শিক্ষিত তরুণরা সরকারি চাকরি স্বল্পশিক্ষিতরা চায় বিদেশ যেতে

42

বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণদের বেশিরভাগই (৫৭ শতাংশ নারী এবং ৪২ শতাংশ পুরুষ) সরকারি চাকরি করতে চায়। ধনী ও শিক্ষিতদের অনেকেই চান মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং তাদের নিজস্ব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা লাভ করতে। অপরদিকে শিক্ষাবঞ্চিত বা স্বল্পশিক্ষিতরা জীবিকার তাগিদে বিদেশে পাড়ি জমাতে চান। এদের আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হচ্ছে শিশুদের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা এবং সহায়-সম্পদের মালিক হওয়া।
সম্প্রতি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথভাবে পরিচালিত জাতীয় প্রতিনিধিত্বমূলক একটি যুব-জরিপ থেকে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বুধবার গুলশানে একটি হোটেলে এই জরিপের তথ্য জানানো হয়।-খবর বাংলা ট্রিবিউনের
ব্র্যাক যুব জরিপ ২০১৮ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষিত তরুণের মধ্যে ৫৭ শতাংশ নারী এবং ৪২ শতাংশ পুরুষ সরকারি চাকরি করতে চান। এইচএসসি অথবা এর নিচে শিক্ষাগত যোগ্যতার পুরুষদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ উপার্জনমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত। যাদের লেখাপড়া যত বেশি, তারা উপার্জনমূলক কাজের সঙ্গে বেশি দেরিতে যুক্ত হন। নারীদের ক্ষেত্রে পঞ্চম শ্রেণি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত শিক্ষিতদের মাত্র ৫ শতাংশ উপার্জনমূলক কাজে যুক্ত। যারা লেখাপড়া করে না, উপার্জনমূলক কাজে যুক্ত নেই, এমনকি কোনও প্রশিক্ষণও (এনইইটি) গ্রহণ করছে না, এদের প্রায় ৯০ ভাগই নারী।
প্রায় ২০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বিদেশে কাজ করতে আগ্রহী হলেও তাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ এ বিষয়ে সক্রিয়ভাবে পরিকল্পনা করছে। যুবসমাজের মাত্র এক-পঞ্চমাংশ বিশ্বাস করেন যে, তাদের শিক্ষা চাকরি পেতে সহায়তা করবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পছন্দের স্বাধীনতা অনুযায়ী তরুণরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বন্ধু ও পেশা নির্বাচন, স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও এবং অর্থ ব্যয়ে অধিক স্বাধীনতা উপভোগ করছেন। অন্যদিকে তরুণীরা বলছেন, ‘এই সব ক্ষেত্রে স্বাধীনতার অভাব রয়েছে।’ মাত্র ৪০ শতাংশ নারী স্বাধীনভাবে চলাচলের সুযোগ পায়, যা পুরুষের অর্ধেক। তবে সবাই মূলত দুটি বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন। এর মধ্যে রয়েছে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এবং মাদক সম্পর্কিত সমস্যা।
এছাড়া তরুণ সমাজের মধ্যে রাজনৈতিক আকাক্সক্ষার ক্ষেত্রে একটি মেরুকরণ লক্ষ্য করা যায়। বেশিরভাগ তরুণ-তরুণী রাজনীতির বিষয়ে চরম উচ্চাশা পোষণ করেছেন, তারা বর্তমান এবং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো বা খুব ভালো বলে মনে করেন। তবে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আবার হতাশাবাদী। খুব অল্পসংখ্যক এই দুই পরস্পরবিরোধী মতের বাইরে মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছেন। এতে প্রতীয়মান হয় যে, তরুণ সমাজ বিদ্যমান সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়ে গঠনমূলক সমালোচনা ও যথাযথ বিশ্লেষণে খুব পারদর্শী নয়।
জরিপের কারণ হিসেবে ব্র্যাক জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ হচ্ছে যুব। দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর (১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সী) সংখ্যা কর্মসক্ষমতাহীন ব্যক্তির (১৫ বছরের নিচে এবং ৬০ বছরের উপরে) সংখ্যার চেয়ে বেশি। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সমৃদ্ধ করতে এই যুবরা মূল চালিকাশক্তি হতে পারে। এই পরিপ্রেক্ষিতে যুবদের দৃষ্টিভঙ্গি জানতেই এই যুব-জরিপ পরিচালনা করা হয়।
জরিপের পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়, পুরো দেশকে পাঁচটি অঞ্চলে ভাগ করে প্রতিটি অঞ্চল থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৩০টি উপজেলা/থানা নির্বাচন করা হয়। সেখান থেকে দুটি ইউনিয়ন/ওয়ার্ড নিয়ে আবার একটি করে গ্রাম/মহল্লা নির্বাচন করা হয়। তারপর আবার দৈবচয়নের ভিত্তিতে নির্বাচন করা হয় ১৪ জনকে (সাতজন পুরুষ, সাতজন নারী)। এভাবে ১৫-৩৫ বছর বয়সী মোট ৪ হাজার ২০০ জনের অভিমত সংগ্রহ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, সরকার তরুণদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা দায়িত্ব নিয়েই প্রতিটি জেলায় ব্যায়ামাগার তৈরির কাজ শুরু করেছি। তরুণদের সুস্থ বিনোদনের জন্য ৪৯২টি যুব বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
এ সময় তিনি নারী শিক্ষায় সরকারের সাফল্য তুলে ধরে বলেন, নারী শিক্ষা এক সময় ছিল উচ্চবিত্ত এবং শহর কেন্দ্রিক কিছু পরিবারের মধ্যে সীমিত। এখন কিন্তু আমরা সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছি। ফলাফলের দিক দিয়েও নারীরা ছেলেদের থেকে এগিয়ে।
জরিপ অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ। তিনি বলেন, তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে ব্র্যাক অনেক দিন ধরেই কাজ করছে। আমরা স্কুলভিত্তিক কর্মসূচি চালু করতে যাচ্ছি, যাতে শিক্ষা পরবর্তী দক্ষতা উন্নয়নে সহায়ক হবে।
জরিপ উপস্থাপন শেষে বাংলাদেশে যুবকদের অভিবাসন পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান। এরপর এক প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. জাফর উদ্দিন, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের আর্টস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট এডিটর এলিটা করিম, লিপিং বাউন্ডারিজের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা সাগুফা হোসেন। ব্র্যাকের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী আসিফ সালেহ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।