শীঘ্রই আকাশে উড়বে বিমানের ‘ময়ূরপঙ্খী’

62

ছিনতাইয়ের কবলে পড়া বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট ‘ময়ূরপঙ্খী’ আগামী দশ দিনের মধ্যে আবারো আকাশে উড়াল দেবে। এসময়ের মধ্যে বিমানের ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো মেরামত করা হবে। ইতোমধ্যে এটাকে ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরে নেয়া হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। ছিনতাই চেষ্টাকারী পলাশ ২২ মাসে ১০ বার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। এনিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিমানের বিজি-১৪৭ ফ্লাইটটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে পাইলট তা শাহ আমানত বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করান। ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উড্ডয়নের পরপরই ছিনতাই চেষ্টার ঘটনা ঘটে। পরে রানওয়েতে অবস্থান করা ফ্লাইটটি ঘিরে রাখেন পুলিশ, র‌্যাব ও সেনা কমান্ডোর সদস্যরা। পরে কমান্ডো অভিযানে নিহত হন ছিনতাই চেষ্টাকারী পলাশ আহমেদ।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বলছে, ছিনতাইয়ের কবলে পড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ‘ময়ূরপঙ্খী’তে কোনো বিস্ফোরক ও আসল অস্ত্র ছিল না । যেটি ছিল সেটি খেলনা পিস্তল।
সূত্র জানায়, ফ্লাইটটি তেমন একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। যে সামান্য ক্ষতি হয়েছে তা মেরামত করা হচ্ছে। সব ঠিকঠাক করার পর আগামী ১০ দিনের মধ্যে উড়াল উপযোগী করে তোলা হবে। পুরোদমে অপারেশন শুরু করবে।
বিমান সচিব মহিবুল হক সাংবাদিকদের বলেন, উড়োজাহাজটির বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি। যা হয়েছে তা মেরামত করে ৮/১০ দিনের মধ্যে অপারেশনে যেতে পারবে।
এর আগে গত বুধবার বিমানটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে এটি নিয়ে যাওয়া হয়।
শাহ আমানত বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার এবিএম সরওয়ার-ই-জামান পূর্বদেশকে জানান, ঘটনার চারদিন পর বুধবার রাতে উড়োজাহাজটি ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
ফ্লাইটটি ছিনতাইয়ের চেষ্টার ঘটনায় নিরাপত্তা ও সার্বিক দিক নিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, উড়োজাহাজটিতে কোনো অস্ত্র ছিল না, বিস্ফোরকও ছিল না। এ দু’টি বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তিনি বলেন, আমরা কমিটি গঠন করেছি, তারা কাজ করছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এর উত্তর সঠিকভাবে দেয়া যাবে। একটি বিষয় নিশ্চিত যে, কোনো এক্সপ্লোসিভ ও জেনুইন কোনো অস্ত্র যায়নি। যা পাওয়া গেছে তা খেলনা পিস্তল। আর এক্সপ্লোসিভের যে কথা বলা হয়েছিল সেগুলো প্লাস্টিকের পাইপ।’
জানা যায়, এ ঘটনায় ২৫ ফেব্রুয়ারি পতেঙ্গা থানায় পলাশ আহমেদ ও অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন বিমানবন্দরের প্রযুক্তি সহকারী দেবব্রত সরকার। এ মামলা তদন্ত করছেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটটের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া। তিনি ইতিমধ্যে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে রাজেশ বড়ুয়া বলেন, আমি মামলাটি তদন্ত করছি। তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনীয় আলামত জব্দ করা হয়েছে। বিমানটিও পরিদর্শন করেছি।
এদিকে বিমান ছিনতাই চেষ্টাকারী পলাশ ২২ মাসে ১০ বার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। এ সময়ের মধ্যেই তিনি দুবাই ও মালয়েশিয়াসহ ভারত, নেপাল ও ভুটান ভ্রমণ করেছিলেন। তবে সেসব দেশে স্বল্প সময় অবস্থান করতেন। পুলিশ এ বিষয় এবং আয়ের উৎস নিয়েও খোঁজ খবর নেবে। তার বিলাসবহুল জীবন যাপনের উৎস কি তাও খতিয়ে দেখা হবে।
জানা গেছে, পলাশ তার নতুন পাসপোর্ট দিয়ে গত ২২ মাসে পাঁচবার ভারত, দুবার নেপাল এবং একবার করে ভুটান, মালোয়শিয়া ও দুবাই ভ্রমণ করেন। এই পাসপোর্ট ছাড়াও তার আগের একটি পাসপোর্ট রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগের পাসপোর্ট দিয়েও তিনি একাধিক দেশ ভ্রমণ করে থাকতে পারেন।
সিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম বলেন, ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর। এটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। পলাশের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। নেপথ্যে আর কেউ আছে কিনা তাও দেখা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পলাশের বাবা মা এবং সাবেক স্ত্রী সিমলার সাথেও কথা বলবেন। তাদের সঙ্গে কোনো সমস্যা ছিল কিনা বা কোনোধরনের তথ্য পাওয়া যায় কিনা তাও দেখবেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
পুলিশ পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া জানান, তদন্তের স্বার্থে পলাশের বাবা ও তার সাবেক স্ত্রী সিমলাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।