন্ন স্বাদের বৈচিত্র্যময় পিঠা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পিঠা উৎসবের আয়োজকরা বলছেন, কালের বিবর্তনে এ ঐতিহ্য ম্লান হয়ে আসছে। অগ্রহায়ণের নতুন চালের পিঠার স্বাদ আমরা উপভোগ করি। এ ধরনের নান্দনিক আয়োজন পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করে। গ্রাম বাংলার বৈচিত্র্যময় পিঠা সম্পর্কে শহরের মানুষকে জানানোর জন্য এ রকম উৎসবের আয়োজন।