শিগ্গিরই কাটছে না পেঁয়াজের সংকট

54

পূর্বে আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজের মজুদ খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে দিন দিন কমে আসছে। এরই মধ্যে কিছু পেঁয়াজ মিয়ানমার থেকে আমদানি হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোতে পেঁয়াজের মজুদ ফুরিয়ে আসছে। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে নতুন পেঁয়াজ না আসলে দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা।
পাইকারিতে বর্তমানে ভারত ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতকাল শনিবার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ বাজার ঘুরে এ তথ্য জানা যায়।
জানা গেছে বর্তমানে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ১৫০ থেকে ২০০ টনের মত পেঁয়াজ মজুদ আছে। তা দিয়ে আরও ১০ থেকে ১৫ দিন চলবে। এরপরে কি হবে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি নিয়ে কিছুদিন পরপর উত্তাপ দেখা দেয়। যেমন- ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় তাৎক্ষণিক দাম বেড়ে যায় পণ্যটির। আবার কয়েকদিন পর ভারত ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ দেশে ঢুকায় এবং অন্য দেশ থেকে আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় পাইকারিতে দাম প্রতিদিনই কমতে থাকে। বর্তমানেও দাম কমতির দিকে রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি সোলায়মান বাদশা বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে তা মানলাম, কিন্তু তারা কতদিন বন্ধ রাখবে তা আমাদের কাছে অজানা। অথচ গতবছর তারা ঘোষণা দিয়েছিল তিনমাস বন্ধ রাখবেন। কিন্তু এ বছর তাও জানায়নি। যার কারণে ব্যবসায়ীরাও এখন পেঁয়াজের জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। অন্যদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে ২০ থেকে ২৫ দিন লেগে যায়। অপরদিকে ভারতের পেঁয়াজ বাজারে আসতে ২-৩ দিন সময় লাগে মাত্র। অন্যদেশ থেকে আমদানি শুরুর পর ভারত পেঁয়াজ দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে যাবে। আবার নেদারল্যান্ডস, মিশর, তুরস্ক, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের মধ্যে অনেক পেঁয়াজ পচে যায়। এ দায়ভার কেউ নিবে না।
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারে লকডাউনের কারণে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। ফলে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হলে সিঙ্গাপুর বন্দর হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আনতে হবে। এতে দীর্ঘ সময় লাগার কারণে পেঁয়াজের বেশিরভাগ নষ্ট হয়ে যাবে।
সোলায়মান বাদশা বলেন, বর্তমানে যা পেঁয়াজ রয়েছে তা দিয়ে আরও ১০-১৫ দিন চলে যাবে। যদি এরই মধ্যে আমদানি করা পেঁয়াজ না আসে তবে বাজারে সংকট সৃষ্টি হয়ে দাম ১০০ টাকার বেশি হতে পারে।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিয়ানমার, চীন, মিশর, পাকিস্তান, তুরস্ক, নেদারল্যান্ডস ও নিউজিল্যান্ড থেকে ২১৭টি আইপির বিপরীতে ৭৯ হাজার ৩৯০ টন পেঁয়াজ আনার অনুমতি পেয়েছেন আমদানিকারকরা।
চাক্তাইয়ের আফরা ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারি আলাউদ্দিন আলো বলেন, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে আপাতত পেঁয়াজের সংকট নেই। আমরা নতুন পেঁয়াজের আশায় আছি। বর্তমানে পেঁয়াজের বেচাকেনা অনেক কম। কোভিড পরিস্থিতিতে টেকনাফ স্থলবন্দরও বন্ধ আছে।
তবে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আরও কয়েকটি চালান আসার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে ২০ টনের চালান এসেছে। মিয়ানমার ছাড়াও মিসর, তুরস্কসহ অন্যান্য দেশের পেঁয়াজ আসা শুরু হলে দাম নাগালের মধ্যে চলে আসবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
গত বছর সেপ্টেম্বরেও ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছিল। তখনও পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। সেসময় মিয়ানমার, চীন, মিসর, পাকিস্তান ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ এনে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হলেও একপর্যায়ে পেঁয়াজের কেজি উঠে ৩০০ টাকায়।
হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস পূর্বদেশকে বলেন, বর্তমানে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের সংকট নেই।
কলেজ শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হওয়াতে পেঁয়াজের কদর একটু বেশি। সরকারের উচিত ভারতের দিকে চেয়ে না থেকে বিকল্প পেঁয়াজের ব্যবস্থা করা অথবা দেশে পেঁয়াজের উৎপাদনের দিকে নজর দেয়া।