শিশু ডায়বেটিক রোগীদের যত্ন

4

হাসিনা আকতার লিপি

ডায়বেটিস জন্মের পর থেকে যেকোন সময় হতে পারে। বর্তমানে দেশে ২০ হাজারেরও বেশী শিশু (১৮ বৎসরের নিচে তারা) ডায়বেটিস রোগে আক্রান্ত। আমাদের ধারনা ডায়বেটিস মানেই বড়দের রোগ। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে শিশুদের ডায়বেটিসের ব্যাপারে সামজিক সচেতনতার অভাব রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করতে করতেই অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়, ততক্ষনে শিশুদের অনেক ক্ষতি হয়ে যায় যা পূরন হবার না। তাই অবশ্যই অভিভাকদেরকে জানতে হবে শিশুদের ডায়বেটিস হবার কারণ এবং সেই সাথে সচেতন হয়ে ব্যবস্থাও নিতে হবে। সংখ্যায় কম হলেও আগের তুলনায় শিশুদের ডায়বেটিস বর্তমানে অনেকাংশে বেড়ে গেছে। অনেকেই হয়তো জানেন না যে, শিশুরাও দীর্ঘমেয়াদী এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

জেনে নেই শিশুদের কি ধরনের ডায়বেটিস হয় এবং লক্ষন কি: ১. যখন শিশুর শরীরে পর্যাপ্ত পরিমান ইনসুলিন তৈরী হয় না, তখনই সে ডায়বেটিসে আক্রান্ত হয়। এক্ষেত্রে শিশুর প্যাংক্রিয়াসের কিছু সেল ঠিকমতো কাজ করে না। একারণে শিশুর শরীরে ইনসুলিন তৈরী না হওয়ায় খাদ্য শক্তিতে রূপান্তরিত হতে না পারায় শিশু দূর্বলতা অনুভব করে। সেই সঙ্গে শরীরে শর্করার মাত্রাও বেড়ে যায়। শিশুদের ক্ষেত্রে টাইপ-১ ডায়বেটিস হয়।
২. ইনসুলিন রেজিসটেন্সের কারণে যখন শরীরে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়, তখন শিশু টাইপ-২ ডায়বেটিসে আক্রান্ত হয়। এক্ষেত্রে যদি প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে কিডনি ও হার্টের রোগেও আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়াও তলপেটে ব্যাথা অতিরিক্ত প্রসাব, মেজাজ খিটখিটে, চোখে ঝাপসা, ক্ষত শুকাতে দেরী, ওজন কমে যাওয়া।
কারন: ১. শিশুর ডায়বেটিসে আক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তার মধ্যে জেনেটিক বা বংশগত কারণ অন্যতম।
২। ভাইরাস ইনফেকশনের কারণেও হতে পারে। যেমন- প্যাংক্রিয়াসের সেল নষ্ট হয়ে গেলে, অতিরিক্ত ওজন পরিবেশগত কারণ। এছাড়াও একাধিক গবেষনায় দেখা গেছে যে সব শিশুকে জন্মের পর থেকে গরুর দুধ খাওয়ানো হয়, তাদের ডায়বেটিস হওয়ার ঝুঁকিও বেশী।
অভিভাবকের করণীয় : যেকোন লক্ষন দেখা দেয়ার সাথে সাথে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে, তিনিই পরীক্ষা নীরিক্ষার মাধ্যমে বুঝবে শিশুর কি কারণে ডায়বেটিস হয়েছে। সেই সাথে মনে রাখতে হবে এখন পর্যন্ত ইনসুলিনই শিশুদের উপযোগী একমাত্র নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ চিকিৎসা।
চিকিৎসকের সাথে আরও দু’ জন আপনার শিশুর চিকিৎসায় বা সুস্থ রাখায় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করবে। তারা হলেন- পুষ্টিবিদ যিনি শিশুর উপযোগী খাদ্য তালিকা করে দিবেন। হেলথ এডুকেটর আপনার শিশু ইনসুলিন কি ভাবে নিজেই প্রয়োগ করবে, সংরক্ষন করবে এবং প্রয়োজনে বাড়াবে বা কমাবে এই বিষয়গুলো তিনি শিখিয়ে দিবেন। যেহেতু শিশু ইনসুলিন প্রয়োগ করে, যদি খাবার খেতে ভুলে যায় অভিভাবককে সচেতন হয়ে দেখতে হবে এবং ”হাইপো-গ্লাইসেমিয়া যাতে না হয়- হলেও ঐ মুহুর্তে কি করতে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত তিনিই শিখিয়ে দিবেন। এছাড়াও সাইকোলোজিস্ট এরও ভূমিকা- অনেক স্কুলে যাওয়া ছেলে মেয়ের প্রয়োজন হয়। যেহেতু আমি পুষ্টিবিদ আমি শিশু খাবারের ব্যাপারে বলছি-
প্রথমত: জন্মের পর ৬ মাস পর্যন্ত দয়া করে মায়ের বুকের দুধ দিন, ৬মাস পর কি খাবার দিবেন একজন পুষ্টি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দ্বিতীয়ত: ওজনের ব্যাপারটা বিশেষ ভাবে খেয়ালে রাখুন। প্রতি দুই মাস পর পর ওজন-উচ্চতা মাপুন। দেখুন ওজন বয়স অনুযায়ী কি অতিরিক্ত বেড়েছে নাকি কমেছে, দুটোই ক্ষতিকর।
তৃতীয়ত: স্কুলের টিফিন হতে হবে সুষম।
চতুর্থত: সারাদিনে অন্ততঃ ২০-৩০ মিঃ ব্যায়াম, খেলার সুযোগ করে দিতে হবে। ব্যাস ভালো থাকবে আমাদের সন্তান। একটু সচেতনতাই পারে ভবিষ্যৎ নাগরিককে সুরক্ষা দিতে।

ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিষ্ট ও কনসালটেন্ট, ল্যাব এইড হসপিটাল লিমিটেড, চট্টগ্রাম।