শিক্ষা সফরে দুর্ঘটনা এড়াতে সচেতনতা জরুরি

39

শীত ঋতু বিদায়ের পথে। এমন অবস্থায় দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরে ব্যস্ত। শিক্ষা সফর একটি সহশিক্ষা কার্যক্রম, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ক্যালেন্ডারে শিক্ষা সফর সংযুক্ত থাকে। শিক্ষার্থীদের শুধু সিলেবাস নির্ভর শিক্ষাতে ব্যস্ত রাখলে হয় না, তার সাথে ক্রীড়া, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং শিক্ষা সফর ইত্যাদিরও প্রয়োজন রয়েছে। একজন শিক্ষার্থীর মননের বিকাশে ক্রীড়া সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা বিশেষ ভূমিকা রাখে। শিক্ষা সফর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বাধাধরা নিয়মের মধ্যে সাময়িক বিনোদনের আমেজ এনে দেয়। এতে একজন শিক্ষার্থীর বহু একঘেয়েমি কেটে যায়। মুক্ত পরিবেশে মুক্ত মনে একজন শিক্ষার্থী সফরকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আচার ব্যবহার ইত্যাদির সাথে পরিচিত হবার পাশাপাশি নিজের বহু চারিত্রিক দুর্বলতা কাটানোর শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা সফর নিছক কোন আনন্দ ভ্রমণ নয়। শিক্ষা সফর নামক প্রাতিষ্ঠানিক আনন্দ ভ্রমণে পরিকল্পিত কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মুক্ত পরিবেশে বিবিধ নিয়ম কানুন সম্পর্কে অবগত হওয়ার সুযোগ তৈরি করা হয়। এতে একজন শিক্ষার্থী সামাজিকতা বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষা লাভ করতে পারে। শিক্ষা সফর মূলত শিক্ষার্থীর মনন গঠনের সহায়ক কর্মসূচি। বর্তমানে দেশের প্রায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে শিক্ষা সফর কর্মসূচি পালন করছে। শিক্ষা সফর শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের জন্য খুবই আনন্দের। সিলেবাসের বাধাধরা নিয়মের মধ্যে আবর্তিত হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা এক প্রকার যান্ত্রিকতায় হাঁফিয়ে ওঠে। তাই বহুদূরে একদিন-দু’দিনের শিক্ষা সফর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মুক্ত পরিবেশে বিচরণের সুযোগ করে দেয়। শিক্ষক শিক্ষার্থীর মধ্যে গুরু শিষ্য সম্পর্কের বাইরে সহজ সরল বন্ধুসুলভ একটি সম্পর্ক তৈরি করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শিক্ষা সফরে আনন্দঘন পরিবেশে অনেক সময় বেদনার পরিবেশে সৃষ্টি হতে দেখা যায়। আবেগের প্রাবল্যে অনেক সময় বিভিন্ন রকম দুর্ঘটনা ঘটে। কখনো অসতর্কতাবশত পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া, সমুদ্রের তরঙ্গে ভেসে যাওয়া, সৈকতে সলিল সমাধি ইত্যাদি দুর্ঘটনায় কবলিত হতে দেখা যায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। বিশেষ করে যানবাহনে করে যাওয়া আসার পথে সড়ক কিংবা জলপথে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে বহু শিক্ষক শিক্ষার্থীর মৃত্যুও ঘটে থাকে।
দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায় লোহাগাড়ার চুনতি এলাকায় কক্সবাজার শিক্ষা সফরে যাওয়ার পথে নেত্রকোনা সরকারি কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের একটি বাস ও লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ ২৬ জন আহত হয়েছে। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দেশের সড়কগুলো বড় আকারের মরণ ফাঁদ। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু দেশে নৈমিত্তিক একটি বিষয়। দেশের সড়ক মহাসড়কে নারী-শিশুসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ নাগরীকের অকাল মৃত্যু ঘটছে। সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো। যেকোন যানবাহনের চালকদের দায়বদ্ধতার সাথে যানবাহন চালাতে হয়। কিন্তু সবধরনের গাড়ি চালকরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে দ্রæত গন্তব্যে পৌঁছতে চায়। বহু মানুষের জীবন একজন যানবাহন চালকের উপর নির্ভর করে। চালকরা তা ভুলে যায়। অধিকাংশ গাড়ি চালক দায়বদ্ধতার সাথে গাড়ি চালায় না। যার কারণে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। বিশেষ করে শিক্ষা সফরের গাড়িতে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা গান-বাজনা, হাসি-ঠাট্টায় মেতে থাকে। অনেক সময় গাড়ির চালক ও তা উপভোগ করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। যা কারো কাম্য নয়। শিক্ষাসফরের আনন্দের মধ্যেও একটা সংহত রূপ থাকা জরুরি। শিক্ষা সফরে যাওয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আবেগ যেন বাঁধভাঙা জোয়ারে পরিণত না হয় সে বিষয়ে দায়িত্বশীলদের সচেতন হতে হয়। গাড়ি ছাড়ার পূর্বে গাড়ি চালককে প্রয়োজনীয় তাগাদা প্রদান করতে হয়। শিক্ষা সফরকারী আর চালক যেন এক কাতারে দাঁড়িয়ে না যায় এ বিষয়ে শিক্ষা সফরের দায়িত্ব পালনকারী জনদের মনে রাখতে হবে। চালক দায়বদ্ধতার সাথে গাড়ি চালালে সামনের গাড়ির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষের পরিবেশে সৃষ্টি হয়না। অসচেতনতা এবং দায়বদ্ধতার অভাব এরকম দুর্ঘটনার জন্ম দেয়। শিক্ষা সফরে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই সচেতন হলে শিক্ষা সফরে সড়ক দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। শিক্ষা সফরের গাড়ি যারা চালায় তাদের বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় দায়িত্ব প্রাপ্তদের। সচেতন দায়িত্বশীল শিক্ষককে গাড়ি চালককে নিয়ন্ত্রণের তাগাদা দিতে সবসময় সচেষ্ট থাকতে হয়। চালকের পাশে একজন শিক্ষককে বসে তার গতিবিধি আচার আচরণ সবই নজরদারী করতে হয়। শিক্ষার্থীদের দূর যাত্রায় আবশ্যই প্রত্যেক গাড়িতে একজন শিক্ষককে চালককে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা প্রয়োজন। অতীতে বান্দরবান, কক্সবাজার এবং আরো বহু স্থানে শিক্ষা সফরের বহু গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। সকল দুর্ঘটনায় চালকের অনভিজ্ঞতা এবং শিক্ষা সফরের দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষকের অবহেলা তদন্তে উঠে এসেছে। তাছাড়া দ্রæত গন্তব্যে পৌঁছার তাগাদার কারণে অনেক সময় গাড়ি চালক দ্রæত গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। যে কোন পরিবেশে সতর্কতা ও সচেতন দৃষ্টি অপরিহার্য। দেশের শিক্ষা সফরের কোন যানবাহন দুর্ঘটনার মুখোমুখি হোক এটা আমাদের কাম্য নয়। সংশ্লিষ্টরা সম্ভাব্য বিপদের কথা মাথায় রেখে সচেতন হলে যেকোন দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।